ট্রাম্পের ভূমিধস বিজয় স্পষ্ট হয়ে উঠতেই জার জার ওবস্তান থেকে পুলকে দিশেহারা হয়ে পড়ে সহমত ভাই, শিবব্রত দাদা ও ললিতা আপা। অনেকদিন পর জিতবে এবার নৌকা গানটা গুনগুনিয়ে ওঠে মনের মাঝে। সেটা অনেকটা ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ের মতো শোনায় আজ। আফসোস লীগ আজ উচ্ছ্বাস লীগ হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরাজ করে। গাছে ট্রাম্প, গোঁফে তেল দিয়ে নিউইয়র্ক প্রবাসী সংস্কৃতি মামা গোঁফ কামড়ে বলেন, এই কে আছিস; চল ট্রাম্পকে একটু পুষ্পস্তবক অর্পণ করে আসি।
সংস্কৃতি খালা আপন মনে গাইতে থাকেন, ইশকুল খুইলাছেরে মওলা ইশকুল খুইলাছে।
নিখিল বঙ্গ প্রবাসী সমাজে প্রিয়া সাহা আজ আবার সেলিব্রেটি হয়ে উঠলেন। সবাই তাকে ধরেছে একটু ট্রাম্পের কাছে নিয়ে যেতে। প্রিয়া সাহা জয় শংকরের ছেলেকে ফোন করে বলে, ও দাদা ওরা খুব করে ধরেছে ট্রাম্প ঠাকুরকে একটু ফুল দিতে যাবে।
: এই মুহূর্তে এলন মাস্ক লেভেলের ডোনাররা ছাড়া আমাদের মতো ছোটো ডোনারদের সঙ্গে উনি কী দেখা দেবেন!
এদিকে দিল্লির লুটিয়েন্স প্যালেসে আজ ট্রাম্প পূজা। বিহঙ্গ পংকজ কলকাতা থেকে ইলিশ মাছ কিনে আইস বক্সে করে দিল্লি পর্যন্ত এনেছে। হলদিরামের হালুয়া নিয়ে এসেছে অপু দিদি। শামীম ওসমান একটা নতুন পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে; নেত্রীর বাসায় যাবার জন্য। লুটিয়েন্স প্যালেসে আজ ভালোমন্দ রান্নার দায়িত্ব পড়েছে হারুনের ভাতের হোটেলের ওপর; উনি তাকে রেসিপি শিখিয়ে দিচ্ছেন।
টাবু পঁই পঁই করে পুতুলকে বলে দিয়েছে, এত যে রান্না হচ্ছে, এসবের আপনি কিছুই খাবেন না। ছোলা ভেজানো হয়েছে; ওটা খেয়ে এক্সারসাইজে লেগে পড়ুন। মিশন রিক্লেইম ডোরম্যাটে আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।
বাংলাদেশে সহমত ভাই, শিবব্রত দাদা ও ললিতা আপা ট্রাম্পের ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে তাতে গাঁদা ফুলের মালা চড়িয়ে দিয়েছে। জরিনা-সখিনা-আল্পনা-কল্পনা পুজোর সাজে সেজে আরতি দিচ্ছে ট্রাম্পের ছবিতে। আবুল খায়ের, পরিতোষ ফেসবুকে এসে বিশিষ্ট জিও-পলিটিক্যাল এক্সপার্ট সেজে ওপিনিয়ন দিচ্ছে, ইউসুফ সরকারের মাথার ওপর থেকে এমেরিকার ছাতাটা সরে গেল। ছাতাটা এখন ডাইরেক্ট মোদির মাথায়; আর মোদির মাথা মানে আপার মাথা; আর আপার মাথা মানেই আমাদের মাথা। রোদ, ঝড় বৃষ্টিতে আপাকে চাই।
আজ এতিমখানায় বিশেষ খাবার পরিবেশিত হচ্ছে; প্রত্যেক এতিমকে ট্রাম্পের ছবি এমবুশ করা টিশার্ট দেওয়া হয়েছে।
বামঘন আফসোস প্রগতিশীল মামারা বলছেন, যে গতি সাম্যের কথা বলে তাই প্রগতি। মোদি ও ট্রাম্প আসলে কংগ্রেস ও ডেমোক্র্যাটদের হোয়াইট কলার পলিটিক্সের অবসান ঘটিয়ে ব্লু কলার পলিটিক্সের প্রচলন করেছেন। কাজেই তারা পোস্ট প্রোগ্রেসিভ নেতা। মনে রাখবেন, কট্টর হিন্দুত্ববাদ ও কট্টর খ্রিস্টিয় কিংবা জায়নবাদ হচ্ছে প্রগতিশীল রাজনীতি। মৌলবাদি শুধু ইসলামপন্থা।
জয় শংকরের ছেলে জয়কে ফোন করে, জয়দা আপনি কি ট্রাম্পকে ফুল দিতে যাবেন?
জয় উত্তর দেন, আমি ওয়েবিনার আর ভিডিও কলে ফুল দেই। আর এক্স হ্যান্ডেলে মেলানিয়াকে ফুল দিয়ে এসেছি। আমার সকল শুভেচ্ছা ডিজিটাল।
জয় শংকরের ছেলে প্রিয়া সাহাকে বলে, আপনি উচ্ছ্বাস লীগের দাদা-দিদিদের নিয়ে ইসকন অফিসে চলে যান। ওখান থেকে একটি ট্রাম্পভক্তি মিছিল বের হবে। ওরা সবাই মিলে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে ট্রাম্পকে।
উচ্ছ্বাস লীগের লোকেরা নক্সীপাঞ্জাবি, খাটো ফতুয়া, আর জামদানি শাড়ি পরে জয় শ্রী ট্রাম্প স্লোগান দিতে দিতে এসে ইসকন দপ্তরে পৌঁছায়। মিছিলটা ঘন হয়ে ট্রাম্পের বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করে। বংশীবাদনরত ট্রাম্পের একটি ব্রোঞ্জের মূর্তিসহ দীর্ঘ মিছিলটি চলতে থাকে।
রাস্তায় আফ্রো-এমেরিকানরা এ মিছিল দেখে বলে, ভোট দিয়ে জেতালাম আমরা; ট্রাইবাল ডান্স দেব আমরা; তানা কোত্থেকে এসে জুটেছে নতুন ট্রাইবাল গ্রুপ।
ট্রাম্পের বাড়ির কাছে ইসকন-উচ্ছ্বাস লীগের যৌথ মিছিল এসে পৌঁছাতেই স্কিন হেড বাউন্সাররা এসে পথ আটকে দেয়।
সংস্কৃতি মামা গিয়ে বলে,
পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে
করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারিনে সেই দুই বিঘা জমি।
হাটে মাঠে বাটে এই মতো কাটে বছর পনেরো-ষোলো--
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়ই বাসনা হলো।
কবিতা শুনে একটি প্রতিনিধিদলকে ট্রাম্পের কাছে যেতে অনুমতি দেওয়া হয়।
ট্রাম্প দূর থেকে এদের দেখে চিৎকার করে, এত ইমিগ্র্যান্ট কেন এখানে! মেক্সিকো বর্ডারের দেয়াল আরও উঁচু করো।
সংস্কৃতি খালা আর্তস্বরে বলে, আমরা বাংলাদেশে ভিক্টিম; ঐ যে আপনি টুইট করেছিলেন।
ট্রাম্প বলে, বেংলাডেশ; হোয়াট ইজ দ্যাট!
হারমোনিয়াম ঝাঁকিয়ে ভবতোষ বলে, ইন্ডিয়ার পাশে।
ট্রাম্প বিরক্ত হয়ে বলে, মেলানি এদের কেলানি দিয়ে বের করে দাও। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু সি ইমিগ্রান্টস।
হঠাৎ উচ্ছ্বাস লীগ গান শুরু করে,
রঘুপতি রাঘব রাজা ট্রাম্প
পতিত পাবন মেলানিয়া ট্রাম্প
মেলানিয়াট্রাম্প মেলানিয়া ট্রাম্প
ভজ পেয়ারে মন মেলানিয়াট্রাম্প।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন