‘আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুন হবো’- কথাটি বলার পর অনেক ফাল্গুন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এত মানুষের ভীড়ে হারিয়ে গিয়েছেন নতুন দিনের আশা দেখানো মানুষটি- তিনি জহির রায়হান। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি সবার অজান্তে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি, এত বছর পেরিয়ে গেলেও সে মানুষটির আর দেখা পাওয়া যায়নি। একই সাথে ক্যামেরা এবং লেখনী দিয়ে তিনি বলতে চেয়েছেন মুক্তির কথা; সকল অন্যায়-শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দৃপ্ত আহবান হয়ে আছে তাঁর সকল সৃষ্টি। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনন্য ভূমিকা পালন করা গুণী এই চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্মদিন আজ। বিশেষ এই দিনে eআরকি স্মরণ করছে কিংবদন্তী এই মানুষটিকে তাঁর জীবনের কিছু চমকপ্রদ ঘটনার মাধ্যমে, যেখানে প্রকাশিত হয় জহির রায়হানের বিচিত্র জীবনযাত্রার মজার এবং সাহসী কিছু দিক-
১# সম্পর্কে জহির রায়হান ছিলেন কিংবদন্তী চিত্রনায়িকা ববিতার দুলাভাই। শুধু তাই নয়, অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া সে সময়ের কিশোরী ববিতার বাংলা শিক্ষকও ছিলেন তিনি। নিজের স্মৃতি রোমন্থন করে ববিতা বলছেন- অনেকটা দুষ্টুমি ছলে জহির রায়হান ববিতাকে নায়িকা হবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ববিতা পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস, নায়িকা কেন হবেন তিনি! জহির রায়হানও নাছোড়বান্দা; ববিতাকে নায়িকা বানিয়েই তিনি ক্ষান্ত হবেন। পরে জহির রায়হানের 'সংসার' চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে রূপালী পর্দায় সুবর্ণা নামে অভিষেক ঘটে ববিতার। বাকিটুকু ইতিহাস, ববিতা এখন ঢাকাই সিনেমার জীবন্ত এক কিংবদন্তী!
২# ‘স্টপ জেনোসাইড’ এর চিত্রগ্রহণের জন্য এপ্রিলের প্রথমেই কলকাতা চলে যান জহির রায়হান, তাও শুধুমাত্র একটি কাপড়ে! পরবর্তীতে এপ্রিলের শেষে তাঁর চিঠি পেয়ে দুই প্রস্থ প্যান্ট-শার্ট নিয়ে কলকাতা যান সাংবাদিক এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা আরেক গুণী ব্যক্তিত্ব শাহরিয়ার কবির।
৩# ১৯৬৮ সালে জহির রায়হানের বড় বোন নাফিসা কবির তাঁর জন্য লন্ডন থেকে মরিস অক্সফোর্ডের একটি গাড়ি উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন, সে সময়ে যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় দুই লাখ টাকা! সেই বিলাসবহুল গাড়িটি জহির একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনের সময় দিয়ে দিয়েছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে, তাঁর যাতায়াতের সুবিধার জন্য।
৪# ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন তরুণ জহির রায়হানকে ব্যাপক নাড়া দিয়েছিল, এমনকি হুমায়ুন আজাদ জহির সম্পর্কে বলেছেন- যদি বায়ান্নর একুশ না ঘটত তবে জহির রায়হান হয়ত কথাশিল্পী হতেন না। সেই ভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা প্রথম দশজনের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া জহির।
৫# সাংবাদিক, গল্পকার, পরিচালক- এত ভারী ভারী পরিচয়ের ভিড়ে আরও একটি দারুণ পরিচয় আছে জহির রায়হানের- জ্যোতিষ শাস্ত্রে বেশ সিদ্ধহস্ত ছিলেন জহির। মানুষের হাতের রেখা পড়ে ভবিষ্যতবাণী করতেন তিনি, যার অনেক কিছু মিলেও যেত পরবর্তীতে, নিজের স্মৃতিকথায় এমনটা বলেছিলেন ববিতা।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন