অন্যের জন্য প্রেমপত্র লেখার ঝামেলা আছে প্রচুর। তা যদি বন্ধুর জন্য হয় তাহলে সেই ঝামেলা বেড়ে যায় বহুগুণে। দুয়েকটা ঝামেলার গল্প বলা যেতে পারে।
একবার এক বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডকে উদ্দেশ করে খুব রোমান্টিক প্রেমপত্র লিখে দিলাম, চিঠির বেশিরভাগ জুড়ে মেয়ের গভীর কালো চোখের প্রশংসা, সাথে সেই চোখ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দ কি বলছেন তার বর্ননা। জীবনানন্দ যে এই চোখ দেখেই বনলতা সেন লিখেছেন, প্রেমপত্রে তা বিতং করে লেখা।
দুইদিন পর বন্ধু উশকো খুশকো বেশে আমার কাছে এসে বলে, 'এই *লের লেখার জন্য তোমারে দায়িত্ব দিছিলাম? তরে না করছিলাম না ওর চোখ নিয়া কিছু লিখতে? শাহানার চোখ একটু ট্যারা, চোখ নিয়া দুনিয়ার কথা লিখছোস! চিঠি পইড়া মনে করছে আমি ওর ট্যারা চোখ নিয়া ফাইজলামি করতাছি।'
তবে ঝামেলা থাকলেও অ্যাডভান্টেজও আছে প্রচুর, তা বলতেই হয়। সবচেয়ে বড় অ্যাডভান্টেজ, বন্ধুর প্রেমের খুটিনাটি 'একান্তই ব্যক্তিগত' সব কথাবার্তা অনায়াসেই জানা যায়।
একবার একজন এসে বললো, 'পলাশ, এক ঝামেলা হইছে, অদিতি তো রাগ করছে। কিছু একটা লিখে দে যাতে রাগ ভাঙে।'
'রাগ করলো কেন?'
'এইটা না জানলে হয় না?'
'ঐ বেটা, রাগ করছে কেনো এইটা না জানলে কি লিখমু আমি?'
'তাও তো ঠিক, ঐ মানে একটু হাত ধরছিলাম আর কি, এতেই ক্ষেইপ্যা গেছে, আমারে লুইচ্চা, বদমাশ বইল্যা গালি দিছে। ইয়ে মানে, তুই ছাড়া কেউ যাতে না জানে। আজকে বিকেলের মধ্যে চিঠি লিখে শেষ করতে পারবি না?'
ছোটবেলায় বিচিত্র সব বন্ধু বান্ধব ছিলো, এর মধ্যে ঘনিষ্ঠ একজন ছিলো সহজ সরল।
ক্লাস নাইন অথবা টেনে পড়ি, একদিন আমাকে এসে বলে, 'একটা জিনিস শোনার পর থেকে মনটা ভালো।'
'কী?'
'স্যাররা যে জায়গায় মাইর দিবো, ঐ জায়গা নাকি বিনা হিসেবে বেহেশতে যাবে। এতোদিন মাইর খাইলে মনটা খারাপ হইতো, এখন মাইর খাইলেও খারাপ লাগে না।'
'এইসব কথা কই পাস তুই?'
'সত্যি কথা, কসম। চিন্তা করে দেখলাম, সবার আগে বিনা হিসেবে জান্নাতে যাইবো আমার পাছা। তারপর পায়ের গিরা, হাতের তালু, কানের লতি, দুই কানসা আর গাল। হাসিস না, আমি সিরিয়াস, তবে এমন কিছু জায়গা বাকি আছে যেখানে মাইর পড়ে নাই, স্যাররে হাত পা ধরলেও ঐ জায়গায় মারবো না, একবার যদি ঐ সব জায়গায় মাইর খাইতে পারতাম, পরকালের জন্য নিশ্চিত। তারপরও কিছু কিছু পার্ট বাকি থাকবো, দুইটা চোখ মনে কর, কে মারবো চোখের ভিতরে? চোখ দিয়া পাপ তো কম করি নাই, রূপকথা হলের কোনো ছবি তো তর আর আমার মিস নাই।'
বন্ধুর আরও যেসব অঙ্গ অনেক পাপ করেছে বলে তার ধারণা এবং সেখানে মাইর খাওয়া বেশ কঠিন, সেসব আলোচনায় না গিয়ে প্রেমপত্র বিষয়ক ঝামেলায় ফিরে যাই। প্রেমিকার জন্মদিন উপলক্ষে আগের ওই বন্ধু আরেকদিন চিঠি লেখানোর জন্য আমার কাছে আসলো।
'নে, শুরু কর।'
'এভাবে শুরু করি, প্রিয়তমেষু...'
'আরে বলদ, ওর নামতো "প্রিয় তামশা" না, চম্পা।'
'প্রিয়তমেষু না না, একটা সম্বোধন।'
'কি ধন?'
'আরে সম্বোধন! আচ্ছা বাদ দে। আর কী লিখতে হবে?'
'লেখ, পরসমাচার এই যে...'
'তুই কি তর আব্বার কাছে টাকা চাইয়া চিঠি লিখতাছোস?'
'তাইলে?'
'রোমাণ্টিক কিছু লেখ, বানাইয়া টানাইয়া লিখ– বৃষ্টি অথবা পূর্ণিমার কথা, এগুলো মেয়েরা খায় ভালো।'
'পূর্ণিমার কথা মনে করাইয়া দিলি রে... লিটইন্যার খালাতো বোন পূর্ণিমারে দেখছোছ তুই? কী যে সুন্দর মামা...'
চিঠি লেখার কাগজ-কলম বন্ধুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, 'চিঠি চম্পারে লিখবি না পূর্ণিমারে লিখবি আগে ঠিক কর, তারপর আমার কাছে আয়!'
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন