ব্রজেন আর ভূপতি। শ্যালক আর ভগ্নীপতি। যাকে বলে হরিহর আত্মা, চলে অবিরাম কথাবার্তা। জমজমাট প্রীতি- সবসময়ই ভাগ করে খায় আপেল আর ন্যাশপাতি।
এই দেখুন না কেন্দ্রের সরকারের নানান পাঁচশালা কিন্তু ভূপতি সরকারের একমাত্র ঐ সবেধন নীলমণি শালা ব্রজেন্দ্রনাথ রায়।
ভূপতিবাবু ব্রজেনবাবুর পেছনে লাগবেন বলে প্রায়ই প্যারডি গান ধরেন। ‘শালা আমার শালা ওগো, শালায় ভুবন ভরা/শালার জ্বালায় ঝালাপাল হলাম পাড়াছাড়া।‘ ব্রজেনবাবুও কম যান না। তিনিও উল্টে প্যারডি শোনান, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো ভগ্নীপতি/তুমি ঠকাও পাড়া পড়শীর অতি শয়তানি মতি।‘ এই ভাবে কবির লড়াই, চাপান উতোর, বিদ্রুপব্যাঙ্গ, তামাশারঙ্গ, আড্ডার মেজাজ আর চুটকীর আওয়াজে শালা ভগ্নীপতির দিনগুলি তরতর করে কেটে যেতে থাকে।
এই তো সেদিন সকাল বেলা ভগ্নীপতি ভূদেববাবুকে তার শ্যালক ব্রজেনবাবু ফোনে ডাক দিলেন। ‘কি করছো হে ভূপতি চলে এসো। সকালের চা-টা খেয়ে যাও।‘ ভূপতি শুধোন, ‘শুধুই চা সঙ্গে টা নেই?’ ব্রজেনবাবু আশ্বাস দেন, ‘নিশ্চয়ই, টা তো থাকবেই।‘
একি পাড়ায় বাসিন্দে ভূপতিবাবু স্যাট করে ব্রজেনবাবুর বৈঠকখানায় গ্যাঁট হয়ে বসেন। ব্রজেন্দ্র বিলাসিনী সুহাসিনী হাসিমুখে দুজনের হাতে দু-কাপ চা ধরিয়ে দিলেন। ডিশে মাত্র একটি করে ক্রিম-ক্র্যাকার বিস্কুট। তাই দেখে তো ভূপতিবাবু বোম-ক্র্যাকারের মত ফেটে পড়লেন। ‘ব্রজেন এই তোমার টায়ের ছিরি, ছ্যাহ ছ্যাহ।‘ ব্রজেনবাবু বলে ওঠেন, ‘আচ্ছা অত ব্যাস্ত হচ্ছো কেন? তুমি যখন বিদেয় হবে তখন তোমায় ‘টা-টা’ করে দেব। তাহলেই ডবল টা পাওয়া হবে তো?’ ভূপতি গুম হয়ে যান। কিছুক্ষন পর বলে ওঠেন, ‘ব্রজেন তুমি বিস্কুট ভেঙ্গে খাচ্ছ যে, ভাঙ্গা বিস্কুট খুব মারাত্মক জানো তো?’ ব্রজেনবাবু বলে ওঠেন, ‘কেন কেন, ভাঙ্গা বিস্কুট খারাপ কেন?’ ‘বা রে, বিস্কুট ভাঙ্গলে কি হয় – বিষ আর কূট, দুটোই মারাত্মক নয় কি?’ ভূপতি জানান। ‘বাহ এটা তুমি ভালোই বলেছ ভূপতি,’ ব্রজেন জানান। বলেন, ‘তা সেদিন মাছের বাজারে দেখলাম তুমি একমনে চাঁদা তুলছো। তুমিও শেষকালে তোলাবাজ হয়ে গেলে ভূপতি?’ ভূপতির কন্ঠে বিস্ময়। ‘হ্যাঁ স্পষ্ট দেখলাম পারশে, ট্যাংরা, ভেটকি আর চাঁদা মাছের মধ্যে তুমি চাঁদাই তুলছিলে।‘ ব্রজেনবাবু জানান। ‘বাহ খাসা বলেছ ব্রজেন। তোমার মতন পাঁঠার যেমন বুদ্ধি ভাবাই যায় না।‘ ব্রজেনবাবু এবার সত্যি সত্যি রেগে ওঠেন, ‘আমি পাঁঠা, তুমি কি বলতে চাইছ ভূপতি !’ ভূপতি উত্তর করেন, ‘হ্যাঁ, পাঁঠাই তো। সেদিন বাজারে দেখলাম বাংসের লাইনে খুব ভিড়। কেউ নেবে খাসির মাংস, কেউ বা পাঁঠা। দোকানদার খুব তড়পে যাচ্ছে “যাঁরা খাসি তারা বাঁদিকে দাঁড়ান আর যাঁরা পাঁঠা তাঁরা ডানদিকে যান।” দেখলাম, “আমি পাঁঠা, আমি পাঁঠা” বলে তুমি ডানদিকেই লাইন লাগালে।‘
‘বাঃ বাঃ, বেশ বলেছ ভূপতি।‘ দুজনেই ওঠে দাঁড়িয়ে গলা জড়াজড়ি করে হাসতে থাকেন। সুহাসিনী আরও দু’কাপ চা নিয়ে ঢোকেন। সঙ্গে রেকাবিতে তাঁর শ্রীহস্তে তৈরী করা গরম গরম কড়াইশুঁটির কচুরি আর মোলায়েম মালপোয়া। চাপান উতোর ভুলে শ্যালক ভগ্নীপতি ডুবে যান চা পানে। সঙ্গে টা-তো বটেই।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন