১৪ বছরে একটা দেশ কী করতে পারে? ঠিক কতটা উন্নয়নের সোপান স্পর্শ করতে পারে? বাংলাদেশ কি উন্নয়নের নতুন মাপকাঠি নির্ধারণ করে দিয়ে যাচ্ছে? দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধশালী এই দেশটি মানবতা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, সামাজিক বন্টন, দুর্নীতির জিরো টলারেন্স, আদর্শ নাগরিক অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নিজেদেরকে এতটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছে যে, মই দিয়েও তাদেরকে কেউ স্পর্শ করতে পারছে না। দেশটির আনাচে কানাচে যেখানে তাকাবেন কোনো না কোনো উন্নয়ন আপনার চোখে পড়বে। সম্প্রতি দেশটির উন্নয়নের একটি নিদর্শন নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।
সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, হাসপাতালের প্রতিটি বেডে প্রতিটি রোগীর জন্য একটি একটি করে আলাদা মশারি। একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, শুধু ঢাকা মেডিকেল নয়, দেশের প্রত্যেকটি জেলায়, উপজেলায় হাসপাতালের প্রতিটি বেডের সাথে রয়েছে একটা মশারি।
১৪ বছরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অভূতপূর্ণ উন্নয়ন ২০ কোটি মানুষের এই দেশটিতে প্রত্যেকটি মানুষের জন্য একটি করে মশারি নিশ্চিত করতে পেরেছে।
কী সুন্দর ঝকঝকে নতুন মশারি। আমি একটু স্পর্শ করেও দেখলাম। নরম-তুলতুলে। কথায় কথায় জানতে পারলাম, এই মশারিগুলো আনা হয়েছে সুদূর ইউরোপ থেকে। মশারির ভেতরে তাকিয়ে দেখলাম, নিশ্চিন্তে, নিরাপদে ঘুমাচ্ছে এক ডেঙ্গু রোগী। মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকলে ছোট্ট একটা শিশুর নিজেকে যেমন নিরাপদ লাগে, ঠিক ততটাই নিরাপদে ঘুমিয়ে আছেন তিনি। দেখে মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। আমি আনমনে গেয়ে উঠলাম, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।‘
১৪ বছরে একটা দেশ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তাকে ঠিক কতটা উন্নত করতে পারে তা দেখার জন্য একবার আপনাকে বাংলাদেশে আসতে হবে।
হালকা নীল রংয়ের মশারিগুলো হাসপাতালের ফ্লোর জুড়ে যেন ছড়িয়ে দিয়েছে আলোর ছটা। যেই ছটায় ভেসে উঠছে বাংলাদেশ নামক ছোট্ট দেশটির উন্নয়ন।
এই মশারিগুলো কি শুধুই মশারী? নাকি এই মশারীর উপরই ফুঁটে উঠছে বাংলাদেশ নামক ছোট্ট এই দেশটির উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি! হেনরি কিসিঞ্জার একদিন বাংলাদেশকে, তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন। তিনি এখন বাংলাদেশে আসলে হয়তো দেখতে পারতেন, ঝুড়ির তলা দেশটি মশারি দিয়ে ঠিক করে নিয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন