রবীন্দ্রনাথ যদি হিমু লিখতেন: আজিকে হিমুর বিবাহ

২৭৩ পঠিত ... ১৮:১৭, নভেম্বর ১৩, ২০২৩

8

১.

কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিত, কিন্তু কন্যা সবুর করিতে চাহিল না। এমন হলুদমার্কা কিউটের ডিব্বা পাত্র সহজে পাওয়া যাইবে না। অতএব আজিকাই বিবাহ।

যদিও কী করিয়া গুণিতে হয় জানা নাই, তবুও বাদল প্রমাদ গুণিল। হিমুর দিকে ড্যাবড্যাব করিয়া তাকাইয়া বলিল, হিমু ভাই, তোমার কি উত্তেজনা হইতেছে? তোমার বিবাহের ক্ষণ যে সম্পন্ন হইয়া যাইতেছে!

হিমু বলিল, মানুষ মাত্রেই উত্তেজনাকর জীব। এরা বাদামের মতো ক্ষুদ্র যে খাদ্য তাহা খাইতে গিয়াও উত্তেজনা অনুভব করে। খুব অল্প টিপি দিয়া বাদামের খোসা ভাঙিয়া তাহার ভেতর হইতে বাদাম বাইর করিতে গিয়াই বুকের ভিতর আলোড়ন অনুভব করে...বিবাহ তো সারা জীবনের টিপি খাওয়া! ইহাতেও উত্তেজনার অন্ত নাই! কিন্তু বাবার ডায়েরিতে লেখা আছে--হিমু, উত্তেজনা হইল নিতান্ত বোকা মানুষদের আবেগ। জানোই তো সাময়িক উত্তেজনা কত বড় বড় অপরাধের জন্ম দিয়াছে এই পৃথিবীতে। তোমাকে ভাইব্রেশনহীন মোবাইলের মতো হইতে হইবে। কল আসিবে ঠিকই, কিন্তু তুমি কাঁপিবে না!

বাদল বলিল, কিন্তু আমি তো কাঁপিতেছি! ডিআইজির কন্যা... একি সহজে ছাড়িবে? অদ্যই শেষ রজনী করিয়া দিবে! ডিআইজির সাথে হুদাই ফাঁপড় লইতে যাওয়া একদমই ঠিক হয় নাই! বিগ মিসটেক!

ডিআইজির কন্যা ততক্ষণে আরেকবার ড্রইংরুমে আসিয়া দাঁড়াইছে। হিমু নির্লিপ্ত থাকিলেও বাদলের প্যান্ট ভিজিবার উপক্রম। সূর্যের চাইতে বালি যে বেশি গরম হয় এ কথা বাদল হুমায়ূনের বইয়ে পড়িয়াছে...কিন্তু এখন দেখিতেছে সূর্যের চাইতে স্যান্ডেলও গরম! ডিআইজির চাইতে ডিআইজির মা-কন্যা সকলেই গরম! মিসটেক, বিগ মিসটেক!

 

২.

ঘটনা তাহা হইলে গোড়া হইতেই শুরু করা যাক।

ঘন শালবনে গভীর রাত্রে একাকী জ্যোৎস্না দেখিতে যাইয়া গতবার বাদলের খুবই প্রবলেম হইয়াছিল। যেখানে মানুষ পৌঁছে না সেইখানে বাতাসে বাতাসে মানুষের বিষ্ঠার গন্ধ যে পৌঁছায়া যাইতে পারে তাহা সম্পর্কে বাদলের কোনো ধারণা ছিল না। শালবনের ভেতর নিজেকে মাটিতে আটকায়া নিয়া সারা রাত্রী সেই গন্ধের ভেতর বাদলকে কাটাইতে হইয়াছে। সঙ্গে মশার বাহুবলিরা ছিল। তাহারা কাটিয়া-কামড়াইয়া বাদলের নাক-মুখ রক্তাক্ত করিয়া ফেলিয়াছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বাদল এইবার জ্যোৎস্না দেখার প্ল্যানে কিছু জিনিস অ্যাড করিয়াছিল। সেই উদ্দেশেই কালো ব্যাগ আর হলুদ হিমুকে লইয়া সে মার্কেটে মার্কেটে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল অ্যারোসল আর পারফিউম কিনিবার নিমিত্তে। হিমুরও আগ্রহের সীমা ছিল না। সে বলিল, অ্যারোসল দিয়া মশা মারায় কোনো আরাম নাই...মশা মারা উচিত কামান দিয়া। হিমুর কথায় বাদল বিহ্বল হইয়া পড়িল। ঢাকার কোথায় কোথায় কামান এখনো জীবিত আছে সেই একটা হিসাব করিয়া হিমুকে নিয়া তারা প্রথমেই জাদুঘর গেটে পৌঁছাইল।

জাদুঘরের আগের দিন নাই। একটা সময় এইখানে আন্দোলন-টান্দোলন হইত। এখন কিছু চিমস্যা মারা পোলাপাইন বইসা থাকে। এদের চোখে না আছে বিগত আন্দোলনের সুরভী, না আছে আগামী প্রাপ্তির ভবিষ্যত! বাদল বলিল, মামা, ওই যে কামান! চলো নিয়া আসিগে!

হিমু বলিল, তুই আমারে মামা বলিতেছিস ক্যান? আমি তো তোর খালাতো ভাই!

বাদল বলিল, উত্তেজনায় গোপাল ভাঁড় হইয়া যাইতেছি হিমু খালু! তাড়াতাড়ি চলো, এক্ষুনি কামান লইয়া শালবন পালাই!

হিমু বলিল, যে কোনো উত্তম কাজ করিবার আগে এক কাপ চা খাওয়া উচিত! এই পিচ্চি চা দে...

দোকানে পিচ্চি ছিল না, বরং পিচ্চির বাপ বয়সী একজন চা বানাইতেছিল। সে অত্যন্ত রুষ্ট হয়ে বলিল, আমারে আপনার পিচ্চি লাগিল?

হিমু বলিল, কামান চুরি করিব। এই উত্তেজনায় গোপাল ভাঁড় হইয়া গিয়াছি! চা দাও পাঁঠা!

পাঁঠা বা পিচ্চি কিছুক্ষণ থম মেরে হিমুদের দিকে তাকাইয়া থাকিল, পরে খালি কাপে গরম পানি ঢালিয়া কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করিতে করিতেই কাকে যেন মোবাইল ফোনে কল করিল।

 

৩.

বাংলাদেশ পুলিশ আর আগের মতো নাই। এখন তাহারা যথেষ্ট করিৎকর্মা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা সাইরেন বাজিয়ে জাদুঘরের সামনে হাজির হইল। এবং কামান চুরির দায়ে হিমু আর বাদলকে গ্রেফতার করিল।

ডিআইজি বলিল, চল..চল তোরা!

হিমু বলিল, চায়ের অর্ডার দিয়াছি! চা খাইয়া যাইতেছি!

ডিআইজি বলিল, চা, না? চা তোর আমি ‌ড্যাস দিয়া ঢুকায়া দিবো!

হিমু বলিল, এমনি ঢুকাবেন নাকি ফানেল ব্যবহার করিবেন। পুরান ঢাকায় মনতাজ আলী নামের একজন খুব ভালো ফানেল বানায়!

ডিআইজি বলিল, চোপ! চোপ একদম! তোদের আমি কী করিতে পারি জানিস? শালা, হলুদ পাঞ্জাবি পরিস? কোন গ্রুপের তোরা? কী নাম তোদের? দেখি...দেখি কালো ব্যাগ...

ব্যাগের মধ্যে অ্যারোসলের ছয়টা বোতল পাওয়া গেল। সঙ্গে দামী দামী পারফিউমের বোতল। ডিআইজি বলিল, বোমা বানানোর সরঞ্জাম নিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছোস তোরা? আবার কামান চুরি করতে চাইস! কামান চুরি করিয়া কী করিবি, অ্যাঁ?

বাদল মিনমিন করিয়া বলিল, মশা মারিব!

ডিআইজ বলিল, চোপ! চোপ একদম! মশা আমি তোর ড্যাশ দিয়া ঢুকায়া দিবো!

হিমু বলিল, কিন্তু এইসব করিবার আগে তো আপনার একবার বাড়িতে যাওয়া উচিত! আপনার স্ত্রী তো রক্তপাতের ভিতর আছে!

ডিআইজি আরও খেপিলেন। খেপিয়া বলিলেন, হিমুগিরি? আমার সাথে হিমুগিরি! কী মনে করছোস আমি হিমু পড়ি নাই... এইগুলা খালি ওই হুমায়ূনের অপন্যাসেই হয়, বুঝলি!

এ সময় ডিআইজির ফোন বাজিয়া উঠিল। ফোন কানে নিতেই সে ঝটকায় হিমুর দিকে তাকাইল। তারপর তাড়াতাড়ি বলিল, আসিতেছি, আমি কুইক আসিতেছি!

ফোন রাখিয়া হিমুকে ডিআইজি বলিল, আমার স্ত্রী বাথরুমে মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া গিয়াছে...মাথা কাটিয়াছে বিস্তর...ভাই একটু আসেন আমার সাথে!

ডিআইজি পরম আস্থায় হিমুর হাত ধরিল। মাথার সাথে সাথে যেমন ধর যাইয়া থাকে, ডিআইজির সাথে সাথে হিমু ও বাদল তেমনি ডিআইজির বাড়ি উপস্থিত হইল। আর হইয়াই বুঝিল বিরাট ভুল হইয়া গিয়াছে। বিগ মিসটেক!

 

৪.

ডিআইজির স্ত্রী সারিয়া উঠিতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লইল না। কপালে দুখানা সেলাই পড়িল মাত্র। কিন্তু হিমুকে দেখিয়া ডিআইজির কন্যার যে অসুখ বাধিল তা ঘণ্টায় ঘণ্টায়, মিনিটে মিনিটে, কি সেকেন্ডে সেকেন্ডে বাড়িয়া চলিল। ডিআইজি বলিল, শোনেন হিমু, আপনি যদি সত্যি হিমু হইয়া থাকেন তা হইলে এইটুকু জানিয়া রাখেন আমি আমার মেয়েকে অত্যন্ত ভালোবাসি! আর আমার মেয়ে আপনারে অত্যন্ত ভালোবাসিয়া ফেলিয়াছে! সে আর কোনো অপেক্ষায় করিতে চাহে না! আমি আজি রাত্রেই আপনাদের বিবাহ দিতে ইচ্ছুক। আপনার মত কী?

হিমু বলিল, আসসালামুআইলাইকুম!

ডিআইজি বিস্মিত হইয়া বলিলে, সালাম কেন দিতেছেন?

হিমু বলিল, নতুন সম্পর্ক হইতে যাইতেছে আমাদের মধ্যে এই জন্য সালাম!

ঘরে ডিআইজির কন্যা উপস্থিত ছিল, সে হাসিয়া ফেলিল। কন্যার হাসি সুন্দর। কারো কারো হাসি সুন্দর হইয়াও বুকে লাগে না, এই কন্যার হাসি লাগে। শীতরাতের জ্যোৎস্না যেমন একই সাথে সুন্দর ও ভয়াবহ...এই কন্যার হাসিও তেমন! বাড়িতে বিবাহের প্রস্তুতি আরম্ভ হইয়া গেল!

২৭৩ পঠিত ... ১৮:১৭, নভেম্বর ১৩, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top