'আপা' শব্দটি যেভাবে আমাদের হলো

১৯৬ পঠিত ... ১৭:০৭, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪

11

UNESCO-র এক জরিপ অনুযায়ী পৃথিবীর সুমিষ্ট ভাষাগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেছে বাংলা ভাষা। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে স্প্যানিশ এবং ডাচ। এই মধুর ভাষা বাংলার ভেতর আবার পজিটিভ, কম্পারেটিভ, সুপারলেটিভ অনুযায়ী ভাগ করলে কিছু শব্দ থাকবে যা মধুর চেয়েও মধুর। এমন একটি শব্দ আমরা ছোটোবেলা থেকে চিনে এবং বুঝে এসেছি, সেটি হলো 'মা'।

কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ভাষায়,

‘মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই,

এর চেয়ে নামটি মধুর ত্রিভুবনে নাই...’

 

ভাষা মাত্রই বহমান। কফোনিকা থেকে কহোনিআ হয়ে এসেছে 'কনুই’, সিমিলারলি স্তম্ভ থেকে ত্থম্ভ হয়ে 'থাম' এবং আরও অনেক শব্দ।

অর্থাৎ, ভাষা মাত্রই সময়ের সাথে সাথে খরস্রোতা নদীর মতো দিক বদলাবে।

যা হোক,

এসব বৈয়াকরণিক আলাপ এই লেখার উদ্দেশ্য কোনোভাবেই নয়। কীভাবে 'আপা' শব্দটি মধুমাখা শব্দ হিসেবে তালিকায় নাম্বার ওয়ানে থাকা 'মা'-কে প্রতিস্থাপন করল, বরং সেদিকে চিন্তা করা যেতে পারে।

হাঙ্গেরিয়ান ভাষায়, 'আপা' শব্দের অর্থ বাবা। মালয় ভাষায় 'কী' বা 'What' বুঝাতে ব্যবহৃত হয় আপা। যেমন, 'জাগো মাসাক আপা?' অর্থাৎ, 'আপনি কী রান্না করছেন?'

তুর্কি ভাষা থেকে বাংলা 'আপা' এসেছে বলে জানা যায়। তবে ভিন্নসূত্র বলে, তুর্কিতে 'Apa' এসেছে

Apandis হতে যা মূলত Appendix-কে বোঝায়।

আরবি 'আফওয়াহ' থেকেও বাংলায় আপা শব্দটি ঢুকেছে। 'আফওয়াহ' অর্থ জনরব বা জনশ্রুতি। যেমন, ‘আপা কথায় কান দেবেন না’। আরবিতে ফোআহা শব্দের অর্থ 'জনশ্রুতি'। আর এই শব্দের বহুবচন হচ্ছে আফওয়াহ। তবে বর্তমানে এই 'আপা' শব্দটির ব্যবহার তেমন চোখে পড়ে না।

আমরা, মানে বাঙালিরা, আপা বলতে বুঝি 'বড় বোন'। বাংলার সাথে একই ভাষাবংশের হওয়ায় হিন্দি, পাঞ্জাবি এবং উর্দুতেও মোটামুটি বড় বোন অর্থে আপা ব্যবহার হয়।

একটি ভাষার টিকে থাকা কিংবা হারিয়ে যাওয়া নির্ভর করে তার ব্যবহারের উপর। বিশ্বজুড়ে কোনো ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা ১০ হাজারের কম হয়ে গেলে তাকে ‘বিলুপ্ত প্রায়’ ভাষা হিসেবে গণ্য করে জাতিসংঘ। পাশের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে ৬০০ ভাষা চিহ্নিত হয়েছে 'বিলুপ্ত প্রায়' হিসেবে। গত ৬০ বছরেই সেখান থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ২৫০টি ভাষা।

শব্দের ক্ষেত্রেও একই থিওরি প্রযোজ্য। ২০০৭-১০ এর দিকে আমরা কোনো জিনিস সুন্দর বা মনোরম বোঝাতে ব্যবহার করতাম 'ঝাক্কাস'।

২০২৪ পর্যন্ত আসতে আসতে 'ঝাক্কাস' শব্দটি হারিয়ে গেছে। একে আর ব্যবহার হতে তেমন দেখা যায় না। এর পরিবর্তে এসেছে 'অস্থির', 'জোশ' ইত্যাদি। মৌখিক উপযোগিতার বদৌলতে অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে  যুক্ত হয়েছে selfie, bestie কিংবা rizz এর মতো শব্দগুলো।

গত দশ বছরে বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দগুলোর ভেতর একটি ছিল 'আপা'।  দশ মিনিটের কথোপকথনে সর্বোচ্চ ১৮১ বার 'আপা' এবং একবার 'আপু' ডেকে সম্প্রতি রেকর্ড করেছেন রাজনৈতিক দলের এক ব্যক্তি। এখানেই শেষ নয়। শব্দ বিজ্ঞানীদের মতে, আগে শিশুর মুখে সর্বপ্রথম 'মা' শব্দটি উচ্চারিত হলেও এর পরিবর্তে এখন উচ্চারিত হচ্ছে 'আপা'। সদ্যজাত ভূমিষ্ঠ শিশুরা এখন মা এর বদলে 'আপা, আপা' বলে কাঁদে। বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান, নাতি-নাতনি সবাই সবাইকে 'আপা' বলে ডাকে। 'আপা' যেন-তেন কোনো শব্দ নয়, স্বপ্নে নাজিল হওয়া দুই অক্ষরের ওহী।

এভাবেই 'আপা' আমাদের হয়ে বেঁচে থাকে চিরকাল...!

১৯৬ পঠিত ... ১৭:০৭, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top