কারো ঘরের দাসী-বাঁদি হতে দেব না

৩৮ পঠিত ... ৮ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে

28

২০২৪-এর জুলাই-অগাস্ট জেনজি বিপ্লব এই ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্বের আকাংক্ষার অভ্যুত্থান। পলাশী যুদ্ধে ইংরেজ ও স্থানীয় কোলবরেটরদের ষড়যন্ত্রে স্বাধীনতার সূর্য অস্ত গেলে; সেই থেকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের লড়াই করতে থাকে পূর্ববঙ্গের জনমানুষ।

১৯৪৭-এর স্বদেশী সংগ্রামের মাধ্যমে পাওয়া স্বাধীনতা ভিনদেশী শাসকের শাসন-ত্রাসন-সংহারে তরুণদের কণ্ঠে, ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায় শ্লোগানে প্রত্যাখ্যাত হয়। ৪৭-এর স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন যারা; তাদের পরের প্রজন্ম আবার স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতাকে যারা পাকিস্তানভুক্তির মাঝে খুঁজেছিলেন; তারা অপ্রাসঙ্গিক হতে থাকেন। ১৯৭১ সালে তারা স্বদেশের মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক আত্মহনন করেন।

১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে; শাসকের চেহারা বদলায়; কিন্তু স্বাধীনতার অর্থ অনুদিত হতে পারে না; জনমানুষের জীবনে। মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ভারত সাহায্য করায়; আর তারা আওয়ামী লীগের ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সমর্থক হয়ে দাঁড়ালে; আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভারতভুক্তির চেতনার মতো করে চর্চা করে। হনন-শোষণ-লুণ্ঠন-বৈষম্যে তারা বৃটিশ ও পাকিস্তানিদের মতোই খুনে শাসক হয়ে ওঠে। গত দেড় দশকের আওয়ামী লীগ শাসন বাংলাদেশের ইতিহাসে নিকৃষ্টতম শাসন হিসেবে চিহ্নিত হয় জনমানুষের কাছে। যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনমানুষ বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে সংগ্রাম শুরু করে; সেই বৈষম্য প্রকট রুপ পেলে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে; প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা; যা ভারতভুক্তির চেতনায় লীন। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছাত্রজনতাহত্যার সমার্থক হিসেবে প্রমাণিত হয়। বৃটিশ খুনে পুলিশ, পাকিস্তানি খুনে সেনার মতোই নিষ্ঠুরভাবে তরুণদের হত্যা করে আওয়ামী লীগের খুনে বাহিনী।

জুলাই জেন জি বিপ্লবে পরাজিত স্বৈরশাসক হাসিনার ভারতে পালিয়ে গেলে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পায়। হাসিনার পতনে ভারতভুক্তির কালোছায়া সরে গিয়ে নিখাদ সার্বভৌমত্বের স্বাদ পায় এদেশের প্রতিটি মানুষ। কিন্তু ভারত এই পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা; তারা অসৌজন্যমূলক মিডিয়া প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিভিন্ন রকম অশালীন তকমা দিতে থাকে। আওয়ামী লীগের  ফ্যাসিজমের দোসরেরা ভারতীয় প্রোপাগান্ডায় রসদ জুটাতে থাকে আবারো ক্ষমতায় ফিরে আসার দুরাশায়।

ছাত্রগণহত্যায় সমর্থন ও উস্কানিদাতা আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা শেখ হাসিনা ও তার খুনে বাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কে "একটি শব্দ" উচ্চারণ না করে তারা দেড় দশকের বহু ব্যবহৃত কৌশলে আওয়ামী লীগ দলীয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার সাইবার জিহাদ অব্যাহত রাখে। পাকিস্তানের কাছে সার্বভৌমত্ব জমা দিয়ে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানের দালাল, ১৯৪৭ সালের বৃটিশের দালালের মতো সেও যে ২০২৪ সালে  ভারতের দালাল রুপে জনধিকৃত ঊনমানুষ হিসেবে বিরাজ করছে; এটা সে বুঝতে চাইছে না কিছুতেই।

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সার্বভৌমত্ব সচেতন জনগোষ্ঠীর বসবাস বাংলাদেশে। কারণ প্রাচীনকাল থেকেই এটি মেহনতী মানুষের সমৃদ্ধ এক জনপদ। এ হচ্ছে গানের দেশ ও কবিতার দেশ। দার্শনিকতা ও আধ্যাত্মিকতার পালনভূমি। বৃটিশের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনে এই দেশটির অসাম্প্রদায়িক রুপ ফুটে ওঠে। যেখানে মানুষের পরিচয় হিন্দু-মুসলমান নয়; কৃষক-কারিগর ও মেহনতি মানুষ। এরা ১৯৪৭ এর স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দুর্মর লড়াই করেছে এই একই মানুষ। এরা সেই মানুষ; যাদের ছোটখাট দেখায়; কিন্তু ভেতরে বসবাস করে ঐশ্বরিক ক্ষমতা। ২০২৪ সালে ভারত সমর্থিত হাসিনার উপনিবেশ বিরোধী দ্রোহে তাই এরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে এসে দাঁড়ায়। বাংলাদেশকে ভারতভুক্তিমুক্ত করে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বাদ উদযাপন করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে যারা ইজম টিজম করতে শেখে, সুযোগ পেলেই দেশ লুন্ঠন করে ঔপনিবেশিক প্রভু বৃটেনে গিয়ে সেকেন্ড হোম করে, ঔপনিবেশিক প্রভু ভারতে পালিয়ে যায় চৌর্য পর্যটনে, একদা ঔপনিবেশিক প্রভু পাকিস্তান ভালো ছিলো বলে তবক দেয়া পান খায়। কিন্তু কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের কাছে সোনার চেয়ে খাঁটি এই বাংলাদেশের মাটি। এই মাটিতে সোনা ফলিয়ে সে মাথাপিছু আয়কে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উজ্জ্বল করে তোলে, বিদেশের মাটিতে শ্রম দিয়ে রেমিটেন্স উপার্জন করে অর্থনীতির মিরাকল ঘটায় বাংলাদেশে। পাল-সেন-সুলতানি-মুঘল-নবাবী আমলের সম্পন্ন কৃষক কারিগর বাংলাদেশের পরিশ্রমী ডিএনএ-এর আত্মশক্তির জায়গা। তারা বৃটিশ-পাকিস্তান কিংবা ভারতীয় উপনিবেশের দালালি করে নব্য জমিদারির গল্প করাকে অশ্রাব্য মনে করে। দালালের শরীরের রেশমীবস্ত্র-মুখে ললিত বয়ান-নতুন আভিজাত্যের ফাপা অহংকারকে ঘৃণা করে। যে দেশমাতৃকাকে অন্যদেশের দাসীবাঁদী করে রাখতে চায়; তার চেয়ে হীনমানুষ আর কে হতে পারে!

 

৩৮ পঠিত ... ৮ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top