হাউকাউ না করে প্রশ্নফাঁস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলো যে কারণে আমাদের বোঝার চেষ্টা করা উচিত

৪২৪৯ পঠিত ... ১১:০৭, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮

আমরা কারণে অকারণে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে সরকার এবং প্রশাসনকে গালিগালাজ করি। এই প্রশ্নফাঁস নিয়ে গত কয় বছর ধরে চলছে হুল্লোড়। আজ প্রধানমন্ত্রী গোটা কয়েক চপেটাঘাত করে চিরতরের মত এই হুল্লোড় থামিয়ে দিয়েছেন। তাই হাউকাউ না করে প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন। 

১। "মন্ত্রী কি নিজে প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে গেছে, নাকি সচিব গেছে?"--কথা সত্য। এই কথার কোথায় মিথ্যা আছে বলুন? বিএনপির আমলে প্রধানমন্ত্রীসহ নানা আন্ডার ম্যাট্রিক মন্ত্রী পাওয়া গেলেও আওয়ামী মন্ত্রী, সচিব সবাই প্রায় ম্যাট্রিক পাশ। তাই তাদের কি ঠ্যাকা পড়েছে প্রশ্ন ফাঁস করার? এই বক্তব্য শুনে অবশ্য আওয়ামীলীগের কওয়ামি শাখা ছিপিগ্যাং গোস্বায় ফোঁস করে উঠে বলতে পারে, আমরা কি ফ্যালনা? আমাদের কি শখ হয় না একটু ম্যাট্রিক পাশ দেয়ার? 

 

২। "দেখুন প্রশ্নপত্র ফাঁস, এটা কোনো নতুন কিছু না, এটা কিন্তু সব সময় যুগ যুগ ধরেই চলে এবং কখনও প্রচার হয় কখনও প্রচার হয় না, এটা হল বাস্তবতা।"--এইটাও ১০০% সত্য। বর্ণিত আছে, সক্রেটিসের দুই বান্দর ছাত্র প্লেটো আর অ্যারিস্টটল সেই প্রাচীন গ্রিক আমল থেকে প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত ছিল। ওস্তাদের প্রিয় প্রশ্ন ছিল, Question the question। মানে প্রশ্ন করে আবার জিগায়, Why do you think that I asked that question? প্রশ্নফাঁসের পর তার সব ছাত্ররা একযোগে সুর করে এই প্রশ্নের উত্তর দিত, Becaz, you are awesome! আর খুশি হয়ে সক্রেটিস সব ছাত্রকে এক পিস নাবিস্কো লজেন্স দিতেন। আজকে যারা আপনারা প্রশ্নফাঁস নিয়ে হাউকাউ করছেন তারা তখন কই ছিলেন? 

 

৩। "এবারে যেটা হচ্ছে, এখন সমস্যা হয় গেছে প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করছি। আর এ প্রযুক্তি আমাদের সুযোগও করে দেয় আবার সমস্যাও তৈরি করে দেয়।"--এই ডিজিটাল সরকারই প্রথমবারের মত দেশে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ছোটবেলা থেকে আমরা জেনে এসেছি বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। প্রশ্নফাঁস বিজ্ঞানের নানা কুফলের একটি। এজন্য সরকারকে দোষারোপের কোনো কারণ নেই। 

 

৪। "আমি একটা কথা আপনাকে বলি, যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এটা কতদিন আগে ফাঁস হয়েছে সেটা বলতে পারেন? সাধারণত কতদিন আগে? কুড়ি মিনিট আগে?"--বিগত সরকারের আমলে হয়তো এক মাস আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যেত। বর্তমান সরকার সেই সময় কমিয়ে কুড়ি মিনিটে নিয়ে আসতে বদ্ধ পরিকর। কুড়ি মিনিট আগে প্রশ্ন পাওয়া আর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে রওনা দেয়া অবস্থায় বান্ধবীর ডাক পাওয়ার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? শুধু আফসোসে দেয়ালে মাথা ঠোকা ছাড়া আর কী-ই বা করার আছে? 

 

৫। "এখানে কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে, যখন প্রশ্নপত্র যায় হলে বা যে প্রতিষ্ঠানে, সে প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পরে সেগুলো খোলা হয় এবং সেটা বিতরণের জন্য সবকিছু খুলে রাখা হয়। এখন সেখানে যদি কেউ চট করে ফটো নিয়ে মোবাইল ফোনে সেটাকে ছড়িয়ে দেয়, সেটা আপনি কী করবেন?"--কিছুই করার নেই। বিষয়টা অনেকটা খোলা লজেন্স আর মাছি বা ছোট কাপড় আর ধর্ষণ এর মতই অবশ্যম্ভাবী ব্যাপার। কবির এখানে কিছুই করার নেই। সবকিছু নিজেরাই খুলে রাখবেন, তারপর সরকারকে দোষারোপ করবেন, কোনো মানে আছে? 

 

৬। "আরেকটা প্রশ্ন আমার মনে জাগে। এই যে কুড়ি মিনিট আগে বা ধরলাম এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টা আগে যদি প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকে, এখানে একটা প্রশ্ন আমার যে, আমাদের এত বেশি ট্যালেন্টেড কে আছে? ওই সময়ে বই খুলে উত্তর বের করা, ওখানে বেশ কয়েকশ উত্তর থাকে, সেখান থেকে কয়েকটা আসে। উত্তরটা সে খুঁজে বের করে কীভাবে? এ কথাটার উত্তর কেউ দিতে পারবে কিনা তা জানার আছে। এত ট্যালেন্ট এমন ফটোজেনিক মেমোরি কার আছে?"--কারোরই নাই। দুনিয়ার সবচেয়ে ফটোজনিক মানুষ অ্যাঞ্জেলিনা জলিরও এত মেমরি নাই, বাংলাদেশের সবচেয়ে ফটোজনিক মানুষ হিরো আলমেরও এত মেমরি নাই। তারচেয়েও বড় কথা এই সরকারের আমলে শুধু প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। উত্তর তো ফাঁস হচ্ছে না তেমন। প্রশ্ন পেলেও উত্তর খুঁজে পাবার জন্য তো অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় ছাত্রদের। এই কষ্টের কি কোন দাম নেই? 

 

৭। "আপনাদের একটা কথা বলি, একটা বের করে দিন যারা এটা করছে, সাথে সাথে আমরা শাস্তি দেব। কারণ আমরা চাই না এভাবে প্রশ্নফাঁস হোক বা এই বদনামটা হোক।"--মুন্নি বদনাম হুয়ি ডার্লিং তেরে লিয়ে। ঘরে বসে মুন্নির বদনাম না করে বাইরে বের হয়ে কাজ করুন। সরকার কি আপনার খায় না পরে যে আপনার সব কাজ সরকার করে দিবে? কারা প্রশ্নফাঁস করেছে বের করুন, করে নিজেই তাদের শাস্তি দিন। নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করুন। এইসব ছোটোখাটো ব্যাপারে সরকারকে জড়ানোর কি মানে? 

 

৮। "অভিযোগগুলো আমাদের ওপর দেওয়া হচ্ছে, একটা সুর তুলে দেওয়া হচ্ছে যে প্রশ্নপত্র ফাঁস। এটা কোনোদিন ঠিক না। কিন্তু এজন্য মন্ত্রীকে গালি দিতে হবে, সচিবকে গালি দিতে হবে? তাকে চলে যেতে হবে? সচিব আর মন্ত্রী গিয়ে তো প্রশ্নপত্র ফাঁস করে নাই।"--গালি দিতে হয় কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, টিভি, প্রিন্টিং প্রেস, সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, বিজ্ঞানকে গালি দিন। গালি দেয়ার মত কাউকে খুঁজে না পেলে জাফর ইকবালকে গালি দিন। কিন্তু মন্ত্রী, সচিবদের কাছা ধরে টানাটানি কেন?

৪২৪৯ পঠিত ... ১১:০৭, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top