দ্বিতীয়বার মাংসের টুকরা প্লেটে তুলে দিতে দিতে তানিয়া জিজ্ঞেস করলো, 'তরকারি কেমন হয়েছে? সব ঠিকঠাক?'
রিফাত এক মুহূর্ত চিন্তা করলো। আজকে তার জন্মদিন। এই উপলক্ষ্যে তানিয়া বিশাল আয়োজন করেছে। সমস্যা হচ্ছে, কোনো তরকারি খেয়েই তৃপ্তি পাওয়া যাচ্ছে না। হয় লবণ অনেক বেশি নাহয় একেবারেই দেয়নি। গরুর মাংসটাও সিদ্ধ হয়নি তেমন৷ কিন্তু এসব এখন মুখ ফুটে বলা মানে গৃহযুদ্ধ বাঁধানো। অসময়ে সে যুদ্ধ বাঁধাতে চায় না৷
হাসি হাসি মুখ করে বললো, 'যা রাঁধছো না! একদম মাস্টার শেফ!'
'তুমি সবসময় এতো মিথ্যা কথা বলো কেন রিফাত? তোমার কি ধারণা আমি সমালোচনা নিতে পারি না? যদি না-ই জানতে পারি যে ভুলগুলো কোথায়, তাহলে ঠিক করবো কিভাবে?'
'সত্যি সত্যি মজা হলেও তোমাকে খুশি করার জন্য বানিয়ে মিথ্যা কথা বলতে হবে?'
'থাক আর কিছুই বলতে হবে না। খাও তুমি, আমার সাথে কথা বলবা না।'
রিফাত বুঝতে পারছে যে তার সামনে বিশাল একটা জাল ফেলা হয়েছে। সে না চাইলেও এই জালে এখন তাকে ঝাঁপ দিতেই হবে। কথা না বাড়িয়ে মিনমিন করে বললো, 'লবণ একটু কম-বেশি হইছে বোধহয়!'
'লবণ তো ইচ্ছা করেই কম দিলাম। বেশি লবণ খাইলে প্রেশার বাড়ে জানো না? ওহ! ভুলেই গেছিলাম তুমি সাইন্সের স্টুডেন্ট না। আর্টসের ছাত্র হইলে এমনই হবে।'
'তাহলে আরেকটাতে লবণ বেশি দিলা যে?'
তানিয়া ছ্যাৎ করে উঠলো- 'তুমি লবণের কী বুঝো? একটা পরিমিত পরিমাণ লবণ তো খাইতে হবে। তোমাদের এলাকার রান্না কেমন জানা আছে। আর ভালো না লাগলে বুয়া রাখো, সকাল বিকাল বুয়ার রান্না খাবা। বুয়া রাখার টাকাও তো নাই৷ তাহলে এক কাজ করো। নিজে রান্না করে খাও, আমাকেও খাওয়াও। সেটাও...'
'আরে থামো থামো! আমি দুষ্টুমি করলাম। আসলে কিন্তু ওন্ডারফুল হয়েছে। তোমাকে রান্না কে শিখিয়েছে?'
তানিয়া চিৎকার করে উঠলো- 'তুমি কি তোষামোদ ছাড়া কিছুই বুঝো না? বিয়ের আগে ৯০টা মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করে এখন বউয়ের সাথে ফ্লার্ট করো... ইডিয়ট কোথাকার..!'
'চেঁচিয়ো না প্লিজ তানিয়া। খুব মাথা ব্যাথা করছে। এখন সত্যি কথা বলছি। মাংসটা একটু কম সেদ্ধ হয়েছে। আর মসলা...'
'হোয়াট ডু য়ু মিন? জাস্ট রাবিশ... মাংস কি সেদ্ধ করতে করতে গলিয়ে জুস বানাবো? মাংস এভাবেই রান্না করে। বিশ্বাস না করলে য়ুটিউব দেখো। ওরা যতক্ষণ বলছে ততক্ষণই রাখলাম। আর মসলা... মসলা উপমহাদেশের ঐতিহ্য সেটা জানো?” তানিয়ার গলা আরও রাগী আর গম্ভীর শোনালো। কেঁদে ফেলবে নাকি?
রিফাত বুঝতে পারছে না কী করবে। বেশ কিছুক্ষণ খাওয়া বন্ধ করে ডাইনিং টেবিলে নির্বিকারভাবে বসে রইলো। অন্তত না খাওয়ার জন্য একটা এক্সকিউজ তো পাওয়া গেছে!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন