আনোয়ারা যখন নেপাল থেকে বাসায় ফিরল, তখন সে প্রচণ্ড ক্লান্ত। ডগ টায়ার্ড যাকে বলে। অবশ্য শরীর ক্লান্ত হলেও মনের ক্লান্তি নেই। গতবারের মতো এবারও ট্রফিটা সাথে নিয়েই ফিরেছে তারা। এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত তখন দুইটা। 'বাসার সবাই নিশ্চয়ই ভীষণ খুশি!' মনে মনে ভাবল আনোয়ারা। আসলেই তাই।
বাসায় ঢুকে দেখল সবাই জেগেই আছে। তার জন্যই সবার অপেক্ষা। কেক, বেলুন দিয়ে সাজানো বাসা দেখে মনে বেশ খুশি হলো সে। বাবা কপালে চুমু দিয়ে বলল, অভিনন্দন মা, অনেক তো হলো, এবার থিতু হও।
আনোয়ারা মুখ টিপে হাসল।
পরদিন যখন তার ঘুম ভাঙে, বাসাভর্তি মানুষ। একদমই অপ্রত্যাশিত। আনোয়ারা ভাবল, সাক্ষাৎকার নিতে প্রেসের লোক এসেছে নিশ্চয়ই। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সে তৈরি হয়ে নিজেকে একটু গুছাল। বাংলাদেশের জার্সি পরে চুল ব্যাকব্রাশ করে রুম থেকে যখন সে বের হলো, তখন দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিস্থিতি।
একদল মানুষ সোফায় বসে আছে স্যুট টাই পরে। দুই একজন মধ্যবয়সী মহিলাও আছেন সেখানে। তবে দৃষ্টি যায় মাঝে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা একটা বোকা চেহারার ছেলের দিকে। সে তাকিয়ে আছে স্ট্রেইট নিচে। অবভিয়াস কারণে একেই মনে হলো সেন্টার অব ভিসিট।
যা হোক, আনোয়ারাকে জার্সি পরিহিত অবস্থায় দেখে আঁতকে উঠলেন দু'একজন। আনোয়ারার বুঝতে দেরি হলো না এরা কারা। আনোয়ারার মা বলল, উনাদেরকে সালাম করে শরবত দাও মা।
আনোয়ারা তাই করল। সালাম করার সময় তার খোলা পায়ের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল পাত্রের খালু এবং চাচা।
পাত্রের মা এসময় একটি অদ্ভুত কাজ করলেন। অবশ্য এর জন্য তিনি আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন। চামড়ার ব্যাগ থেকে একটি ফুল প্যান্ট আর ওড়না বের করে আনোয়ারাকে বললেন, যাও মা, এগুলো পরে আসো।
বাধ্য মেয়ের মতো আনোয়ারা চেঞ্জ করে আসলো।
এরপর শুরু হলো ভাইভা। আনোয়ারা হেঁটে দেখাল, সূরা নাসের তিন আয়াত শোনাল, হাত দেখাল, গানও শোনাল। টুকটাক রান্না পারে শুনে বেশ খুশিও হলো পাত্রের পরিবার।
ছেলের মা বলল, পাত্রীকে আমরা টিভিতে দেখেছি। সেখান থেকেই পছন্দ। আমরাও স্পোর্টস লাভার পরিবার। তবে মা, বিয়ের পর সংসারী হতে হবে। খেলতে না দিলেও তোমাকে নিয়মিত খেলা দেখতে দেওয়া হবে। ওসব নিয়ে একদম চিন্তা করো না।
পাত্রের খালু কিছু বলার জন্য উশখুশ করছিলেন। গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বললেন, মাঠে যা-ই করো না কেন, মেয়ে মানুষের আসল সৌন্দর্য ঘরে। মেয়েদের চুল হবে লম্বা, তারা করবে বেণী। তোমার প্রথম কাজ হলো ব্যাটাদের মতো আচরণ থেকে বের হয়ে আসা।
বিদায় নেওয়ার আগে পাত্রের মা এক প্যাকেট লীজান উপটান আর মুলতানি মাটি দিয়ে গেল আনোয়ারার হাতে। ঘটনার আকস্মিকতা বুঝে ওঠার আগেই এক শুক্রবার বিয়ে হয়ে গেল আনোয়ারার।
শুক্রবারেই এক ঘণ্টায়ই আনোয়ারার জীবন বদলে গেল। তার এখন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্র্যাকটিসে যাওয়া হয় না, টিমমেটদের সাথে খুনসুটি হয় না। সবাই যখন টিভিতে জি বাংলা দেখে তার দেখতে ইচ্ছা করে ডমেস্টিক টুর্নামেন্ট। সবাই ঘুমানোর পর কিছুদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেও।
রাতগুলো কাটে গভীর দীর্ঘশ্বাসে। কোনো কোনো দিন স্বপ্নে ‘গোল!’ বলে চিৎকার দিয়ে স্বামীকে আবিষ্কার করে খাটের নিচে, আহত অবস্থায়। বেচারা স্বামীটিরও ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন