শীত আসার পর থেকে দেশের মানুষের এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গোসল এড়িয়ে চলার এই বিশেষ প্রবণতায় আক্রন্ত ছেলে বুড়ো সবাই। শীতে গোসলের সাথে মানুষের এই দূরত্ব এই বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য। দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মানুষের গোসলের খবর পাওয়া যায় না।
অনলাইনে একটি প্রচলিত রসিকতা দেখি আমরা: শীতকালে ৯৮% মানুষ শাহবাগী হয়ে যায়, আর বাকি ২% এর বাসায় গিজার থাকে। এটাকে ভিত্তি করেই ছাত্রশিবিরের বিজ্ঞান মনস্ক শাখা বিষয়টিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং সিদ্ধান্তে আসে যে, এই গোসল-আতঙ্ক দূর করার একমাত্র সমাধান গিজার।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির গোসল সংক্রান্ত একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে। সেখানে ‘শাহবাগী গোসল কর’ নামে একটি প্রদর্শনীও ছিল। জানা গেছে, শাহবাগীদের উদ্দেশ্যে গোসলের আহবান জানিয়ে জনসার্থে তারা জাতীয় জাদুঘরে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সেখানে শাহবাগীদের গোসলের আহবান জানানোর পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থান নিয়েও কিছু প্রদর্শনী ছিল।
ছাত্রশিবিরের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা জানান, অনেকের বাসায় গিজার নেই। এর ফলে শীতকালে মানুষ পানির কাছে ঘেঁষতেই চায় না। কেউ শরীরের তেল মালিশ করছে না, কেউ রোদে বসে গল্প করছে না। এমন চলতে থাকলে মানুষ ধীরে ধীরে নাগা সন্ন্যাসীতে পরিণত হবে। আমাদের পূর্বপুরুষরা শীতের দুপুরে গোসল সেরে শরীরে তেল মেখে রোদ পোহাত। এখন এই ঐতিহ্যই বিলুপ্ত হতে বসেছে।
‘গিজারে ফিরুক গোসলের ঐতিহ্য’ স্লোগানে ছাত্রশিবিরের শীতব্যাপি এক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে জানা গেছে। শীতকালীন গোসল সংকট থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্য ছাত্রশিবির দেশব্যাপী গিজার বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এবার আমরা শুধু চাদর বিতরণে সীমাবদ্ধ থাকছি না। প্রতিটি পরিবারকে একটি করে গিজার দেওয়ার জন্য আমরা বিদেশি দাতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। একথা জানিয়ে শীত উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা হয়তো গিজার ব্যবহার করতেন না, কিন্তু তাদের গরম পানির ব্যবস্থা ছিল। আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই।
গিজার বিতরণের পাশাপাশি তারা একটি দেশব্যাপী শীত উদযাপন উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনাও করেছে। এতে থাকবে ইসলামিক কনসার্ট, দিনব্যাপী রোদ পোহানো সেশন, আর রাতে আগুন জ্বালিয়ে ওম উপভোগের ব্যবস্থা। মানুষ এখন শীতকে উদযাপন না করে ভয় পায়। রুম হিটারে নিজেদের বন্দি করে রাখে। কিন্তু আমরা চাই শীতকে ঘিরে যে ঐতিহ্য ছিল, সেটি আবার জীবন্ত হোক।
ছাত্রশিবিরের এই উদ্যোগ ইতিমধ্যেই ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। কিছু মানুষ এটিকে সাধুবাদ জানালেও, কেউ কেউ বলছেন, শীতকালে গোসল না করাটা বাঙালির অধিকার। গিজার দিয়ে সেটা কেড়ে নেওয়া হবে না তো?
এদিকে এক হতভাগা ছাত্রশিবির নেতা বলেন, আমিও গোসল করি না ভাই আমি কি শাহবাগী? আমার সাথী ভাইদেরকে বলতেও পারছি না যে, আমাকে একটা গিজার দেন।