বেশ কয়েক বছর ধরে সিঙ্গেল জীবনযাপন করছেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আনিকা। জীবনে অনেক কষ্ট থাকলেও তা শেয়ার করার মতো কাউকে না পেয়ে একাই সামলে নিচ্ছিলেন। তবে রাস্তায় কাপল দেখলে হালকা ঈর্ষা জাগে না, তা নয়। তবুও, বয়ফ্রেন্ডের প্যারা থেকে মুক্তি পেতে আনিকা বহুদিন আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন—প্রেমের জগতে আর কোনোদিন পা রাখবেন না।
জীবন মোটামুটি শান্তিতেই কাটছিল। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে আনিকা আর নিজেকে সামলাতে পারছেন না। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই ঝলমলে লাইট জ্বালানো বেলুনের ভিডিওতে ভরে গেছে। টিকটক থেকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম থেকে ইউটিউব—সব জায়গাতেই আনিকাকে দেখা যাচ্ছে ঝিলিমিলি বেলুন ফাটাতে। এমন অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের কারণ জানতে eআরকি’র অনুসন্ধানী দল হাজির হয় আনিকার মোহাম্মদপুরের বাসায়।
ঢাকায় বেড়ে ওঠা আনিকা জানান, একসময় তার দুর্দান্ত প্রেমিক ছিল। ডেটে গেলে গিফট, রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া, মুভি দেখা, ফুল কিনে দেওয়া—সবই করত সেই প্রেমিক। মাসে একবার বেঙ্গল বুকসে গিয়ে বই কেনাও ছিল তাদের রুটিন। কিন্তু এই সুন্দর প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যায় একটি বেলুন কাণ্ডে।
একবার আনিকার জন্মদিনে তার প্রেমিক ঘর সাজানোর জন্য অনেক বেলুন এনেছিলেন। বেলুনগুলো ছিল তেলতেলে আর আঠালো, সাজানোর বদলে সেগুলো ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তার চেয়েও বড় বিপদ হয়, যখন আনিকার বাবা-মা এসব দেখে বকা দিয়ে দেন। সেই থেকেই বেলুন এবং প্রেমের প্রতি আনিকার একধরনের ট্রমা তৈরি হয়।
অনেকদিন বেলুন এড়িয়ে চললেও সম্প্রতি ঢাকার রাস্তায় চোখে পড়া ঝিলিমিলি লাইটওয়ালা বেলুন তার ট্রমা রেসপন্সকে ফের সক্রিয় করে। আনিকা বলেন, যতক্ষণ সামনে বেলুন দেখি, দম আটকে আসে। বুক ধড়ফড় করে। চোখের সামনে ঝলমলে বেলুন থাকতে আমি শান্তি পাই না। তাই বেলুন দেখলেই সেটি ফাটাই।
বেলুন ফাটানোর এই স্বভাবের জন্য বন্ধুবান্ধবদেরা তাকে বেলুন আনিকা নামেও খেপাচ্ছে। আনিকা দমে না গিয়ে বলেন, যতদিন রাস্তায় বেলুন থাকবে, ততদিন আমার সংগ্রাম চলবে। শরীরে এক ফোটা রক্ত থাকতে কোনো বেলুনকে অক্ষত দেখতে চাই না।
আনিকাকে নিয়ে তার পরিবার ও বন্ধুরা বেশ বিব্রত। এক বন্ধু জানান, গতকাল আনিকা এক বাচ্চার হাতে থাকা বেলুন ফাটিয়ে দিয়েছে। বাচ্চাটা এত কেঁদেছিল যে বেলুনের বদলে তাকে নতুন গিফট কিনে দিতে হয়েছে। আনিকা এভাবে চললে আমাদের সবার পথের ফকির হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার।
পরিবারও আনিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। তবে আনিকা কোনোভাবেই নিজের বেলুনবিরোধী আন্দোলন থামাতে নারাজ।