মানুষের কতো রকমের নেশা থাকে। কারও থাকে মদের নেশা, কারও বা গাঁজার নেশা, কারও থাকে জুয়ার নেশা। পড়ালেখার নেশাও কারও কারও থাকে। তবে বিশিষ্ট সহ-সভাপতি আফসানের মতো এতো পড়ালেখার নেশা কারও থাকে না।
আফসানের বয়স এখন ৬০ বছর। তিনি থাকেন একটা রিহ্যাব সেন্টারে। সেখানেও করেন পড়ালেখা। রিহ্যাব সেন্টারে সমমনা আরও বেশ কয়েকজনকে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন একটা আনঅফিশিয়্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে করেছেন একটা রাজনৈতিক দলও। সেই রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সহ-সভাপতি পদে আছেন তিনি।
রাফসানের এই নেশা শুরু হয় রাফসানের বয়স যখন ১৮ বছর তখন। ঢাকায় এসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রথম বর্ষে থাকতেই তিনি একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সাথে যোগ দেন। শুরুর দিকে কর্মী থাকলেও ধীরে ধীরে হলের সহ-সভাপতি হন তিনি। এরপর তিনি হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতিও।
মূলত স্নাতক চতুর্থ বর্ষে থাকাকালীন তিনি নিজের ভেতরে পড়ালেখার নেশা আবিষ্কার করেন। এই পড়ালেখার নেশাতেই চতুর্থ বর্ষে বাড়তি আরও চার বছরও থেকে যান তিনি। কখনও পরীক্ষা দেননি কখনও বা পরীক্ষা দিলেও ফেল করেছেন ইচ্ছে করে। অষ্টম বর্ষে থাকাকালীনও তিনি সম্মানসূচক সহ-সভাপতি পদে ছিলেন।
কেন পরীক্ষা দেন না কিংবা কেন ফেল করেন? জানতে চাইলে সোজাসাপ্টা উত্তর আফসানের। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা দিলে তো পড়ালেখা শেষ। তাই আর পরীক্ষা দেই না। দিলেও ফেল করি। পড়ালেখা ছাড়া থাকতে আমার একদমই ভালো লাগে না।‘
আট বছরে স্নাতক শেষ করার পর একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্নিং কোর্সে ভর্তি হন তিনি। একসময় এই কোর্সও শেষ হয় তার। পড়ালেখার নেশায় ভর্তি হন ইভিনিং কোর্সেও। ততদিনে আফসানের ছেলেও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকে ভর্তি হয়। সময় গড়ায়। আফসান ইভিনিং কোর্সের ফাইনাল সেমিস্টারে ফেল করতে করতে থেকে যান আরও ৮ বছর। ততদিনে আফসানের বয়স ৫৫। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং কোর্সে পড়েন। তিন সন্তান ও ৪ নাতি-নাতনী ও সম্মানসূচক সহ-সভাপতি পদ নিয়েই ভালোই যাচ্ছিলো আফসানের জীবন।
কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় আফসানের নাতি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর। পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে অবসর নেয়ার জন্য চাপ আসে ফ্যামিলি থেকে। কিন্তু পড়ালেখা ছাড়েন না সহ-সভাপতি আফসান। পড়ালেখার নেশা ও সহ-সভাপতি পদের সাথেই বাকি জীবন কাটাতে চান তিনি।
অনেক চেষ্টার পরও আফসানকে পড়ালেখার নেশা থেকে ফেরাতে না পেরে পরিবার চিন্তা করে তাকে রিহ্যাবে পাঠাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। এক কাকডাকা ভোরে পরিবারের লোকজন আফসানকে চেপে ধরে রিহ্যাবে পাঠিয়ে দেয়।
কিন্তু পড়ালেখার নেশা যার রক্তে তাকেও আর এত সহজে পড়ালেখা থেকে বের করা যায় না! রিহ্যাবে আফসানের মতো আরও অনেক-সভাপতিকে দেখা যায়। কেউ আফসানের বয়সী, কেউবা আফসানের চেয়ে বেশি বয়সী, কেউবা আফসানের চেয়ে কম বয়সী। কেউ কালো, কেউ সাদা, কেউ লম্বা, কেউ খাটো, কেউ মোটা, কেউ চিকন। কিন্তু সবার মাঝে একটাই মিল। তাদের সবার পড়ালেখার নেশা ও সবাই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সহ-সভাপতি ছিলেন।
আফসান ও অন্যান্য সহ-সভাপতিরা নিজেদের পড়ালেখার নেশা ধরে রাখতে চান। এই লক্ষ্যে তারা ওই রিহ্যাবে প্রতিষ্ঠা করেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর সবাই নিয়ে নেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক সহ-সভাপতি পদ।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন