বলো এসব কী শুরু হয়েছে লীগ

১৮৩ পঠিত ... ১৮:০৯, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪

37

গান্ধী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি অশেষ রায় সকালবেলা একটু হাঁটতে বেরিয়েছেন। রামকৃষ্ণ মিশনে ঢুকে আজ একটুখানি লাইব্রেরিতে ঢুঁ মারতে ইচ্ছা হয়। লাইব্রেরিয়ান আশুতোষ নন্দী খুব পছন্দ করেন রায় বাবুকে। চট করে ঘনাকে একটু আদা দেওয়া চা এনে দিতে অনুরোধ করেন।

অশেষ রায় বসে দিনের পত্রিকাগুলো দেখছিলেন। এমন সময় সাভারকার ভক্ত সংহতির ভবতোষ চক্কোত্তী এসে উত্তেজিত হয়ে বলেন, বলো এসব কী শুরু হয়েছে! এ কথা বলতেই হুপিং কাশির দমক আসে তার। কাঁচের গ্লাস ভেঙে যাবার শব্দ করে তিনি কাশতে থাকেন। দূরের একটা টেবিল থেকে উঠে আসেন নেহেরু গবেষণা পুঞ্জের উপদেষ্টা ডা. অখিল ভট্টাচার্য। স্ট্রেথো লাগিয়ে নিরীক্ষণ করেন ভবতোষ বাবুকে। এরপর প্রেশার মেপে বলেন, একী সর্বনাশ করেছেন শরীরের; আপনাকে বারবার বলেছি এত উত্তেজিত না হতে।

ভববাবু একটু সুস্থ হলে তাকে এক গ্লাস ঘোল এনে দেয় ঘনা। ঘোল খেতে খেতে ভববাবু আবার বলেন, বলো এসব কী শুরু হয়েছে! এত বড় সাহস সলিমুল্লাহ একাডেমি জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে; দেশটা কী পাকিস্তান হয়ে গেল!

অশেষ রায় মুচকি হেসে বলেন, আচ্ছা বলুন তো মশাই, গত দশ বছর ধরে আপনি অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন দেখছিলেন; তা কি পূরণ হয়েছে! আপনার মতোই কতগুলো বুড়ো যদি আপনার আশঙ্কা অনুযায়ী অখণ্ড পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেও থাকে; তাতে কি তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে। হাঁটুর বয়সী নাতি-নাতনিরা মহাপরাক্রমশালী শাসককে গদি থেকে নামাল! সেইখানে আপনার মতো অশীতিপরের কী করার ছিল! শুনুন এখন যৌবন যার, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার সময় তার।

ডা. ভট্টাচার্য অট্টহাসি হেসে বলেন, আমি তো বাপু সকালবেলা ইসবগুলের ভুসি খেয়ে তলপেটে সামান্য চাপ অনুভব করলেই মনে করি প্রক্ষালন কক্ষে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেললাম।

ভব বাবু রেগে বলেন, ঐ এক মুশকিল আপনাদের মতো গান্ধীবাদী ও নেহেরু ভক্তদের লোকেদের নিয়ে। আপনারা সিরিয়াস হতে জানেন না।

অশেষ রায় চশমার নিচে হাসি লুকিয়ে বলেন, ও নন্দী মশাই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যশওয়ান্ত সিং-এর জিন্নাহ ইন্ডিয়া পার্টিশান আর শীলা রেড্ডির মি অ্যান্ড মিসেস জিন্নাহ বই তিনখানা দেবে ভায়া!

ভট্টাচার্য জমিয়ে বসেন আড্ডায়। মি নন্দী বই তিনখানা এনে দিলে, রায় বাবু পাতা উলটে দেখান বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, জিন্নাহ স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, অখণ্ড বাংলা নিয়ে আলাদা দেশ হলে তার কোনো সমস্যা নেই।

ডা ভট্টাচার্য বলেন, সর্দার প্যাটেল নেহেরুকে কনভিন্স করেছিলেন, কলকাতাটা আমাদের লাগবেই।  

অশেষ রায় বলেন, আপনার শ্যামাচরণ কী রকম গোঁ ধরেছিলেন পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে। শরৎ বসুর অখণ্ড বাংলার চাওয়াকে কীভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আপনাদের আইকনেরা মনে নেই ভবতোষ বাবু!

মি নন্দী বলেন, জিন্নাহকে নিয়ে মেজর বই-পুস্তক সব ভারতেই লেখা হয়েছে; তাতে তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়নি। পাকিস্তানের অ্যাকাডেমিক এলাকায় গান্ধীজি, সুভাষ বোস, শেরেবাংলা, ভাসানী, সুহরোয়ার্দী, শেখ মুজিব; সবাইকে নিয়ে তো চর্চা হয়।

ভবতোষ বাবুকে খুঁজতে খুঁজতে বঙ্গবন্ধু পরিষদের ড. মীজানুর রহমান পৌঁছে যান রামকৃষ্ণ মিশনের লাইব্রেরিতে, তিনি বলেন, বলো এসব কী শুরু হয়েছে! আবার একটা একাত্তর লাগবে; ১৫ আগস্টে যারা লুঙ্গি ডান্স দেয় আর জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকীতে কীসব হিন্দুফোবিক বক্তব্য তাদের।

অশেষ রায় বলেন, ইসলামোফোবিয়া কি আপনারাই কম কিছু দেখালেন। আর আপনারা যে বঙ্গবন্ধুকে নাতসিদের সোয়াসটিকা চিহ্নের মতো স্বৈরশাসনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করলেন সাড়ে পনেরো বছর; জনগণ ঐ স্বৈরাচারের প্রতীকের প্রতি ইনস্ট্যান্ট রিঅ্যাকশন দেখিয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে তার সুকৃতি ইতিহাসে সবসময় সুচিহ্নিত হবে। মনে নেই জামাত সমর্থিত বিএনপি আমলে এই জনগণের ভোটে বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

মি নন্দী মন্তব্য করেন, ভারতে গান্ধী-নেহেরুর সমালোচনা হয়; তাদের নিয়ে কার্টুন ক্যারিকেচার হয়; পাকিস্তানে জিন্নাহর বিস্তর সমালোচনা আছে। নিজে উর্দু বলতে না পারলেও ঐক্যের ইউটোপিয়া থেকে উর্দুকে সিন্ধি, বালুচ, পাঞ্জাবি, পাশতুদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে গেছেন। নিজে ধর্ম পালনের ধারে কাছে ছিলেন না; অথচ পাকিস্তানকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র বানিয়ে গেছেন। তাই জিন্নাহকে নিয়ে কার্টুন ক্যারিকেচারেরও অন্ত নেই।

ডা. ভট্টাচার্য বলেন, আমার মনে হয়; বঙ্গবন্ধু শাসক হিসেবে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা হতে দিলে; তার ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য ব্লাসফেমি ল'র মতো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের শেকল না থাকলে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে জনমনে ক্ষোভ কম জন্মাত।

ভবতোষ বাবু জোরে জোরে প্রশ্বাস নিয়ে বলেন, কিন্তু জিন্নাহর মৃত্যুদিন পালন করতে এসে বুড়োরা বলছে, পাকিস্তান সৃষ্টি না হলে বাংলাদেশ সৃষ্টি না হতো।

অশেষ রায় বলেন, আপনারা তো শেরে বাংলা, ভাসানী, সুহরোয়ার্দীকে ইতিহাস চর্চা থেকে মুছে দিয়ে শুধু স্বার্থের বঙ্গবন্ধু পূজা করেছেন। মুজিব বায়োপিকে সবাইকে কেমিক্যাল লিলিপুট ক্যারেক্টার হিসেবে দেখিয়ে মুজিবকে গালিভার বানাতে চেষ্টা করেছে। ইতিহাসের নির্মোহ চর্চা থাকলে সবাই জানতে পারত, শেরেবাংলা, ভাসানী, সুহরোয়ার্দী পাকিস্তান সৃষ্টির নায়ক। বঙ্গবন্ধুও পাকিস্তান আন্দোলনের সৈনিক ছিলেন। বৃটিশের রাজধানী দিল্লিতে হওয়ায় জিন্নাহ বৃটিশদের সঙ্গে পাকিস্তান সৃষ্টির নেগোসিয়েশান বেশি করার সুযোগ পেয়েছেন। সে ব্যাপার ভারত সৃষ্টির ক্ষেত্রেও ঘটেছে; নেহেরু নেগোসিয়েশন বেশি করার সুযোগ পেয়েছেন। দূরবর্তী বাংলার নেতারা সাইডলাইনে চলে গেছেন।

ড. মীজান রেগে বলেন, জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকীতে ভারত বিদ্বেষী মন্তব্য করেছে।

ডা. ভট্টাচার্য বলেন, আপনারা ভাই পাকিস্তান বিদ্বেষ প্রচার করেছেন, পাকিস্তানের সাধারণ মানুষদের সবাইকে গণ-হত্যাকারীর তকমা দিয়েছেন। রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামো আর সাধারণ মানুষের পার্থক্য বুঝতে দেননি; ঐ বুড়োগুলো তেমনি ভারতের ক্ষমতা কাঠামো আর সাধারণ মানুষের পার্থক্য বুঝতে দিতে চাইছে না। আরে মশাই, একাত্তরের ইয়াহিয়া আর পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এক নয়, হালের নরেন্দ্র মোদি আর ভারতের সাধারণ মানুষ এক নয়। সাধারণ মানুষ সব জায়গায় ভাগ্যহত।

ভবতোষ রেগে বলেন, চলুন মীজান ভাই আমরা যাই; এসব গান্ধীবাদীদের দিয়ে আমাদের চলবে না!

অশেষ রায় হাসেন, আরে এত রাগ হচ্ছেন কেন! আবার প্রেশার উঠে যাবে যে। প্রেসক্লাবে আপনাদের মতোই কতগুলো বুড়ো খোকার ‘শেষ বয়সে যৌবন আসার’ খবরটা আপনারা কজন বুড়ো খোকা শেষ বয়সে যৌবন আসার জোয়ারে ফেসবুকে শেয়ার করে যে প্রচারণা দিলেন ওদের; আপনারা তো দেখছি বিনি পয়সার পি আর ফার্ম। ভব-মিজু বিজ্ঞাপনী সংস্থা!

১৮৩ পঠিত ... ১৮:০৯, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top