যখন ছাত্রলীগ ছিলাম

১৭ পঠিত ... ১৫ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে

13

এটি ঠিক আত্মজীবনী নয়। ৫০০ শব্দে আত্মজীবনী লেখা যায় না। এই লেখাটি কী, তা আমি নিজেও জানি না। এটি হতে পারে মনের গভীরে এক চিরস্থায়ী ক্ষত-র গল্প, যেখানে অতলান্তিক শূন্যতা আর আর্তনাদ ছাড়া কিছু নেই। হতে পারে এটি কায়কোবাদের 'অশ্রুমালা'র মতো ছাত্রলীগের অশ্রুমালা, কিংবা হতে পারে এটি এক দীর্ঘশ্বাসের স্রোত।

৩ মাস আগেও জীবন ছিল এক অদ্ভুত মায়াবী রাজত্ব, ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিট্যুডের সেই ম্যাকন্ডো গ্রাম—যেখানে জাদু আর বাস্তবতা মিলেমিশে একাকার। পা রাখলেই যেন ঝর্ণা বয়ে যেত, রাস্তায় নামলেই মনে হতো শহরের প্রতিটি ইট, প্রতিটি বাতি আমার নামে জ্বলছে। ঘর থেকে বের হলেই সালাম আর শ্রদ্ধায় কানায় কানায় পূর্ণ হতো আমার মন এবং দেহ। ক্যান্টিনে ঢুকলেই বড় করে পোস্টার দেখা যেত আমার হাস্যোজ্জ্বল মুখের। আমার নি:শ্বাসে গরম হয়ে যেত চারপাশ, ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে একপাশে চেপে যেত আমজনতা। সরাসরি নয়, চোখের কোণা দিয়ে সূক্ষ্মভাবে তাকাত মেয়েরা। সেই চাহনিতে কখনও কখনও ব্রাশ ফায়ার হয়ে যেতাম। মনে হতো, জীবনটা তো অদ্ভুত সুন্দর!

ক্যান্টিনে আমি ছিলাম ডেড পয়েটস সোসাইটির সেই ক্যাপ্টেন, যাকে ঘিরে আড্ডা ছিল, গল্প ছিল, গোল্ড লিফ সুইচ ছিল, কবিতা ছিল।

আমার কন্ঠের কাছে বাকি সবার কন্ঠ শোনাত দূর থেকে ভেসে আসা কোনো প্রতিধ্বনির মতো।   গোলাভরা হেলমেট আর পুকুরভরা হকিস্টিকে আমরা ছিলাম পরিপূর্ণ। ক্যান্টিনে খাতার পর খাতায় লেখা আমার নাম মেঘনাদবধের নয় সর্গকে ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এ সবই আজ সোনালী অতীত কিংবা দীর্ঘশ্বাসের গল্প।

'কেমন আছি' জানতে চেয়ে লজ্জা দেবেন না, জানতে চাইলেই উঠে আসবে বুকের মধ্যে জমে থাকা নীলনদ কিংবা দানিয়ুব। লেখাটি লিখছি আমার বড় জেঠির মেজো বোনের বড় খালার ছোটো মেয়ের বাসার খাটের নিচে শুয়ে। বাইরে এখন দিন কী রাত—জানি না। আজ মঙ্গলবার নাকি শুক্রবার—জানি না। ৪ আগস্ট ঘুমিয়েছিলাম প্রিয় অভিভাবক হয়ে, ৫ আগস্ট গ্রেগর সামসার মতো কাঁকড়া হয়ে জেগেছি।

হেলমেট আর হকিস্টিকগুলো রাতের বেলা কথা বলে। আমাদের যোগাযোগ হয় টেলিপ্যাথিতে। ওরা প্রায়ই বলে, পাখি চলে গেছে, কিন্তু ফেলে গেছে খাঁচাভর্তি ডানা।

বিজ্ঞান কী বলে? জড় বস্তু কি কাঁদে? কাল রাতে মনে হলো আমি ওদের কাঁদতে শুনেছি। মা কিংবা প্রিয়তমার কান্না সহ্য করা যায়, কিন্তু হকিস্টিকের কান্না যায় না। এটাই একজন রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষের পার্থক্য।

কাঁকড়া হয়ে ঘুম ভাঙলেও পেট রয়ে গেছে মানুষের। তাকে তো আর বোঝানো যায় না। চাকুরির জন্য চেষ্টা করিনি, তা না। যেহেতু হেলমেটের সাথে বোঝাপড়া ভালো, পাঠাও রাইডার হিসেবে কাজ করেছি কিছুদিন। এরপর কিছুদিন কেটেছে ফুডপান্ডায়। তবু গন্ধ শুঁকে শেয়াল আসে। দু'বারই জায়গা হলো পঙ্গু হাসপাতালে। এরপর থেকে খাটের নিচেই আছি।

নতুন একটি শব্দ শিখেছি। জিজীবিষা। অর্থ, বেঁচে থাকার ইচ্ছা। জিজীবিষু হয়ে ছিলাম এক নারীর জন্য। যে প্রেমিকার পরিবার এতদিন আমাকে মাথায় তুলে রেখেছে, বাসায় গেলে জুতো পর্যন্ত খুলে দিয়েছে, তারা আজ হয়ে গেছে লস্কর বাড়ির মানুষ। তাদের চোখে আজ আমি উদ্বাস্তু, যাযাবর। তারা আর চিনেও চেনে না।

প্লিজ, জানতে চাইবেন না কেমন আছি। কখনও মনে হয়, বুকের ভেতর জমতে থাকা নীলনদ আর দানিয়ুব একাকার হয়ে তেড়ে আসবে জলোচ্ছ্বাস হয়ে। মাঝে মাঝে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, গাত্রদাহ হয়। নিজেকে থামাতে পারি না। তখন মনে মনে ৩৩ বার 'আপা, আপা…' পড়ে ৯৯ বার 'আলো আসবেই' পড়ি… তখন আচমকাই পৃথিবী যেন নীরবতার চাদরে জড়িয়ে পড়ে। মনে হয়, ঘূর্ণিঝড়ের সমস্ত তাণ্ডব থেমে গেছে। রিমোট কন্ট্রোলে পজ করে রাখা প্রকৃতি ফিরে পায় তার হারানো ছন্দ।

১৭ পঠিত ... ১৫ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top