রহমত ভাইয়ের দিনরাত্রি

১৮০ পঠিত ... ১৭:১০, অক্টোবর ২৭, ২০২৪

24

ছাত্রলীগের কর্মী বাবলুকে গ্রেফতারের পর পুলিশ স্টেশনে তাকে ছাড়াতে আসে ছাত্রদল কর্মী ডাবলু। অফিসার ইনচার্জ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, দুই মাস আগেই না ওরা গুলি করে মারল আপনার বন্ধুদের; এখন ছাড়াতে এসেছেন কেন তাকে!

ছাত্রদল কর্মী ডাবলু আড়ষ্ঠতা ভেঙে বলে, ও আমার বড় ভাই। আমার আব্বা জামায়াতের রোকন। আমগো দুই ভাইরে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দুই দলে ভাগ কইরা দিছেন!

: এ যে দেখছি মাস্টারপ্ল্যান!

: বড় বড় নেতারা আওয়ামীলীগ-বিএনপি বেয়াই হইয়া ৫০ বছর ধইরা কইরা খাইতেছে; আমরা ক্ষুদ্র প্রাণী; আমগো তো একটু কায়দা কইরা চলতে শিখতে হইব নাকি।

ছাত্রলীগের বড় ভাইটিকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ফেরার পথে ছাত্রদলের ছোটো ভাই বলে, অহন কয়ডা দিন ঘাপটি মাইরা পইড়া থাক। পরে সুযোগ বুইঝা ছাত্র শিবির বা ছাত্র ইউনিয়নে ঢুইকা পড়িস।

দুই ভাইকে একসঙ্গে বাড়িতে ফিরতে দেখে তাদের রোকন পিতা তাদের জড়িয়ে ধরে দোয়া পড়ে মাথায় ফুঁ দিয়ে দেয়।

দুপুরের খাওয়া সেরে উঠতেই ছাত্রদলের ছোটো ভাইয়ের কাছে ফোন আসে। বিএনপি নেতা লালু ভাই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরেছেন।

সঙ্গে সঙ্গে ভোঁ দৌড় দিয়ে লালু ভাইয়ের বাসাতে যেতেই দেখে রহমত ভাইয়ে গিজ গিজ করছে নেতার বাড়ির চারপাশ। লালু ভাইয়ের পায়ে সালাম করতেই তিনি বলেন, ডাবলু এখন থিকা আমার পার্সোনাল সেক্রেটারি; এই পোলাডা হিসাব নিকাশে খুব পাকা। জমিদারি সামলাইতে এইরকম একজন নায়েব দরকার।

একথা বলেই হো হো করে হেসে ওঠেন লালু ভাই। লালু ভাইয়ের বাসার গেট থেকে বের হতেই লোকজন সালাম দিতে শুরু করে সদ্য নিযুক্ত নায়েবকে। বড় ভাই বাবলু এসে আনন্দে জড়িয়ে ধরে। জমিদারি ঘুরে দেখাতে শুরু করে ছোটো ভাইকে, ঐ যে ঐখানে একখান জলমহাল আছে; তারপাশে বালু মহাল। ঐ যে মার্কেট এলাকা, তারপাশে ঝুঁট কাপড়ের পট্টি। ঐপাশে নৌকা ঘাট। ঐ যে রিকশা স্ট্যান্ড; এইপাশে বাসস্ট্যান্ড। রিকশা চালক, ফেরিওয়ালা, ভিক্ষুক সবাই রয়েছে জাজিয়া করের অধীনে। বড় ভাইয়ের চাঁদাবাজি ওরিয়েন্টেশন কোর্সে ঘাবড়ে গিয়ে ডাবলু বলে, ও ভাই, এ যে বিরাট সাম্রাজ্য; তুমি আমার গোমস্তা হইবা। টেকাটুকার হিসাব-নিকাশ রাখলা আর কী!

লালু ভাইকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করতে হাজির হয় মসজিদ কমিটি, মন্দির কমিটি, গোরস্থান ও শ্মশান কমিটি, পাষাণ পারা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপ্যাল, ফোরকানিয়া মাদ্রাসার সুপারভাইজার, বাজার কমিটির সদস্য সচিব। সবার একই দাবি, আপনাকে সভাপতি পদে দেখতে চাই লালু ভাই। আওয়ামীলীগ নেতা বাচ্চু ভাই ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় সবগুলো সভাপতির পদ খালি হয়েছে।

ধোপ দুরস্ত সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরে জিয়াউর রহমানের মতো সানগ্লাস চোখে দিয়ে চুলে আর্মি কাট করে গাড়িতে ঘুরতে শুরু করে এলাকার নয়নের মনি লালুভাই।

মাঝে মাঝে বেশি রাজনীতি বোঝা রহমত ভাইয়েরা এসে জিজ্ঞেস করে, লিডার ইলেকশন কবে হইব!

লালু ক্ষেপে গিয়ে বলে, সুশীলগো গিয়া জিগা। ভোটে দাঁড়াইলে যেইসব লোকের জামানত বাজেয়াপ্ত হইব; তারা আইছে সংস্কার মারাইতে। যাউক গিয়া চুপচাপ থাক। ধৈর্য্য বাড়াইতে কইছে হাই কমান্ড। তগো অসুবিধা কীরে; জলমহাল থিকা মাছ ধরবি আর খাইবি।

জমিদারি পরিদর্শন করে দুই ভাই বাড়িতে ফিরে দেখে, বাড়ির সামনে বিরাট জটলা। জামায়াতে ইসলামি হিন্দু শাখা গঠন চলছে। রোকন সাহেব মদিনা সনদের ফজিলত বোঝাচ্ছেন। কীভাবে মদিনায় খলিফা আলী (রাঃ) মামলায় হেরে গিয়েছিলেন এক ইহুদির কাছে। কী রকম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মদিনায়।

হঠাৎ তাকিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ ছেলের মুখমণ্ডলে ৫ আগস্ট রাত থেকে গজানো দাড়ির ঘন অরণ্য দেখে রোকন সাহেব মাশাআল্লাহ বলে একটা টুপিতে ফুঁ দিয়ে ছেলের মাথায় পরিয়ে দেন। এখন থেকে সে-ই জামায়াতের হিন্দু শাখার কল্যাণ নিশ্চিত করবে।

বাবলুর সাড়ে পনেরো বছরের ছাত্রলীগ করার ফজিলতে; কুঁড়ে ঘরের জায়গায় দালান উঠেছিল। ডাবলুর ছাত্রদল করার ফজিলতে দোতলার কনস্ট্রাকশন শুরু হয়। গেটের সামনে শ্বেত পাথরে লেখা হয়, রহমত মঞ্জিল।

 

১৮০ পঠিত ... ১৭:১০, অক্টোবর ২৭, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top