এলন মাস্কের তেলেসমাতি

৫৭৮ পঠিত ... ১৭:৩১, মার্চ ২৪, ২০২২

Elon-mask (1)

এলন মাস্ক, পৃথিবীর এক নম্বর ধনী ব্যক্তি। ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২২৩ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ আছে তার। এলন মাস্ক এতোটাই ধনী যে তিনি তার জন্মস্থান সাউথ আফ্রিকাকে চলার জন্য দুই বছরের ফান্ড দিতে পারেন।

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মাস্কের ধনসম্পদে আরও উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। যুদ্ধ লাগার ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এলন মাস্কের ইলেকট্রিক কার টেসলা'র বিক্রিও বেড়ে গেছে। এই সুবাদে তিনি সম্ভবত ইতিহাসের প্রথম ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক হতে যাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ অংশের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে ১০০ কার্যদিবসের মধ্যে ১০০ মেগাওয়াটের একটা পাওয়ার প্ল্যান্ট রেডি করে দিতে চেয়েছেন মাস্ক। যেন তার টেসলা ব্র্যান্ডের গাড়ি চার্জ দিতে কোনো সমস্যা না হয়৷ আবার দামেও কম হয়। এর ফলে বিদ্যুতের দাম ২৪ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। এই কাজটা অস্ট্রেলিয়ার সরকার-ও ঠিকভাবে করতে পারেনি।

ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য সম্প্রতি রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সরাসরি একক যুদ্ধে (Single Combat) চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন এলন মাস্ক। পুতিন হয়তো টুইটার দেখেন না। তবে তার অনুসারীরা নিশ্চয়ই দেখেন।

এরকম এক ভক্ত অনুসারী চেচেন যুদ্ধবাজ নেতা রমজান কাদিরভ তাকে পাল্টা এক টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছেন, এসব থেকে বিরত থাকতে। তিনি বর্তমানে ইউক্রেনে অবস্থান করছেন। অনলাইনে পুতিনের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কাদিরভের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে।

পুতিনকে একজন স্ট্র‍্যাটেজিস্ট, মহান বিশ্বনেতা ও পশ্চিমের যম উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, মাস্ক তো একজন টুইটার ব্লগার বিজনেসম্যান, এর বেশি কিছু না। তিনি মাস্কের নাম উল্লেখ করেছেন 'কচি এলনা' (Tender Elona) বলে। যেন পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মাস্ক অতটা পুরুষালী কেউ নন।

মাস্কও পালটা জবাবে তার টুইটার একাউন্টে ফার্স্ট নেম বদলে এলনা রেখেছিলেন কয়েক ঘন্টার জন্য। কাদিরভের কাছে ব্যঙ্গ করে জানতে চেয়েছেন ভালো গেরিলা যুদ্ধ রাশিয়া ও চেচনিয়ার কোথায় শেখা যায়! তাহলে পুতিনের সাথে তার জয়লাভের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

তবে মাস্কের এক নম্বর ধনী হয়ে ওঠার জন্য টেসলা'র চেয়ে তার মহাকাশযান সংশ্লিষ্ট কোম্পানি স্পেসএক্স (SpaceX) এর অবদান ভবিষ্যতে বেশি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।

প্রচলিত অর্থ ব্যবস্থার উপরে এলন মাস্কের অনাস্থা আছে। কারণ তিনি মনে করেন, সেন্ট্রাল ব্যাংকগুলো জনগণের সাথে ধোঁকাবাজি করে ইচ্ছাকৃত মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায় আর কাগজের নোট ছাপে। মাস্ক ক্রিপ্টোকারেন্সি'র একজন প্রবল সমর্থক। তার একেকটা টুইটে এগুলোর দাম কমে ও বাড়ে। যেন প্রচলিত স্টক এক্সচেঞ্জের বিপরীতে একটা সমান্তরাল (Paralllel) মুদ্রা ব্যবস্থা।

দুইদিন আগে তিনি টুইট করেছেন যে তার কোম্পানি যখন নিয়মিত মঙ্গলগ্রহে লোক নিয়ে যাওয়া আসা করবে, তখন সম্ভবত সেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি ছাড়া কোনও সেন্ট্রাল ব্যাংকিং মুদ্রা চলবে না। বিটকয়েনের বিপরীতে ডোজকয়েনকে (Dogecoin) কয়েক বছর ধরেই তিনি প্রমোট করে যাচ্ছেন। নিজেকে ডোজফাদারও (Dogefather) তিনি দাবী করেন।

মাস্কের টুইটার আসক্তি প্রবল। তার এই আসক্তি কাজে লাগিয়ে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনের এক যুবক রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তার নাম প্রণয় পাঠোলে। প্রণয় দাবী করেন, মাস্কের সাথে তার নিয়মিত কথা হয়। সেটাও ডাইরেক্ট মেসেজে।

বর্তমানে প্রণয় পাঠোলে টাটা কনসাল্টেন্সি সার্ভিসেসে কর্মরত। চার বছরে আগে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র থাকার সময় এলন মাস্ক তার একটা টুইটে রিপ্লাই করেন। সেই টুইট নিজের অ্যাকাউন্টে পিন করে রেখেছেন।

যেই টুইটে এলন মাস্ক তাকে রিপ্লাই করেছিলেন সেটা ছিল টেসলার অটোমেটিক উইন্ডস্ক্রিনের প্রশংসা করা একটা টুইট। স্বভাবসুলভ সেই টুইটের জবাব মাস্ক তৎক্ষনাৎ দিয়েছিলেন।টুইটটি ইতিমধ্যেই ২৮ হাজার রিটুইট হয়েছে এবং ১ লক্ষ ৩৮ হাজার লাইক পড়েছে।

এরপর থেকেই টেসলার সিইও ও প্রণয় নিয়মিত টুইটারে কথা বলেন। সেগুলোর বেশিরভাগ টেকনিক্যাল ইস্যু নিয়ে। প্রণয় তার বেশিরভাগ টুইটে মাস্ক-কে ট্যাগ করেন। মাস্ক আবার সেগুলোয় জবাব ও দেন। একার‍ণে প্রণয়ের ফলোয়ার সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে।

এক সাক্ষাৎকারে প্রণয় জানিয়েছেন, “যখন এলন মাস্ক প্রথমবার আমার টুইটে রিপ্লাই করেছিল সেটা আমার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল। এখন বিষয়টা আমার কাছে সাধারণ হয়ে গিয়েছে। কারণ নিয়মিত টুইটারে সরাসরি মেসেজে তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়।”

মাস্ক নাকি তাকে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেছেন কিভাবে তিনি ২০০০ ডলার সম্বল করে সাউথ আফ্রিকা থেকে কানাডায় এসেছিলেন এক স্যুটকেস ভর্তি বই নিয়ে। আর এখন তিনি চিন্তা করছেন কিভাবে পৃথিবীর বাইরে অন্যান্য গ্রহে মনুষ্য বসতি স্থাপন করা যায়!

রিসেন্টলি পুতিনকে মাস্কের চ্যালেঞ্জ করা নিয়ে প্রণয় বলেন, পুতিনকে চ্যালেঞ্জ করে মাস্ক কোনও ভুল কাজ করেননি বরং ইউক্রেনে স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট সার্ভিসের লিঙ্ক পাঠিয়ে তিনি সেই নিজেকে অনন্য প্রমাণ করেছেন।

সোজা কথায়, অনলাইনে প্রণয় পাঠোলে হচ্ছেন মাস্কের একজন 'সহমত' ভাই। এলন মাস্ক যা-ই বলেন, সেটাই তার জন্য বেদবাক্যতুল্য৷ মাস্কের প্ল্যানেট কলোনাইজেশনের একজন বিশাল ভক্ত সে। তবে তার এই ভক্তির পেছনে অন্য উদ্দেশ্য ও থাকতে পারে। সেটা হতে পারে মাস্কের মালিকানাধীন কোনও একটা কোম্পানিতে চাকরি। এটা অবশ্য প্রণয় নিজেই জানিয়েছে যে আমেরিকায় মাস্টার্স করার করার পরে সে মাস্কের সাথে কাজ করতে চায়।

এর আগে গুগল, মাইক্রোসফট, এডোবি, আইবিএম, পালো আল্টো নেটওয়ার্কসের পরে টুইটারের সিইও যখন একজন ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূতকে করা হল, তখন মাস্ক তাদের প্রশংসা করে বলেছিলেন, এর অর্থ হচ্ছে আমেরিকা এইসব ইমিগ্র‍্যান্টদের মেধা দিয়ে উপকৃত হচ্ছে। এলন মাস্ক নিজেও যে একজন ইমিগ্র‍্যান্ট!

ওদিকে পুতিনের চামচামি করে রমজান কাদিরভ পেয়েছেন গোটা চেচনিয়ার জমিদারি। ২০১১ সাল থেকে পুতিনের ব্যাক আপের কারণেই তিনি ওই দেশের ক্ষমতায় বসে আছেন।

আর এদিকে প্রণয় পাঠোলের মত কিছু অতিউৎসাহী যুবক "সহমত ভাই" গিরি করে হয়তো বাগিয়ে নিবেন গাড়ি (টেসলা), বাড়ি, নারী এবং স্বপ্নের আমেরিকায় একটা জব, তা-ও আবার পৃথিবীর সবচেয়ে এক্সাইটিং একজন উদ্যোক্তার সাথে।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দুই মার্কেটিয়ার, রমজান কাদিরভ আর প্রণয় পাঠোলে- যেন একই বিটকয়েনের দুই পিঠ।

৫৭৮ পঠিত ... ১৭:৩১, মার্চ ২৪, ২০২২

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top