মান্না দে'র আমি সারারাত শুধু যে কেঁদেছি গানটা শুনতে শুনতে নির্ঘুম রাত জাগা যন্ত্রণার কালি নিয়ে কষ্টে ছটফট করতে থাকে সেবায়েত ফকির। এমন সময় কলিং বেল বাজে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বুবু সেবক সংঘের বালটন দাস এসেছে।
: ও দাদা একটা চাকরি বাকরির ব্যবস্থা করে দেন; আর তো পারি না দাদা।
পাশের ঘরে কন্যা রবীন্দ্র সংগীত রেওয়াজ করছে মঙ্গলঘটে পিদীম জ্বেলে।
সেবায়েত কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে গান শোনে। বালটন গান শুনে সাধু সাধু বলে ওঠে। গর্বিত পিতার ভঙ্গিতে সেবায়েত বলে, রবীন্দ্র ভারতী থেকে গান শিখে এসেছে। এই মরিয়ম বালটনকে একটু জল খাবার দে।
জল খাবার মানে এক মগ রঙ চা; টোস্ট বিস্কিট দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখা। বুবুর সেবায়েত হয়ে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটু আই) প্রকল্পের অধীনে একটা স্টার্ট আপের শেয়ার মিলেছিল। যদিও সে স্টার্ট আপের তৈরি অনলাইন গেমস অ্যাপসগুলো গুগল নামিয়ে দিয়েছিল; নকল অ্যাপস বলে। তবুও বুবুসেনা হিসেবে কালচারাল হ্যাপি ওয়ার্কস করে দু'চার পয়সা এসে যেত।
: ও দাদা নতুন কী লিখতেছেন!
আগেই বলে রাখা উচিত ছিল কয়েকপাতা রবীন্দ্রনাথ পড়ে আর বংকিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুর্গেশ নন্দিনী বইখানা হাতে নিয়ে ঘুরে; সেবায়েত একজন বিশিষ্ট লেখক হয়ে পড়ে। আর মুক্তিযুদ্ধে যেহেতু কোনো স্বজন শহীদ হয়নি; তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দু'চার কথা ফেসবুকে লিখে; ললিতা আপার আওয়ামী নারীবাদী গ্রুপের হার্টথ্রব হয়ে উঠেছিল হিরো হীরালালের মতো। খরচাপাতি করে গ্রন্থ প্রকাশের পর; খাটের তলে দুই আঁটি বই পড়ে থাকার ফজিলতে নতুন কোনো প্রকাশনার কথা ভাবতে পারে না আর।
: ও দাদা এইবার কইলকাতা থিকা বই বাইর করেন।
সে চেষ্টাও হয়েছিল। কলকাতায় ময়ূখরঞ্জন দাদার ফেসবুক ফ্রেন্ডশিপ সূত্রে দুই চাইরদিন ঘোরাঘুরি করে ভাগ্যের সুঁতো ছেড়েনি। কিল খেয়ে কিল চুরি করে ফিরে এসেছে ওখানকার রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘের শলমা দিদির রাখী হাতে বেঁধে।
কলকাতায় গিয়ে বড্ড মন খারাপ হয়েছে। নন্দন এলাকার ছেলে-মেয়েগুলোর রবীন্দ্র ভক্তি নেই, বংকিমের জমিদারি ভাবখানা নেই। একি ভাবা যায়! কোথায় গেল ইয়াং বেঙ্গল! হায় ডিরোজিও; তোমার চাইতে তো ফরহাদ মজহার বেশি ভক্ত জুটিয়েছে।
ফিরে আসার সময় চোখের অশ্রু মুছে সেবায়েত শলমা দিদিকে বলে, আসমুদ্র হিমাচলে শিবাজির গেরুয়া পতাকা কী পত পত করে উড়বে না! কলকাতা দেখছি মুসলিম জঙ্গীদের ভাই বলে জড়িয়ে ধরার জায়গা! একি ভাবা যায়। দিদি আশীর্বাদ করে বলেন, জয় শ্রীরাম।
ঢাকায় ফিরে আসার একমাসের মধ্যে কেলোর কীর্তি। ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে ছোটোবুবু সমভিব্যহারে বড় বুবু মথুরার বৃন্দাবনে গেল বাহুবলী তারেক সিদ্দিককে নিয়ে। এখন শুনছি, বেরেলি বাজারে ক্ষমতার ঝুমকা খুইয়ে উনি মীরাটে। আর বুবু সেবক সংঘ নিষিদ্ধ হয়ে ওরা সুন্দরবনে গিয়ে হনুমানের সংখ্যা বাড়িয়েছে।
হঠাৎ সম্বিত ফিরে সেবায়েত স্বভাবসুলভ জুজু দেয়, চারিদিকে হিজবুত, পাকসারজমিন কুলু কুলু করছে; আংকেল স্যামের চাদর গায়ে আর তালাল আসাদ কপচে বেড়াচ্ছে মৌলবাদীরা।
ভয় পেয়ে বালটন জড়িয়ে ধরে সেবায়েতকে। গেরুয়া প্রগতিশীলদের অস্নানঘটিত সুগন্ধ বিনিময়ে উভয়ের নিঃশ্বাস বন্ধের উপক্রম হয়। সেবায়েত একটু নেবুলাইজার স্প্রে করে জানালার কাছে আসে।
: বুঝলে বালটন আজকাল নিজেকে কেমন একজন গৃহবন্দী বাহাদুর শাহ জাফর লাগে।
: আমারে মির্জা গালিব কইতে পারেন; আইজ সকালেও একখান কবিতা লিকচি; শুনবেন দাদা।
: শোনাও শোনাও, ইরশাদ।
: সবাই মিলে বৃন্দাবনে গেলে
বাকি কিছু ইউসুফ সরকারের জেলে
আহা আমাদের যা গেছে রসাতলে
কিছুই কী নেই তার আগরতলে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন