পোয়েটিক সিনেমার স্রষ্টা বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ১০টি ম্যাজিকাল উক্তি

২৯২৩ পঠিত ... ২১:৩২, জুন ১০, ২০২১

চলচ্চিত্র কখনো কাব্য হয়ে উঠে। কখনো সুর, ছন্দ, কখনো জাদুতে পরিণত হয়। এবং সেটা ক’জনইবা তার নির্মাণে দেখাতে পেরেছেন। চলচ্চিত্রের কবি, জাদুকর, সুর, ছন্দের স্রষ্টা, মাটির মানুষ বাংলা ভাষাভাষি মানুষের প্রিয় চলচ্চিত্রকার যিনি প্রায় ছয়দশকে মাত্র ১৭টি ছবি নির্মাণ করে ভারত এবং বাংলাদেশে ফিল্ম আইকনে পরিণত হয়েছেন, তিনি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। পড়েছেন অর্থনীতি নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ছাত্র জীবন থেকে কবিতা লিখছেন। নিজের গল্প, কবিতা নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেছেন। 

তাকে বলা হয় পয়েট্রিক সিনেমার স্রষ্টা। তাঁর ছবিতে কবিতার ছোঁয়া চিরকালীন, কারণ তিনি তো কবি। ম্যাজিকাল রিয়েলিজম আর কবিতার ছোঁয়ায় একাকার করে বানানো সব সিনেমার নির্মাতা বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের বিভিন্ন সাক্ষাতকার থেকে তুলে নেওয়া খণ্ড খণ্ড কিছু ম্যাজিকাল উক্তি তুলে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য। 

buddhodeb-dashgupto

১# ‘কিছুটা বাস্তবতা মিশাই, কিছুটা স্বপ্ন, আর কিছুটা ম্যাজিক। মিশিয়ে একটা মিশরি তৈরি করি। সেটাই আমার ছবি।’

২# খিদে। এমন একেকটা সময় আসে, যখন মনে হয় খিদে মিটছে না। আমি সিনেমা করে চলেছি এত বছর ধরে তবু প্রত্যেক নতুন সিনেমা আরম্ভ করি যখন, মনে হয় নতুন সিনেমা করছি। ভয় করে, আতঙ্কিত থাকি। প্রত্যেকবার নিজেকে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করি, বদলাতে থাকি। তেমনি খিদে প্রত্যেকবার আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। আর আমি বুঝতে পারি যে, এর মধ্য দিয়েই আমি বেঁচে থাকি। এটা না থাকলে আমার বেঁচে থাকাটাই মুশকিল হতো।

৩# বাংলাদেশে যখনই আসি আমার খুব ভালো লাগে। যখনই প্লেনটা ল্যান্ড করতে শুরু করে, জানলা দিয়ে আমি বাংলাদেশের জমি দেখতে পাই, চোখটা কেমন ভিজে যায়। কথা বলতে অসুবিধা হয়। খুব ছোট্টবেলায় আমি ঢাকা শহরে কাটিয়েছি। ১৯৫০-এর শেষ চলে যাওয়া। শিকড়সুদ্ধ উপড়ে আমাদের পরিবার চলে যায় ওখানে। শহরটা কলকাতা কিন্তু তার মধ্যে বিচ্ছিন্ন অনেকগুলো ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ বেঁচে আছে।

৪# দুটো শব্দ আছে ইংরেজিতে– লোননি আর অ্যালোন। আমি লোনলি নই, অ্যালোন। কিন্তু একা থাকতে আমি ভালোবাসি। ভালোবাসি এ কারণে, যেকোনও সৃষ্টিশীল মানুষ একা থাকতে ভালোবাসেন কিছুটা সময়। 

৫# সিনেমায় আমি যা বলব, তার একটা অংশ তো আমি নিজেই। আত্মকথন নয় কিন্তু তার পরও কোথাও নিজেকে তো ছড়িয়ে দিতেই হয়।

৬# কোনও নারীকে আমার কেন বার বার বলতে হবে, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’? বলারও প্রয়োজন নাই। আর বারবার বলা তো চড় খাওয়া ব্যাপার হবে, তাই না? অনেক কথা কিন্তু বলতে হয় না, অনেক শব্দ উচ্চারণই করতে হয় না। তেমন ক্যামেরাতেও অনেক কিছু গ্রহণই করতে হয় না। কবিতাতে অনেক শব্দ দিয়ে গাঁথতেও হয় না। অনেক না বলা শব্দ থাকে, না নেওয়া ট্রিকস থাকে, সেগুলো কিন্তু দর্শক ঠিক খুঁজে বের করে নেয়।

৭# ক্যামেরা আপনি চালিয়ে দিয়ে চলে যান এক ঘণ্টা ঘুরে আসুন দেখবেন অনেক কিছু উঠে গেছে। কিন্তু আপনি যদি ক্যামেরাটাকে ব্যবহার করতে চান, আপনার মতন করে, দৃশ্যগুলোকে গাঁথতে চান আপনার ভাবনার মতন করে, তাহলে কিন্তু ক্যামেরাটাকে আপনার বশ্যতা স্বীকার করতেই হবে। 

৮# আমি এক ধরনের যথেচ্ছাচারে বিশ্বাসী জানো তো, আমি খারাপ অর্থে যথেচ্ছাচার বলছি না। ক্রিয়েটিভলি হওয়া দরকার, এটা না হলে ওই চারপাশের ট্র্যাডিশনের মোড়কটা আটকে দেয়। এই মতলববাজ ট্র্যাডিশন ওগুলো শিখিয়ে দেয় যে, তুমি আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকো। যেই তুমি ভয়টাকে ভেঙে অন্য কিছু করার চেষ্টা করছ, তখনই একা হয়ে যাবে, তুমি ডিস্ট্রিবিউটর পাবে না, তুমি প্রডিউসার পাবে না, তোমার ছবি রিলিজ করাতে পারবে না। অথচ তুমি যদি পথের পাঁচালীর কথা ভাবো, অযান্ত্রিকের কথা ভাবো, এগুলো তো হয়েছে, বারবার ভারতীয় সিনেমা কেন পৃথিবীর সিনেমার ইতিহাসের ক্ষেত্রে দেখেছি।

৯# আসলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই একটা জার্নি। সেটা কেউ বোঝে কেউ বোঝে না। একজন সৃষ্টিশীল মানুষের বিশেষত্ব হলো- এই জার্নিটা তুলে ধরা। এই জার্নিটার মধ্যে ঢুকে পড়া। ঢুকে পড়েই জার্নিতে যে অসামান্য ঘটনা ঘটতে থাকে, অসামান্য যে মানুষ থাকে, অসামান্য যে বিষয় থাকে তা অবলোকন করে প্রকাশ করা।

১০# জীবনের অনেক কিছুই ম্যাজিকাল। ম্যাজিকটা খুব দরকার। দুটো মানুষের সম্পর্কের মধ্যে একটা ম্যাজিক থাকা দরকার। ম্যাজিক যদি না থাকে তাহলে সম্পর্কটা থাকে না। খাবার না থাকলেও চলে, চাঁদের আলো না থাকলেও চলে কিন্তু ম্যাজিকটা থাকতেই হবে। ম্যাজিকটা কিন্তু একটি রহস্যের সামনে নিয়ে যায়। না বলার অনেক কিছু থাকে।

বোনাস: ‘ভাবো। তবে ভাবলেই স্ক্রিপ্ট লিখবে না। ভাবনার সঙ্গে থাকবে। ভাবনার সাথে বসবাস করা একটা বড় বিষয়। প্রেমিকের সাথে বসবাস করলে বুঝতে পারবে, সে কেমন, সে তোমাকে চায় কি না, তুমি তাকে চাও কি না? তোমাকে যদি না চায়, তবে তিন মাস পর ফুস! তোমাকে ছেড়ে যাবে। তেমনি একটা ভাবনাকেও প্রেমিকের মতো বুঝতে হয়। কতটা সে আমার কাছের। কতটা নিতে পারব। তিন মাস পর যদি সে তোমার সাথে থাকে, তাহলে বুঝতে পারবে, ভারী মজার তো। এই তো সেই মানুষ, যাকে আমি খুঁজছিলাম।’

 

সংগ্রহ: বাংলা ট্রিবিউন, কালি ও কলম, আনন্দ আলো। 

২৯২৩ পঠিত ... ২১:৩২, জুন ১০, ২০২১

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top