বেতন বাড়ানোর দাবি যেভাবে হিতে বিপরীত ঘটাতে পারে

৪০৪৩ পঠিত ... ১৯:৫২, মে ০৭, ২০১৮

সরকার তখন মাত্রই বেতন বাড়িয়েছে। সরকারি লোকজন খুশি। কারণ, বেতন বেড়েছে কেবল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। পত্রিকায় খবরটা পড়ে বসের কাছে হাজির হলো আমাদের জুলমত খোন্দকার।

অলংকরণ: সালমান সাকিব শাহরিয়ার

—স্যার, আমারও বেতন বাড়াতে হবে।

—কেন বাড়াতে হবে? আর না বাড়ালে?

—আমার পেছনে কিন্তু তিনটা কোম্পানি লেগে আছে, জানালো জুলমত।

বস—রিয়েলি? তা কোম্পানিগুলো কে কে?

—স্যার, গ্যাস কোম্পানি, টেলিফোন কোম্পানি ও বিদ্যুৎ কোম্পানি।

গল্পটা মনে হয় খুব নীরস হয়ে গেল। তাহলে বরং একটা সরস গল্প বলি। গল্পটা এক লাইনের। ‘বেতন হলো মেয়েদের পিরিয়ডের মতো। সারা মাস অপেক্ষা করতে হয়, কিন্তু তিন দিনেই শেষ হয়ে যায়।’

বেতন নিয়ে কিন্তু অসংখ্য শিক্ষামূলক গল্পও আছে। বেতন বাড়লে ভালো, কিন্তু বেতন বাড়ানোর দাবি করে নিজের চাকরিজীবন হুমকির মধ্যে ফেলা কোনো কাজের কথা না। বেতন বাড়ানোর দাবি খুব ভেবেচিন্তে না করলে বিপদের আশঙ্কাই বেশি। আর কেন বেতন বাড়ানোর দাবি করব, সেটিও ঠিক করা প্রয়োজন। তা না হলে হিতে বিপরীতও হয়ে যেতে পারে। কিসমত মিয়ার অবস্থাটাই দেখুন।

কিসমত মিয়া অফিসে পৌঁছেই চলে গেল বসের কাছে,

—স্যার, আমার বেতন বাড়ান।

বস—কেন বেতন বাড়াবো?

—স্যার, আমি বিয়ে করেছি।

বস খুব গম্ভীরভাবে বলল, নিয়ম অনুযায়ী অফিসের বাইরের কোনো দুর্ঘটনার জন্য অফিস দায়ী নন।

আজকাল অবশ্য বসের কাছে যাওয়া এত সহজ নয়। যেকোনো সমস্যার জন্য যেতে হবে মানবসম্পদ বিভাগে, যাকে সংক্ষেপে বলা হয় এইচআর। করিম গেল এইচআর ম্যানেজারের কাছে। বেতন বাড়ানোর আবেদন নিয়ে। দরখাস্ত রাখলেন এইচআর ম্যানেজার। তারপর একদিন ডাকলেন। করিমকে অবাক করে দিয়ে শুরুতেই বললেন,

—আপনি তো এক দিনও কাজ করেননি। তাহলে বেতন বাড়বে কী করে; বরং অর্থ অফিস ফেরত চাইতে পারে।

করিম বিস্মিত।

ব্যাখ্যা দিতে শুরু করলেন এইচআর ম্যানেজার।

ম্যানেজার—বছরে কয় দিন?

করিম—৩৬৫ দিন আর চার বছরে একবার ৩৬৬ দিন।

ম্যানেজার—এক দিনে কয় ঘণ্টা?

করিম—২৪ ঘণ্টা?

ম্যানেজার—আপনি দিনে কয় ঘণ্টা কাজ করেন?

করিম—৯টা থেকে ৫টা, দিনে আট ঘণ্টা।

ম্যানেজার—তার মানে দিনের কতটা অংশ আপনি কাজ করেন?

খানিকক্ষণ অঙ্ক করে করিম বলল—এক-তৃতীয়াংশ সময়।

ম্যানেজার—গুড। তাহলে ৩৬৬ দিনের এক-তৃতীয়াংশ কত হলো?

করিম—১২২ দিন।

ম্যানেজার—সপ্তাহে দুই দিন ছুটি। ছুটির দিনে কি আসেন?

করিম—না, স্যার।

ম্যানেজার—তার মানে বছরে ৫২টি শুক্রবার ও ৫২ শনিবার আসছেন না অফিসে। মোট হলো ১০৪ দিন।

করিম—জি, আসি না।

ম্যানেজার—১২২ দিন থেকে তাহলে ১০৪ দিন বাদ দিলে কয় দিন থাকে?

করিম—১৮ দিন।

ম্যানেজার—আপনি বছরে ১৪ দিন মেডিকেল ছুটি পান এবং আপনি নেন। তাহলে এই ১৪ দিন বাদ দেন। কত দিন থাকল?

করিম—৪ দিন।

ম্যানেজার—আপনি পয়লা বৈশাখে কাজে আসেন?

করিম—না, স্যার।

ম্যানেজার—স্বাধীনতা দিবসে আসেন?

করিম—না, স্যার।

ম্যানেজার—২১ ফেব্রুয়ারি আসেন?

করিম—না, স্যার।

ম্যানেজার—১৬ ডিসেম্বর আসেন?

করিম—না, স্যার।

ম্যানেজার—তাহলে, কদিন থাকল আর?

করিম—খাবি খেতে খেতে বলল, এক দিনও না, স্যার।

ম্যানেজার—তাহলে আপনি কীভাবে বেতন বাড়ানোর জন্য দরখাস্ত দিলেন?

করিম—এখন তো দেখা যাচ্ছে, উল্টো আমাকে বেতন ফেরত দিতে হবে।

এই গল্পের একটা শিক্ষা আছে, আর তা হলো, কখনো চাকরিসংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে মানবসম্পদ বিভাগের কাছে যাবেন না।

অলংকরণ: সালমান সাকিব শাহরিয়ার

বেতন নিয়ে সবচেয়ে মারাত্মক গল্পটা এখনো বলা হয়নি। এ জন্য একটু সাবধান বাণী দেওয়া প্রয়োজন। ঘটনাটাই বলি না-হয়।

শেষ পর্যন্ত তিনিও বেতন-ভাতা বাড়ানোর আবেদন করলেন। বেতন-ভাতা বাড়ানোর কারণ হিসেবে লম্বা একটা দরখাস্ত করলেন। সেখানে একটি একটি করে কারণ ব্যাখ্যা করলেন তিনি।

১. আমি কায়িক পরিশ্রম করি

২. আমাকে অনেক গভীরে গিয়ে কাজ করতে হয়

৩. শুরুতেই আমাকে মাথা দিয়ে কাজ করতে হয়, তারপর পুরো শরীর

৪. আমার কোনো সাপ্তাহিক বা সরকারি ছুটি নেই

৫. আমাকে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে কাজ করতে হয়

৬. আমাকে কোনো ওভারটাইম দেওয়া হয় না

৭. কাজের জায়গায় ভেন্টিলেশন বলতে কিছু নেই, দমবন্ধ অবস্থা

৮. তীব্র গরমের মধ্যে কাজ করতে হয়, এবং

৯. রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অফিসটির প্রশাসনিক বিভাগ অত্যন্ত সক্রিয়। আর তাই দ্রুতই বেতন-ভাতা দেওয়ার দরখাস্তের জবাব দেওয়া হলো।

প্রিয়…

আপনার অনুরোধ মূল্যায়ন করে প্রশাসন বিভাগ আপনার আবেদন বাতিল করেছে। কেন গ্রহণযোগ্য হয়নি, তার কারণও দেওয়া হলো—

১. আপনি টানা ৮ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন না

২. অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময় কাজ করেই আপনি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন

৩. আপনি সর্বদা আপনার কর্তৃপক্ষের আদেশ অনুসরণ করতে পারেন না

৪. আপনি সর্বদা আপনার জন্য নির্ধারিত স্থানে থাকেন না, অন্যত্রও চলে যান

৫. আপনি নিজ উদ্যোগী হয়ে কোনো কাজ করেন না। সর্বদা কাজ শুরু করার জন্য আপনাকে প্রণোদনা বা উদ্দীপনা দিতে হয়

৬. কাজ শেষ করার পর কর্মক্ষেত্র আপনি নোংরা করে রাখেন

৭. সর্বদা প্রয়োজনীয় সেফটি রেগুলেশন মানেন না, নির্ধারিত প্রতিরোধক পোশাক পরেন না

৮. ৬৫ বছর হওয়ার আগেই অবসরে চলে যান

৯. ডাবল শিফটে কাজ করতে পারেন না

১০. আপনি সর্বদা আপনার কর্মক্ষেত্রে যাওয়া-আসার মধ্যে থাকেন, সঙ্গে থাকে দুটো সন্দেহজনক ব্যাগ বা লাগেজ।

১১. কেবল তা-ই নয়, আপনি অনেক সময় আপনার জন্য নির্ধারিত পুরো কাজটি করতেও পারেন না।

এ কারণেই আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য হলো না।

ভালো কথা, আবেদনকারীর নামটা কিন্তু ভুলে গেছি।

৪০৪৩ পঠিত ... ১৯:৫২, মে ০৭, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top