সময়টা ১৯৪৫। তখনও কোল্ড ওয়ার শুরু হয় নাই। তবে হব হব করছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নে পদস্থ আমেরিকান এম্বাসেডর সাহেবের মস্কোর বাসায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের একটা গ্রুপ গেল দেখা করতে।
গ্রুপটার নাম ছিল "ভ্লাদিমির লেনিন অল-ইউনিয়ন পাইওনিয়ার অর্গানাইজেশন"। বয় স্কাউটের মত একটা সংগঠন।
কোল্ড ওয়ার শুরু হয় প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের সময় থেকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে। সেসময় পর্যন্ত রাশিয়া আমেরিকা যুযুধান অবস্থায় যায়নি।
বাচ্চারা রাষ্ট্রদূত এভারেল হ্যারিম্যান মহাশয়কে একটা গিফট দিয়েছিল। আমেরিকার ঈগল মার্কা সিম্বল একটা কাঠের ফ্রেমে খোদাই করে।
তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এটা ছিল বন্ধুত্বের নিদর্শন, অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামিল হওয়ার জন্য।
হ্যারিম্যান সাহেব এটা তার স্টাডিরুমে ঝুলিয়ে রাখলেন।
দীর্ঘ সাত বছর পরে ১৯৫২ সালে এসে জানা গেল এই কাঠের শোপিসের ভেতরে একটা অত্যাধুনিক লিসনিং ডিভাইস ফিট করা আছে। রাশিয়ানরা যখন ইচ্ছা তখন সবকিছু আড়ি পেতে শুনেছে। কেউ কিছুই টের পায়নি।
এটা বানিয়েছিলেন রাশিয়ান বিজ্ঞানী লিও থেরেমিন। পরবর্তীতে যার নাম দেয়া হয়েছিল 'দ্য থিং'।
সবচেয়ে কার্যকর ব্যাপার ছিল যে থেরেমিনের এই আড়িপাতা যন্ত্রের জন্য কোনও ধরনের ব্যাটারি বা পাওয়ার সাপ্লাই লাগতো না।
বাইরের কোনও এক রেডিও ট্রান্সমিটার থেকে সঠিক মাত্রার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি পাঠানো হলেই শুধুমাত্র সেটা সক্রিয় হয়ে উঠতো।
রাশিয়ান গুপ্তচরেরা এম্ব্যাসির বাইরে গাড়িতে বসে এই স্পাইগিরি চালিয়ে যেতেন সহজেই।
পরবর্তী ইউএস রাষ্ট্রদূত জর্জ কেনান এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের সিকিউরিটি চিফ জোসেফ বেজিয়ান সন্দেহ করেছিলেন যে কিছু একটা যন্ত্র সেই রুমে আছে যা ক্রমাগত ট্রান্সমিট করে যাচ্ছে।
তাদের সন্দেহবাতিকতাকে সত্য প্রমাণিত করে সুইপ সার্চের মাধ্যমে মার্কিন গোয়েন্দারা এটা খুঁজে পায়। 'দ্য থিং'কে খুঁজে পাওয়ার পর একরাত এটা বালিশের তলায় নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন এম্বাসেডর কেনান। যেন কেউ এটা তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে না পারে।
পরে এটা তিনি ওয়াশিংটনে এফবিআই অফিসে পাঠিয়ে দেন।
তারা ভেতরের যন্ত্রটা বের করে ফেলে গবেষণার জন্য। আর কাঠের খোলটা রেখে দেয় ম্যারিল্যান্ডের ন্যাশনাল ক্রিপ্টোলজিক মিউজিয়ামে জনসাধারণকে প্রদর্শনের জন্য।
লোকেরা সেখানে যায়, কাঠের ফ্রেমটা উল্টিয়ে দেখে ভেতরে সুন্দর করে খাঁজ কাটা জায়গায় থেরেমিনের সেই আড়িপাতা যন্ত্রের একটা রেপ্লিকা বসানো আছে নিখুঁতভাবে।
এর থেকে দুটো শিক্ষা তারা নিয়ে আসে,
স্কুলের বাচ্চাদের থেকে নেয়া উপহার শতভাগ নিরাপদ নয়
এবং..
দেয়ালেরও কান আছে।
লেখা: শরীফ হাসান
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন