ঢাকা ক্রিকেট লীগে সাবেক ক্রিকেটার ও আইসিসি তালিকাভুক্ত আম্পায়ার জেসিকে খেলা পরিচালনায় মেনে নিতে মৌখিক অস্বীকৃতি জানিয়েছে দুটি টিম কর্তৃপক্ষ। এই খবরটিকে সময়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর টিভি এমনভাবে পরিবেশন করেছে যেন, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ জেসির অধীনে খেলতে রাজি হননি।
অথচ অপেক্ষাকৃত ক্রেডিবল মিডিয়া ডেইলি স্টার ও সমকালের রিপোর্টে খেলোয়াড়দের কোনো আপত্তির কথা উল্লেখ নেই।
বলাই বাহুল্য সময় ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট আওয়ামী লীগের দুই নেতার মিডিয়া। তাদের দায়িত্ব ছিল, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহর প্রতি জন আক্রোশ সৃষ্টি করা। জেসি একজন নারী; তাকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জেন্ডার ইস্যু; জেন্ডার ইস্যুর সঙ্গে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহর দাড়ি ও মাঝে মাঝে নামাজ পড়ার দৃষ্টান্ত এক মনিকাঞ্চনযোগ। এই ম্যানুফ্যাকচার্ড নিউজ ছিল ইসলামোফোবিয়া ছড়িয়ে দেবার কল। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি মালিকের কোনো টিম এই লীগে খেলছে কিনা সেটাও জানা প্রয়োজন; ওর গুজবে কুঁদে উঠে কানের খোঁজে চিলের পেছনে ছুটার আগে।
ইন্টারনেট যুগে কোনো খবর সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে রবাহূত হয়ে ফেসবুকে বলী ও কুস্তিখেলায় নেমে যাওয়া খুবই অযৌক্তিক আচরণ।
অতীতে বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি লিটন বা সৌম্যের ক্রিকেট পারফরমেন্সে পান থেকে চুন খসলেই সামাজিক যোগাযোগ মিডিয়ায় তৈরি হয় হিন্দু ফোবিয়া। সেটাও ম্যানুফ্যাকচার করা হয়। ইসলামোফোবিয়া আর হিন্দুফোবিয়ার নরভোজি দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা সেই বৃটিশ আমল থেকে রাজনীতিকদের জীনগত অনুশীলন।
গতকাল রাতে এক পদ্য সাঁঝ থেকে ফিরে দেখি ফেসবুকের গদ্যময় উত্তপ্ত তাওয়ায় কথিত প্রগতিশীল ও নারীবাদীরা মুশফিক -মাহমুদুল্লাহর ঝলসানো রুটি ভাজছে। শিক গরম করে ঐ দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের কোন দিক দিয়ে প্রবেশ করিয়ে কোন দিক দিয়ে বের করতে হবে তার কলাকৈবল্য শেখাচ্ছেন সংস্কৃতি মামারা। সংস্কৃতি খালারা জেন্ডার কার্ডের পতাকা বের করে ঐ দুই খেলোয়াড়ের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছেন।
এই যে আমি বাইরের লোকেদের পদ্য শুনে ফিরে যেমন ঘরের লোকেদের গদ্যের কর্কশতায় পড়ে গেলাম; এইরকম ছিল ঐ সংস্কৃতি মামা ও খালাদের কর্কশ শৈশব। রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী থেকে ফিরে দেখত বাপ-মা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে; শিল্প আসর থেকে ফিরে এমন শিল্পবর্জিত বচসা দেখতে দেখতে অবচেতনে এমন তারস্বরে চেঁচাতে চেঁচাতে হুঁশ হারিয়ে ফেলার জীনগত আশ্লেষ তৈরি হয়েছে। ফলে নক্সী পাঞ্জাবি, সংস্কৃতি আসরে সংগীত শুনে মাথা দুলানো; দেশ বিদেশ ঘুরতে গিয়ে ক্যান্ডিড ফটোতে এফলুয়েন্স আর একটা বিরাট কিছু হয়ে যাওয়ার যে আইকনিক আভাস থাকে; তা এই রাগের মুহূর্তে বস্তি ও কলতলার ভাষায় কথা বলার অভ্যাসের মাধ্যমে ম্লান হয়ে যায়। এটা হবেই; কৃত্রিম কোনো কিছু মানুষ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না। প্রগতিশীলতা বলেন আর এলিটিজম বলেন; তা মানুষের বাক সক্রিয়তা ও ভাষা যোগাযোগকে আভিজাত্য দেয়। পট করে চিকি মাতারি বা মিনসে হয়ে যাওয়াটা বলে দেয়; এসব কোন কাননের ফুল। বস্তি ও কলতলার মানুষ বৈষম্যে লীন, শোষণে কর্কশ জীবন তাদের; সুতরাং কর্কশ ভাষা তার প্রাধিকার। সংস্কৃতি মামা-খালারা ক্ষমতা গাছেরটা খেয়ে দলেরটা কুড়িয়ে তেল ও চর্বি চকচকে জীবনে কেন কর্কশ হবেন!
আম্পায়ার জেসির বিভিন্ন সময়ের উদ্ধৃতিতে পাওয়া যায়, মুশফিক-মাহমুল্লাহ এরা তার ক্রীড়া ক্যারিয়ার বিকাশে সবসময় সহযোগী ছিল। তামিম, সাকিব, মাশরাফি মিলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের হঠাৎ আলোর ঝলকানির সোনালী বছরগুলো বিনির্মাণের যে পাঁচ নায়ক; তারা তাদের জুনিয়র নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারদের বিকাশে সাধ্যমতো ভূমিকা রেখেছেন। ক্রিকেট অভিজাত মনের মানুষের খেলা; ক্রিকেট জগতটি একটি আনন্দময় পরিবার।
দক্ষিণ এশিয়ায় পুরুষতান্ত্রিক একটি মনোজগত রয়েছে; যেখানে নেহাত পরিবারতন্ত্রের দুর্মুশ ঘষে মসনদে নারী নেতৃত্ব বসিয়ে না দেয়া হলে; নারীর অধীনে কাজ করতে কথিত ‘অপমান’ বোধ হয় এভারেজ পুরুষ সমাজের। জেসিকে আম্পায়ার হিসেবে মেনে নিতে দুটি ক্রিকেট টিম ক্তৃপক্ষের যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে; এটা পুরুষতন্ত্রের ক্ষয়িষ্ণু পূর্ব সংস্কার। তবে জেন্ডার কার্ডের যত্রতত্র অপব্যবহার একে কৌতুককর করে তোলে। অসংখ্য নতুন পুরুষ আম্পায়ারদের নিয়ে প্রশ্ন উঠে থাকে। অভিজ্ঞ আম্পায়ার প্রতিটি ক্রিকেট ক্লাবের চিরন্তন আকাংক্ষা। আপনি যেমন চান, আপনার বাচ্চাটির পরীক্ষক সবচেয়ে অভিজ্ঞ মানুষেরা হন; যাতে বাচ্চাটির মেধা ও যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন হয়।
আমার মনে হয় বাজারের ফ্যাশানেবল আউটফিট কেনা; ড্রয়ইরুম সাজানো, ছদ্ম এফলুয়েন্স ও এনলাইটেনমেন্টের নেসেসারি ইলিউশনিস্ট হবার আগে; কথা বলতে শিখতে হবে। ক্রোধ প্রকাশের ভাষা নির্ণয় শিখতে হবে।
চিত্রনায়িকা ববিতা যখন আধুনিকা নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন; তখন কী পরিশীলিতভাবে কথা বলেছেন; আবার সুন্দরী ছবিতে ঝগড়াটে মেয়ের চরিত্রে অভিনয়ের সময় তার কস্টিউম ছিল চরিত্রানুগ। পোস্ট মডার্ন আউটফিট পরে সুন্দরীর চরিত্রে অভিনয় মানানসই নয়। আবার কলিম শরাফির মতো নান্দনিক পোশাক পরে ফেসবুকে এসে সিপি গ্যাং-এর ভাষায় কথা বললে তা বড্ড বিসদৃশ হয়। কলিম শরাফির মতো মন্দ্র সৌম্য সফিস্টিকেটেড ভাষায় কথা বলতে না শিখতে পারলে অযথা প্রগতিশীল হবার চেষ্টা বাদ দেন। অযথা ক্রিকেট দর্শকের অভিনয় না করে কাছা মেরে হাডুডু খেলতে নেমে যান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ার জেসির সাফল্য ও সুনাম প্রত্যাশা করি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন