অনেক জ্বর হলে মুঠোফোনের কল রিসিভ করা উচিত নয়। সেই সঙ্গে স্ত্রীর সঙ্গেও বেশি কথা বলা উচিত নয়। আমার একবার উথালপাতাল জ্বর হলো। তখন আমি নিম্নলিখিত কয়েকটি কুকীর্তির জন্য দায়ী ছিলাম--
ব্যাংক থেকে সুকণ্ঠী কেউ ফোন করেছেন।
‘হ্যালো, মিস্টার ইমতিয়াজ বলছেন?’
‘বলছি তো।’
‘স্যার, আমাদের সঙ্গে আপনার যে ক্রেডিট কার্ডটি আছে, সেটির মিনিমাম পেমেন্ট ডিউ হয়ে আছে।’
‘কী বললেন, আমার ক্রেডিট কার্ড লেমন ডিউ হয়ে গেছে?’
‘এক্সকিউজ মি স্যার, লেমন ডিউ নয়, পেমেন্ট ডিউ।’
‘ওহ। সেটাও তো হওয়ার কথা নয়।...ও আচ্ছা। মনে পড়েছে, গত মাসটা তো আমি দেশের বাইরে ছিলাম। আমি কেমন করে দেব?’
‘ও আচ্ছা, স্যার। তাহলে আজকের মধ্যে দিয়ে দিন আপনার নিকটস্থ কোনো বুথে?’
‘আপনি কাছাকাছি না বলে নিকটস্থ বলছেন কেন? কাছাকাছি কত চমত্কার একটা শব্দ। এই যেমন ধরেন, আপনি আপনার অফিসে। আমি আমার বাড়িতে লেপের তলায়। তার পরও এই মুঠোফোনের কারণে কত কাছাকাছি! দূরত্ব যতই হোক, কাছে থাকুন।’
‘ও মাই গড। স্যার, আপনি ড্রাংক! শিট!’
‘এক অর্থে ড্রাংক বলতেই পারেন। একটু আগেই ঢকঢক করে মিক্সড ফ্রুট জুস ড্রিংক করলাম।’
আর জবাব পাওয়া গেল না। সুকণ্ঠী ফোন রেখে দিয়েছেন।
২.
জ্বরের বিরুদ্ধে দুর্বার সংগ্রাম গড়ে তুলে বিকেলের দিকে আমার সর্বজয়া ও প্রাণাধিক প্রিয় স্ত্রীর বিজয় যখন আসন্ন, তখন সে আমাকে খুব মোলায়েম গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘এখন কেমন লাগছে, বলো তো?’
‘একদম ফ্রেশ। একটু জ্বর নাই।’
‘হ্যাঁ, জ্বর নেমে গেছে। তোমাকে একটু চা করে দেব?’
‘চা নয়, কফি দাও।’
‘কী কফি খেতে চাও?’
‘ক্যাপুচিনো।’
‘তোমার জন্য বাড়িতে বসে আমি ক্যাপুচিনো কেমন করে বানাব? আচ্ছা, দাঁড়াও দেখি।...আচ্ছা, সেদিন বাসার উল্টো দিকে কফি শপে যে কফি খেয়েছিলাম, ওই রকম হলেই হবে?’
‘উঁহু, ওদের কফিটা বিচ্ছিরি। অজো ক্যাফের কফিটা মনে আছে? ওই রকম করে বানাও।’
‘অজো ক্যাফে? তুমি-আমি তো কোনো দিন অজো ক্যাফেতে গিয়ে কফি খাইনি।’
‘খাইনি?’
‘না, খাইনি। কার সঙ্গে গিয়েছিলে, বলো।’
‘কার সঙ্গে যে গিয়েছিলাম...মনে পড়ছে না তো। একা একাই গিয়েছিলাম হয়তো।’
(এই জায়গায় বুদ্ধি করে যেকোনো ছেলে বন্ধুর নাম বলে দিলেই ঝামেলা চুকে যেত। কিন্তু জ্বর তো। বিচার-বুদ্ধি সব ঘোলা ঘোলা)
‘তুমি একা একা অজো ক্যাফেতে গিয়া কফি খেয়ে আসছ, সেটা আমারে বিশ্বাস করতে বলো?’
‘না মানে...।’
‘সত্যি করে বলো। এই আমার মাথায় হাত রেখে বলো। মিথ্যা কথা বললে আমি সঙ্গে সঙ্গে মারা যাব। বলো!’
‘তাহলে মাথা থেকে হাত সরিয়ে তারপর বলি? তুমি হুট করে মরে গেলে আমার কী হবে?’
‘ঢং করবা না। বলো, কারে নিয়া গেসিলা?’
‘আমার এক বন্ধুরে নিয়া গেসিলাম।’
‘কোন বন্ধুরে নিয়া গেসিলা?’
‘না মানে, বন্ধুর বউ।’
‘বন্ধুর বউ, না? কোন বন্ধুর বউ? তোমারে এখনই সব কথা খুলে বলতে হবে। বল, আর কী কী করস? হাত ধরস? একসঙ্গে রিকশার হুড তুলে ঘুরস। খুব ফুর্তি, না?’
‘হাত ধরতে যাব কেন? কফি খেতে তো হাত ধরা লাগে না। আর আমার তো গাড়ি আছে। আমার রিকশা ভাল্লাগে না।’
‘ভণ্ডামি করার জায়গা পাও না। তোমারে চিনি না মনে করস? তুমি থাকো তোমার জ্বর নিয়া। আমি চললাম...’
‘আরে শোনো শোনো, ওইটা অনেক দিন আগের কথা। পাস্ট টেন্স। এখন আর আমি তার সঙ্গে কফি খাইতে যাই না।’
‘যাও না মানে? ফেসবুকে দেখি সে তোমার ছবিতে লাইক দেয়, তুমি তারটায় দাও। তুমি তারে এক্ষুনি ব্লক করবা।’
‘আমি অলরেডি ব্লক করে দিসি।’
‘তুমি আবার তারে কখন ব্লক মারলা? তুমি করস, না সে করসে?’
‘না মানে, আমি ব্লক করতে গিয়া দেখি, সে আগেই ব্লক করে রাখসে...।’
পাঠকের মন্তব্য ( ১ )
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন