হারুন ব্যস্ত সমস্ত হয়ে ইলিশ মাছ ভাজে; বনজ কুমারকে তাড়া দেয় ডাইলে বাগাড় দিতে, ফলজ কুমারকে বলে ফলমুল কেটে একটা গামলায় রাখতে। প্রাণজ কুমার জিলাপি ভাজছে। আজ আওয়ামী লীগের দ্বিমাসিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গণমান্য অতিথিরা আসবেন। আলোচনা সভা, প্রার্থনা তারপর খানাদানা। মোল্লা শামীম ওসমান দোয়া মেহেফিল পরিচালনা করবে। আর বিপ্লব কুমার পূজা-অর্চনার পৌরহিত্য করবে। ডাইনিং হলের একপাশে একটা জলচৌকিতে টুপি পরে মোল্লা শামীম তজবিহ জপছে। আরেকটা জলচৌকিতে বসে কপালে চন্দন চর্চিত বিপ্লব কুমার ইষ্টনাম জপ করছে।
মনির রয়েছে অতিথিদের প্রোটোকলের দায়িত্বে। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। ডাইনিং টেবিলে আনন্দবাজার পত্রিকা বিছানো দেখে বলে, ও হারুন টেবিল ক্লথ আনো নাই কেন!
খাইতে খাইতে খবর পড়ব সবাই; ঢাকায় থিকাই আমার হোটেলে এই নিয়ম চলতেছে।
দেয়ালে লাগানো স্মার্ট টিভিতে রিপাবলিক বাংলা চ্যানেলে ময়ূখরঞ্জন ঘোষ নাচানাচি করছে। ভলিউম কমানো আছে; ফলে অদ্ভুত এক মূকাভিনয় নৃত্য মনে হচ্ছে ওটাকে।
প্রথমেই আসে আসাদুজ্জামান কামাল; সাদা দাড়িতে তাকে দরবেশের মতো দেখাচ্ছে; সঙ্গে অপু উকিল; সেই লিপস্টিকের লাল নেই; কালোবরণ কেশ নেই; সর্বত্রই ধূসরতার আণাগোনা।
বাহারের চুল-দাড়ি সব সাদা নেই কোন মেহেদি রঙ; মেয়ে বিউটি পার্লার সূচনাকে নিয়ে হলঘরে প্রবেশ করে।
একটু পরে টাবু আসে হারুনের ভাতের হোটেলের সিকিউরিটি চেক করতে। ঘুরে ফিরে এসে মনিরকে জিজ্ঞেস করে, হারুনকে গোয়েন্দা শাখার প্রধান বানানোর বুদ্ধিটা কার ছিলো।
মনির বিনয়ের সঙ্গে উত্তর দেয়, আপনাদের সি আই ডি টিভি সিরিয়ালের ডিটেক্টিভদের চেহারা-ছবি দেখে হারুনকে বাছাই করা হয়েছে।
আরাফাত ও দাড়িয়াল নওফেল প্রবেশ করে বিপ্লবী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী পান্নুকে নিয়ে। অপু উকিল এসে তাকে ও আমার প্রীতিলতা বলে জড়িয়ে ধরে।
নানক চোখ গোল গোল করে চারপাশ দেখে তারপর কি মনে করে মোল্লা শামীমের সঙ্গে বসে জিকির ফিকির শুরু করে। মৃণাল এসে বিপ্লবের পাশে বসে বলে, বলো হরি হরিবল।
টাবু গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে আসে আপাকে। পোর্টিকোতে মনিরের নেতৃত্বে গার্ড অফ অনার দেয় হারুন, বনজ, ফলজ, প্রাণজ। আপা সালাম গ্রহণ করেন। অপু উকিল আপাকে ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করে বলে, বাঁইচা আছি গো আপা; অই তাপসী আইসো আপারে সালাম করো।
একটু পরেই এসে পৌঁছে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। শুরু হয় দ্বিমাসিক সম্মেলন। এসময় ক্যাট ওয়াক করতে করতে আসে কাদের। হঠাত টলমল করে পড়ে যাবার জোগাড় হলে হারুন তাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
প্রথমেই আরাফাত বাংলাদেশ আপডেট দেয়, যে কোন মুহূর্তে সেনাবাহিনী ক্যু করবে; ড ইউনুসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সারা রাত সোর্ড ফাইটের পর; তারা ছুটির চারদিন ঘুমিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনে আওয়ামী স্লিপিং সেলের লোকেরা কিন্তু ঘুমিয়ে নেই। আপাকে হারিয়ে এতিমেরা ফেসবুকে রুদালি ভাড়া করে কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে।
এরপর অপু উকিল তার পরিকল্পনা পত্র পেশ করে, হেফাজতের খাসজমি ইউনিট কাজ করছে রাস্তায় নারীদের জিজ্ঞেস করার জন্য, ওড়না কোথায় ও টিপ কেন; আর আওয়ামী নারীবাদীরা নিয়মিত ফেসবুকে লিখছে, পোশাক পুলিশিতে ট্রমায় আছি। আশা করি ললিতার হ্যাশট্যাগে হ্যাশট্যাগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হবো আমরা।
আপা জিজ্ঞেস করেন, তারেক সিদ্দিকী কোথায়!
আসাদুজ্জামান কামাল উত্তর দেয়, উনি সুন্দরবনে। সুন্দরবনে যে ১১টা বাঘ বেড়েছে উনি তার একটা। আর যে বানর বেড়েছে ওগুলো সব যুবলীগ, ছাত্রলীগ।
মোল্লা শামীম আপডেট দেয়, দুবাইয়ে আপার জন্য রাজপ্রাসাদ রেডি; এখন আকামার অপেক্ষা; যদি আকামের কারণে আকামা না পাওয়া যায় তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা কি হবে।
আপা প্রস্তাব রাখেন, আমাদের দলীয় সভ্যদের যারা যারা এক হাজার কোটি টাকার ওপরে ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে পারবে; তাদের নিয়ে আমরা আপাতত একটা দ্বীপ কিনতে চাই। দ্বীপের নাম হবে, গোপালীপুর, আমরা একে দ্রুতই সিঙ্গাপুর বানাতে চাই।
বিপুল হর্ষ ও হাততালির মাঝে হর্ষবর্ধন শ্রীংলা বলেন, দেখি আমরা ইন্দো প্যাসিফিকে কোন দ্বীপ খুঁজে পাই কিনা যা বিক্রি হবে।
টাবু এসে আপার কানে কানে বলে, মিটিং সংক্ষিপ্ত করা যায় কিনা; জেটলি সাহেব বার বার খোঁজ নিচ্ছেন সিকিউরিটির ব্যাপারটা।
আপা বলেন, এরা সব আপনা লোক, জেটলি বাবুকে বলো, হারুনের কেটলির চা না খেয়ে আমি যাচ্ছিনা।
আপা জিজ্ঞেস করেন, কি কামাল সাহেব কিছু বলবেন, ইলিশ ভাজার গন্ধ আসছে; হারুন টেবিল লাগাও।
কামাল বলে, সেনা প্রহরার কারণে দুর্গা পূজার প্রতিমা ভাঙ্গার কাজটা কতদূর হবে বুঝতে পারছিনা। পাহাড়ে কঠির চীবরদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। পূজা আর চীবরদান; এই দুইটা সেন্টিমেন্টে আঘাতের ওপর নির্ভর করছে আওয়ামী সেন্টিমেন্টের কামব্যাক; বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
মোল্লা শামীম আশ্বস্ত করে, খেলাফতের সেন্টিমেন্টটা আরেকটু ঘন করে জাল দেয়া গেলে; আওয়ামী লীগ না থাকা মানেই দেশটা ইসলামপন্থার খপ্পরে এই জুজুটা সবাইকে ভোর বেলা ইষবগুলের ভুষির মতো খাওয়ানো যাবে আশা করি।
টাবু আপার কানে ফিসফিস করে বলে, আপা শেষ করেন; এদের আকাশ কুসুম কল্পনার কোন শেষ নাই।
হারুন তার কুমারদের সঙ্গে নিয়ে খাবার পরিবেশন করে।
বাইরে গেটের কাছে হৈ চৈ শোনা যায়। জঙ্গী সন্দেহে একজন ধরা পড়েছে। টাবু দেখতে যায় কি ব্যাপার। পেছনে পেছনে মনির। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা জঙ্গী গার্ড রুমের মেঝেতে বসে কাতর স্বরে বলছে, আমি জঙ্গী না; আমি ছাত্রলীগের সাদ্দাম; দুই মাস দাড়ি কাটার ফুসরত মেলেনি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন