বাংলাদেশি নারী আকাশে বিমান নিয়ে উড়েছেন অনেক আগেই। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি তারা। সাধারণ বিমানের পর দেখেছেন যুদ্ধবিমান ওড়ানোর স্বপ্নও। আর সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন দুই নারী বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাঈমা হক এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুৎফী।
শুধু সামরিক বিমান চালিয়েই থেমে থাকেননি এই দুই নারী, বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে তারা দুজন যোগ দিয়েছেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে। ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর নাঈমা ও তামান্না শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিতে উড়াল দেন কঙ্গোর পথে। প্রায় দেড় বছর ধরে তারা কঙ্গোর মতো দেশে কঠোর মিশনে নিয়োজিত আছেন।
২০১৪ সালের ৩ আগস্ট থেকে দুজনেই শুরু করেন গ্রাউন্ড প্রশিক্ষণ। ঐ বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে উড্ডয়ন শুরু করে ডিসেম্বরে শেষ করেন প্রাথমিক ধাপের প্রশিক্ষণ। ভারতে সম্পন্ন করেন এভিয়েশন মেডিসিনের কোর্স। আপারেশন পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায়। প্রায় চারশো ঘণ্টা উড়ে বেড়ান আকাশে। তারপরই সুযোগ পান সাব সাহারান দেশটিতে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেওয়ার সুযোগ।
কৃষি বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা এম নাজমুল হক ও গৃহিনী নাসরিন বেগমের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট নাঈমা। ব্রিটিশ শাসনামলে দাদা ছিলেন রয়েল ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের সদস্য। তাকে দেখেই স্বপ্নের শুরু। ২০১০ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন হলিক্রস স্কুল ও কলেজের ছাত্রী নাঈমা হক। ২০১১ ডিসেম্বরে কমিশন পাওয়ার পরে যোগ দেন বিমান বাহিনীর অপারেশনাল শাখায়।
আর তামান্নার বাবা নিজেই বিমান বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার কর্মকর্তা। ছোটবেলা থেকেই তাই বিমান বাহিনীর মধ্যেই বড় হয়েছেন, সেই থেকেই আগ্রহ তৈরি হয়েছে তামান্নার। বিএএফ শাহীন স্কুল ও কলেজের ছাত্রী তামান্না-ই-লুৎফী বিমানবাহিনীতে যোগ দেন ২০১১ সালে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কমিশন পাওয়ার পরে তিনিও অপারেশনাল শাখায় যোগ দেন।
গত দেড় বছর ধরে কঙ্গোতে সফলতার সাথেই দায়িত্ব পালন করছেন এই দুই বাংলাদেশি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট। কঙ্গোর স্থানীয় নারীদের মাঝে অনুপ্রেরণাও যোগাচ্ছেন এই দুই পাইলট। তামান্না বলেন, ‘স্থানীয় নারীদের কাছে আমরা এক বিশাল অনু্প্রেরণা। স্থানীয় নারীরা আমাদের দেখে পড়াশোনা করতে উদ্বুদ্ধ হয়।’ তবে নিজেকে শুধুমাত্র একজন নারী হিসেবে পরিচয় দিতে চাননা তামান্না। তার ভাষায়, ‘আমি কখনোই নিজেকে কেবলই একজন নারী হিসেবে পরিচয় দেই না। আমি মনে করি, আমি একজন পাইলট, একজন শান্তিরক্ষী। কারণ নারী নাকি পুরুষ, কে চালাচ্ছে মেশিনের তা বোঝার ক্ষমতা নেই।’
১৯৯৩ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে আসছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। নারী বৈমানিকের অংশগ্রহণকে নতুন দিগন্তের সূচনা করেন এই দুই পাইলট। সম্প্রতি জাতিসংঘ এই দুই নারী বৈমানিকের সাফল্য নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইউটিউবে। ভিডিওটিতে নাঈমা হক এবং তামান্না-ই-লুৎফীর অভিজ্ঞতা, এগিয়ে চলা ও সাফল্যের গল্প শুনতে পারবেন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন