রঙিন কিংবা সাদা পোশাক, বল হোক লাল অথবা সাদা; ক্রিকেট মাঠের মধ্যিখানে ২২ গজের টুকরো জমিনে বিরাট কোহলি তার সময়ের বাকি সবার চাইতে ভালো। একের পর এক রেকর্ড ভাঙা কোহলির সামনে শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ডও আজকাল স্পষ্ট হুমকির মুখে। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মাঠ ও মাঠের বাইরের উদ্ধত আচরণে ‘বেয়াদব’ তকমা কুড়ালেও, জাতীয় দলের অধিনায়ক হবার পর হয়েছেন অনেকটাই পরিণত। একের পর এক বোলার যেমন কোহলিকে মাঠ থেকে সরাতে পারে না, তেমনি একদিন একটা মৃত্যুও তাকে পারেনি মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে।
২০০৬ সাল, রঞ্জি ট্রফিতে দিল্লির প্রতিপক্ষ কর্ণাটক। প্রথম ইনিংসে কর্ণাটক করে ৪৪৬ রান। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে দিল্লি ব্যাটিংয়ে নেমেই পড়ে যায় বিপাকে। ১৪ রানেই হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। তখন ক্রিজে আসেন ১৮ বছরের তরুণ বিরাট কোহলি। সেটি ছিল দিল্লির হয়ে তার চতুর্থ ম্যাচ। কোহলি মাঠে নামার কিছুক্ষণের মাঝেই পড়ে যায় শিখর ধাওয়ানের উইকেট। দিল্লির স্কোর তখন ১৪ রানে ৪ উইকেট। ৫৯ রানে পড়ে পঞ্চম উইকেট। ফলো অন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে!
দলের সপ্তম ব্যাটসম্যানকে সাথে নিয়ে কোহলি দিনের বাকিটা ব্যাট করে গেলেন। দ্বিতীয় দিনের খেলা যখন শেষ হয় তখন তার রান ৪০। কিন্তু দিল্লির সামনে তখনও স্কোরের পাহাড়। কোহলি জানতেন, তার উইকেটটি খোয়েলেই দিল্লির ফলো অনে পড়ে যাবে। পরদিন সকালে দলকে বাঁচাতে হবে এই চিন্তা নিয়ে সেদিন রাতে ঘুমাতে যেতে হয়েছিল। সেই ঘুমের মাঝে পড়ে গেলেন এক সত্যিকারের দুঃস্বপ্নে।
রাত তিনটার দিকে একটা ফোন কলে কোহলি জানতে পারলেন, ক্রিকেট খেলতে যে মানুষটা তাকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন তার মৃত্যুর সংবাদ। মানুষটা আর কেউ নন, বিরাট কোহলির বাবা প্রেম কোহলি।
সকাল হতেই প্রেম কোহলির মৃত্যুর খবর দিল্লির ড্রেসিংরুমে পৌঁছে যায়। দলের আট নাম্বার ব্যাটসম্যান চৈতন্য নন্দকে বলে দেয়া হয় যে, বিরাট কোহলি মাঠে আসবেন না তাই চৈতন্যকেই নামতে হবে। চৈতন্য মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন সময় ড্রেসিংরুমে উপস্থিত হন কোহলি। জানান, তিনি ব্যাটিংয়ে নামবেন। দলের এখন তাকে দরকার।
ইনিংসে ২৮১ মিনিট ক্রিজে ছিলেন কোহলি। ২৩৮ বলে খেলেছিলেন ৯০ রানের ইনিংস। কোহলি যখন আউট হন তখনো ফলো অন এড়াতে দিল্লির দরকার ছিল ৩৬ রান। কোহলির অমন দৃঢ় মনোবলের মান রেখেছিল দিল্লি। বাকি ৩৬ রান করে সেদিন ফলো অন এড়াতে পেরেছিল তারা। আর অন্যদিকে, ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে যখন আউট হলেন কোহলি, ড্রেসিংরুমে ফিরে শুধু একবার উইকেটের রিপ্লে দেখেছিলেন। এরপর চলে গেলেন বাবাকে শেষ দেখা দেখতে।
সেই থেকে এখন পর্যন্ত নিজের দলকে বাঁচানোর কাজটা দুর্দান্তভাবে করে যাচ্ছেন কোহলি। যেকোনো পরিস্থিতিতেই!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন