ভাসেল পেট্রিভিচ হলোবোরদকো, খটমটে নামের মধ্য ত্রিশের এই মানুষটি ইউক্রেনের এক হাইস্কুলে ইতিহাস পড়ান। দেশের সরকারের তীব্র সমালোচনা করা একটি ভিডিও হুট করেই ভাইরাল হতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। হুট করে এই স্কুল শিক্ষক সাধারণ জনগণের মাঝে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে যান যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেন এবং ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি হয়ে যান।
খুব চমকপ্রদ হলেও, এটি সত্যিকারের ঘটনা না। ‘সার্ভেন্ট অফ দ্য পিপল’ নামের একটি পলিটিকাল স্যাটায়ার টিভি সিরিজের গল্প। নিশ্চয়ই একটু হতাশ হলেন, এত চমৎকার একটা ঘটনা তাহলে বাস্তব না! হতাশ হবেন না, বাস্তবে ইউক্রেনে যা ঘটেছে তা এই কল্পিত ঘটনার চাইতেও ঢের বিস্ময়ের। ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়া ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন ভলোদেমার জেলেনস্কি যিনি কিনা টিভি পর্দায় সেই স্কুল শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ধনকুবের পেট্রো পোরোশেঙ্কোকে রাজনীতিতে একেবারেই নতুন জেলেনস্কি রীতিমত বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। জেলেনস্কি পেয়েছেন ৭৩% ভোট আর পোরোশেঙ্কো মাত্র ২৪% ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চাইতে তিন গুণ বেশি ভোট পাওয়া জেলেনস্কির রাজনৈতিক দলের নামও টিভি সিরিজের নামেই ‘সার্ভেন্ট অফ দ্য পিপল’। টিভি সিরিজটি এবং পর্দার প্রেসিডেন্ট যে ইউক্রেনে সত্যিকার অর্থেই প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ করার কোন উপায় নেই।
২০১৫ সালে শুরু হওয়া টিভি সিরিজটির ৩টি সিজন হয়েছে এ পর্যন্ত। আর রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘সার্ভেন্ট অফ দ্য পিপল’ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ। অর্থাৎ দল গঠনের এক বছরের মাঝেই একেবারে বাজিমাত করে দেয় দলটি। যদিও নির্বাচনের আগে প্রতিপক্ষের ঝানু রাজনীতিবিদদের প্রবল বিরুদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল জেলেনস্কিকে। রাজধানী কিয়েভের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ৭০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে দুই প্রার্থীর বিতর্কে পোরোশেঙ্কো অভিযোগ করেন যে, জেলেনস্কি তরুণদের আবেগকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করছেন।
এসবের ভালো জবাবই দিয়েছিলেন এই কমেডিয়ান থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া জেলেনস্কি। আর ভালো যে করেছেন সেটা তো ভোটের ‘ল্যান্ডস্লাইড’ ফলাফলেই প্রমাণ পায়। দায়িত্ব পেতে আরও মাসখানেক অপেক্ষা করতে হবে তাকে। দেখা যাক, টিভি পর্দায় এতদিন ধরে রাষ্ট্রপতি চরিত্রে অভিনয় করে এখন সত্যিকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে করেন তিনি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন