দিল্লির লুটিয়েন্স ভবনে ভালোই কাটছিল লুটের রানীর। কিন্তু মুশকিল হয়েছে, সেখানে তার লুটেরা সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা নিয়মিত এসে কাঁদাকাটি করেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আপা আমার পাসপোর্ট, টাকা-পয়সা সব কিছু চুরি হয়ে গেছে; আমি এখন কী করব গো আপা!
অপু দিদি এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন, বুবু গো, কলকাতার সল্টলেকে এক আত্মীয়ের নামে ফ্ল্যাট কিনেছিলাম; সে এখন চোখ উলটে ফেলেছে। বলছে, এই ফ্ল্যাট নাকি তার। মাথায় তেলপানি বসানোর জন্যে হলেও আমাকে সঙ্গে রাখুন বুবু।
উটকো ঝামেলা হয়েছে দইওয়ালা তরুণ ঘোষকে নিয়ে, সে লুটিয়েন্স ভবনের বাইরে এসে হাঁক দেয়, দৈ নেবে গো দৈ, পাঁচমুড়া পাহাড়ের তলার, শ্যামলী নদীর ধারের সুস্বাদু দই।
অমলের বিষণ্ণতা নিয়ে আপা গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়ান, দইওয়ালা ও দইওয়ালা, আমাকে নিয়ে যাবে সেই শ্যামলী নদীর ধারে!
দইওয়ালা এসে চোখ দুটো গোল গোল করে বলে, নমস্কার দিদি, ওয়াশিংটন পোস্ট দেখেছেন; পেন্টাগনে ইউশুফ সরকারের সব চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গেছে; সেকান থেকে সেনা প্রধান চুপ্পুদাকে ফোন করে বলেছেন, আমি না আসা পর্যন্ত কোনো কাগজে সই করবেন না; আপনি তো আবার ভুলোমনা মানুষ। ওদিকে সার্ভিশ আলম প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চাইছে। খেলা জমে গেছে। প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা দিলেই; আওয়ামীলীগ জেগে উঠবে; বাক্স প্যাটরা গোছান গো দিদিভাই; এবার দেশে ফিরতে হবে।
: দইওয়ালা, এসব তো শুনলাম ফেক নিউজ। এতিমদের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা।
কোত্থেকে টাবু এসে দইওয়ালাকে কান ধরে নিয়ে যেতে যেতে বলে, ভাটের আলাপ করার জায়গা পাওনা নাকি! কেন বয়স্ক মানুষটিকে অযথা বিভ্রান্ত করছ।
লুটিয়েন্স ভবনের গেটে জঙ্গী বলে ধরা পড়ে নওফেল ও সাদ্দাম। টাবু এসে বলে, আপনারা শেভ করেন না কেন! আরেকটু হলেই তো লস্কর এ জঙ্গী বলে ক্রসফায়ারে দিয়ে দিত। অবশ্য আপনারা তো এখন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন।
শ্মশ্রুমণ্ডিত নওফেল ও সাদ্দামকে ভবনের পোর্টিকো পর্যন্ত যাবার অনুমতি দেওয়া হয়। তাদের কাছে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের খবর শুনে বাহুবলী তারেক সিদ্দিকি হুংকার দিয়ে বলেন, এত বড় সাহস ইউসুফ সরকারের। বাঘের বিচার করে বেড়াল; এই দিন দিন নয় আরও দিন আছে।
এমন সময় গেটের কাছে আসে, ৫ আগস্টের পর অল্প কিছু ভিসা প্রাপ্ত কাঁচামাল অ্যাসেটদের একজন। তোতলাতে তোতলাতে বলে, আমি উনাকে দেশের আপডেট দিতে এসেছি; আমার স্পেশাল ভিসা আছে। আমি উনাকে আন্টি বলে ডাকি; পারিবারিক সম্পর্ক।
টাবু বিরক্ত হয়ে বলে, বাংলাদেশে এত হ্যান্ডসাম চটপটে ছেলে থাকতে এসব তোতলা অ্যাসেট রিক্রুট করেছে কারা!
এমন সময় অজিত দোভালের ফোন আসে টাবুর কাছে, এই মহিলাকে এখানে আর রাখা যাবে না; অজ্ঞাত স্থানে শিফট করতে হবে। তুমি উনাকে সুটকেস গোছাতে বলো।
পুলিশ দ্রুত দর্শন প্রার্থী পলাতক লীগকে মৃদু লাঠি চার্জে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে তারেক সিদ্দিকি বলেন, মীরাটে স্থানান্তর করা হচ্ছে; আপার দেখা পেতে চাইলে তোমরা বেরেইলি বাজারে চলে যাও। সবাই দ্রুত একটা ঝুট কাপড় বোঝাই ট্রাকে করে বেরেইলি বাজারের দিকে যাত্রা শুরু করে।
টাবু আপাকে নিয়ে মীরাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে; পেছনে প্যারামিলিশিয়াদের তিনটা গাড়ি। মোদিজির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসেট হচ্ছেন আপা; তার নিরাপত্তা অগ্রাধিকার এই রিক্লেইম ডোর ম্যাট অপারেশনে। সেভেন সিস্টারসে যেতে বাংলাদেশকে ডোরম্যাট হিসেবে ব্যবহারের সংকল্প থেকেই মিশনের নামটি এমন দেওয়া হয়েছে।
বেরেইলি বাজারে ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে পুলিশ বিপ্লব ঘুরতে থাকে। আদিত্য যোগীর ভাজপা দলের এক ক্যাডার জিজ্ঞেস করে, এই উঁইপোকা, তুই কি মুছুম্মান! তোর কি চারটি বিবি, এগারোটি সন্তান!
বিপ্লব কেঁদে ফেলে, কারও কেউ নই তো আমি কেউ আমার নয়, কোনো নাম নেই তো আমার শোন মহাশয়। এমন সময় বানজারান নাচনেওয়ালী গুলফাতের ছদ্মবেশে আরাফাত এসে মুখ ঝামটা দেয়, মিনসে নাচ দেখবি নাকি। গলায় একটা হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে শামীম ওসমান। ঢোলক বাজাচ্ছে অসীম উকিল।
ঝুমকা গিরারে, বেরেইলিকি বাজার মে ঝুমকা গিরারে গান আর নাচে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে বেরেইলি বাজারের চৌরঙ্গী, সেখানে উঁচু এক পিলারের মাথায় বিশালাকার ঝুমকা বাঁধা।
গুলফাতের নাচে গানে চৌরঙ্গীতে ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হয়, সেখানে আটকে যায় আপার গাড়ির বহর। মেজ আপা বলেন, শুনেছি এখানে খুব সুন্দর ঝুমকা পাওয়া যায়, নামবে নাকি বুবু! অমনি আপা লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যান। আর বানজারান নর্তকী, ঢোলক, হারমোনিয়াম বাদক এসে আপাকে ঘিরে ধরে।
টাবু ওয়াকি টকিতে বলে, ঝুমকা গিরারে আলফা ঝুমকা গিরা, বেরেইলি কি বাজার মে আলফা; ওভার।
আলফা খুবই বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয়, কপি দ্যাট। হারি আপ গামা। ওভার।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন