জুয়ার আসর থেকে যেভাবে স্যান্ডউইচ আজ পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় খাবার

১৯০৬ পঠিত ... ২০:১৫, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯

জীবনের নানাবিধ 'প্যারা'র চিপায় পড়ে আমাদেরকে প্রায়ই স্যান্ডউইচ হইতে হয়, সেইটা কারো কাছেই খুব পছন্দনীয় কিছু না। তবে দুনিয়াজুড়েই স্যান্ডউইচ একটি নিত্য-নৈমিত্তিক খাবার। এত জনপ্রিয়তার কারণও আছে। স্যান্ডউইচ সুস্বাদু, সহজে বানানো যায়, বানাইতে খুব অল্প সময় লাগে, পোর্টেবল... এবং যার যার পছন্দমতো স্বাধীনতা নিয়া মাংস, ডিম, চিজসহ নানান রকম উপাদান দিয়ে বানানো যায়।

স্যান্ডউইচ খাইতে যেমন সুস্বাদু, স্যান্ডউইচের বিশ্বজুড়ে খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার ইতিহাসও কম সুস্বাদু না।   

স্যান্ডউইচ দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আগে শুরুটা হয়েছিল ইল্যান্ডে। তবে স্যান্ডউইচের ইংল্যান্ডে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কৃতিত্ব ইতিহাসবিদরা দিয়া থাকেন এক পাড় জুয়ারিকে, তিনি 'ফোর্থ আর্ল অভ স্যান্ডউইচ' এর জন মন্টেগু সাহেব।  

১৭৬২ সালের ইংল্যান্ডের ঘটনা। জনাব মন্টেগুর জুয়ায় এমন আসক্তি ছিল যে সে জুয়ার টেবিল ছেড়ে এমনকি ডিনারের সময়ও উঠতে চাইতেন না। লোকে মন্টেগুকে বলতো ২৪ ঘন্টার জুয়ারি। তিনি একদিন তার রাধুনিরে এমন কিছু বানায়ে নিয়ে আসতে বললেন, যা খাইতে তারে জুয়ার টেবিল থেকে একবারের জন্যেও উঠতে না হয়, এমনকি লাঞ্চ বা ডিনারের জন্যেও না। রাঁধুনি সেইটা না পারলে, মন্টেগু তারে বললো পাউরুটির স্লাইসের সাথে মাংস দিয়া কিছু একটা বানায়ে নিয়া আসতে।  

স্যান্ডউইচ অবশ্য জন মন্টেগুর উদ্ভাবন না। তুরস্কে ও গ্রিসে কাছাকাছি খাবার আগে থেকেই প্রচলিত ছিলো। লন্ডনের অভিজাত সমাজের একজন লোক হিসাবে মন্টেগু এই জায়গাগুলো ঘুরেছেন। যদিও তখন পর্যন্ত এই খাবারের নাম ছিলো ‘মিট অন ব্রেড’ বা ‘রুটির মধ্যে মাংস’।

[মজার ব্যাপার হলো স্যান্ডউইচের শুরুটা আরও অনেককাল আগের। অন্তত খ্রিস্টপূর্ব ১০০ সালের দিকে।
এক্সোডাস ১২:৮ এ বলা হয়েছে, ‘ ঈজরায়েলের লোকেরা খামিরবিহীন রুটির মাঝখানে আগুণে ঝলসানো (মাংস) আর তেতো স্বাদের হার্ব দিয়ে খাবে।

খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের ইহুদী ভাষ্যকার হিল্লেল বলেন, ল্যামের সাথে তেতো হার্ব দুই টুকরো রুটির মাঝখানে রেখে খেলে ঈশ্বরের আদেশ পালন করা হবে।' স্যান্ডউইচ বিষয়ে আদি মন্তব্যকারী হিসেবে একধরণের স্যান্ডউইচের নাম করণ করা হয়েছে ‘হিল্লেল স্যানউইচ’। তাই স্যান্ডউইচ উদ্ভাবনের ক্রেডিট যদি কাউরে দিতে হয় তা দিতে হবে ইহুদীদের।]

অচিরেই ইংল্যাল্ডে খাবারটা জনপ্রিয়তা পায়। স্যান্ডউইচের ইতিহাস বিষয়ক বই ‘স্যান্ডউইচ: এ গ্লোবাল হিস্ট্রি’র লেখক বি উইলসন লিখছেন ‘অচিরেই রেস্তোরায় গিয়া লোকজন ‘দ্য সেইম এ্যাজ স্যান্ডউইচ’ বলে অর্ডার দেয়া শুরু করলো। পরবর্তীতে শর্টফর্ম "স্যান্ডউইচ"ই স্থায়ী হয়ে যায়।'    

রেস্তোরার মেনুতেও একসময় স্যান্ডউইচ অন্তর্ভুক্ত হয়া যায়। অবশ্য বিফ, হ্যাম বা টার্ক না, ১৮ শতকের শুরুর দিকের ইংল্যান্ডে স্যান্ডউইচের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভার্সনটায় রুটির স্লাইসের মাঝখানে দেয়া হইতো জিভ। আপনি ঠিকই পড়ছেন, জিভ বা টাং।    

আমেরিকানরা স্বাধীনতা লাভের প্রথম দিকে যদিও ‘কলোনাইজারদের খানা’ বিবেচনায় স্যান্ডউইচের প্রতি বিরূপ ছিলো। পরে অবশ্য অবস্থা বদলাইছে। এবং বর্তমানে ইংল্যান্ডের চাইতে আমেরিকায় স্যান্ডউইচের জনপ্রিয়তা বেশি। শুধু ইংল্যান্ড বা আমেরিকায় নয়, সারা বিশ্বজুড়েই স্যান্ডউইচ এখন জনপ্রিয়তম খাদ্যগুলোর একটি।

১৯০৬ পঠিত ... ২০:১৫, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top