সত্যি কথা বলার সময় এসেছে। একে পাঠকচক্র কনফেশন পোস্টও বলতে পারেন। ব্যাপারটা হলো..মানে, বুঝলেন..কীভাবে যে বলি...মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ হয়। গোসল করে বের হয়ে এসে ফেসবুকে ঢুকে পোস্ট দেখি, শাহবাগীরা গোসল করে না। গায়ে গন্ধ। এসব দেখে ইনসিকিউটিতে ভুগে আবার গোসলে যাই। হিসাব করে দেখলাম, দৈনিক গড়ে আটবার গোসল করা হয়। এই গোসলের সাথে খরচ হয় সাবান, শ্যাম্পু, বডি ওয়াশ ইত্যাদি। দৈনিক আটবারের ব্যাপারটা আপনার বিশ্বাস না করলেও চলবে, অন্তত একবার যে করি তা বিশ্বাস করুন।
হুমায়ূন আহমেদের একটা কম পরিচিত উপন্যাস আছে। ‘অন্ধকারের গান’। সেইখানের দাদী কারও সাথে দেখা হলেই বলেন, মর হারামজাদা। তাকে কেউ সালাম দিলে কিংবা মেহমান সাক্ষাৎ করতে এলেও একই কথা বলেন। আমিও এ ধরনের পোস্ট দেখলে 'মর হারামজাদা' বলা শুরু করেছি।
ভীষণ আরাম লাগে। কষ্ট যা, দৈনিক ২০০ বারের মতো মর হারামজাদা বলতে হয়।
পৃথিবীতে লেখার মতো অসংখ্য বিষয় আছে। তবু লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে যে সামান্য বিষয় নিয়ে লিখতে হচ্ছে, তা হলো গোসল। নারী হলেও একটা কথা ছিলো। গোসলের রগরগে বর্ণনা পড়তে সেক্সি কিংবা মোলায়েম লাগত। কিন্তু খসখসে ঢেংগা পুরুষ মানুষের স্নান কাহিনী পড়তে মানুষের বয়েই গেছে। তবে নারী পুরুষের আগেও আমার বড় পরিচয় শাহবাগী। গোসলের কাহিনী আজ আমাকে বলতেই হবে। মাঠে যখন নেমেছি, গোল না করে উঠছি না।
সাধারণত দুপুর একটার দিকে বাথরুমে ঢুকি। সে সময় গুনগুন করে 'আর যাবো না বেগুন তুলিতে..' গানটি গাই। চমৎকার গান। এর মধ্যেই গানটি আমার রিফ্লেক্সে পরিণত হয়েছে। দুপুর বারোটা পঞ্চাশ থেকে মনের অজান্তেই ঠোঁট দিয়ে বের হয়। গোসলে যাবার আগে পোষাক থাকে গুলিস্তানের ভ্যান থেকে কেনা প্রিয় নীল চাড্ডিটি।
আমার বাথরুমে একটি ডাভ সাবান আছে। সাবানটি বিদেশ থেকে এনেছে আমার বন্ধু কামরুজ্জামান। এই সাবানটি সাধারণত ব্যবহার করি না। জাস্ট ফর ওয়াচিং। সৌন্দর্য বর্ধন। এর পাশেই আছে কেয়া সাবান। এক সাবানে কাপড় কাচা, সে সাবানেই গোসল।
গোসল করতে আমার সময় লাগে ৩৬ মিনিট। প্রথম ১২ মিনিট শরীরের উপরের অংশ এবং পরবর্তী ১২ মিনিট নিচের অংশের জন্য ভাগ করা। বাকি ১২ মিনিটে শ্যাম্পু (আসলে শ্যাম্পুর বোতলে পানি) সহ অন্যান্য কাজকর্ম করি। অন্যান্য কাজকর্ম কী তা জানতে চেয়ে গভীরে যাবেন না। তবে তারপরও কৌতূহল থাকলে ইনবক্সে ডাকবেন (মেয়েদের অগ্রাধিকার)
গোসলের সময় আমি হিন্দি গান গাই। লায়লা ম্যা লায়লা কিংবা দিলবার দিলবার। বাংলা গানে তখন জোশ আসে না। মন খুব ভালো অথবা খুব খারাপ থাকলে নাচি।
দীর্ঘ ৩৬ মিনিট পর শেষ হয় আমার স্নান প্রক্রিয়া।
ধীরে সুস্থে বের হয়ে ফেসবুকে ঢুকে দেখি শাহবাগীরা গোসল করে না। মর হারামজাদা বলতে বলতে আমি আবার বাথরুমে ঢুকি। কাঁদতে কাঁদতে হাত পা ডলি। অতিরিক্ত ডলাডলির ফলে মাঝেমাঝে চামড়া ছিলে যায়। তখন কষ্টে নিজেকেই বলি, মর হারামজাদা।
আর ঠিক কতবার গোসলের পর আপনারা ক্ষান্ত হবেন, বলেন তো?
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এরপরও বিশ্বাস না করলে গোসল করার ভিডিও ভাইরাল হবে)
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন