প্রিয় বাবা হেলাল,
আশা করি ভালো আছো। আমি একটু ঝামেলায় আছি। আসছে নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তুমি তো জানোই বাংলাদেশের চারিদিকে শত্রু। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি গিজ গিজ করছে চারিদিকে। রাজাকারের ছানাপোনারা কিলবিল করতেছে। যারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে এক নিক্তিতে মাপে; তারা ভয়ংকর লোক; এরা হইতেছে ইউনুসের মতো সুশীল। প্রথম আলোর মতো অন্ধকার। তারা আমাদের ঘিরে ধরেছে। উই আর লুকিং ফর শত্রুজ।
তৃতীয় শক্তির সুশীলগুলি আমৃকান এমব্যাসিতে দেন দরবার করে একটা ভিসা স্যাংশান দেওয়াইছে। আমি আর কবে আম্রিকা আসতে পারি; তার ঠিক নাই গো বাজান!
নুন খাই যার গুন গাই তার। এই যে তুমি আরকানসস ইউনিভার্সিটিতে এতো বছর ধরে কী জানি পড়ছো; লোটাস স্পোর্টস কারে চড়ছো; নিউইয়র্কের সেকেন্ড হোম ভাড়া দিয়ে খাচ্ছো; এসব তোমাকে কে দিয়েছেন!
এই যে তোমার মা কোন বিয়ের দাওয়াত পেলেই এক লাখ টাকার শাড়ি কিনে বিশ হাজার টাকা দিয়ে ব্লাউজ বানিয়ে নাচতে নাচতে সেনাকুঞ্জে যায়; এই ব্লাউজ তোমার আম্মুকে কে দিয়েছেন!
এই যে আমি একটা সামান্য কৃষকের ছেলে; আমার ব্যাচের মেধাবী অফিসারদের সুপারসিড করে আজ জেল্লার কেল্লায় পাছা দুলিয়ে ঘুরছি! মার্সিডিজ বেনযে চড়ে গাজিপুরের ফার্ম হাউজে গিয়ে কোপাচ্ছি, কৃষকতা করছি; বাগানের সবজি, পুকুরের মাছ খেয়ে কাতলা মাছের মতো নীলাভ সুইমিংপুলে সাঁতার কাটছি; এসব আমাকে কে দিয়েছেন!
সুতরাং আগামি নির্বাচনে কোনভাবে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিকে নির্বাচন কেন্দ্রের ধারে কাছে আসতে দেবো না! মনে রাখবা দেশ স্বাধীন করেছে আওয়ামী লীগ; সুতরাং আওয়ামী লীগের মালিকই দেশের মালিক। কথায় যুক্তি আছে কীনা বলো বাবা!
তবে তোমার এইসব ডার্টি পলিটিক্সের মধ্যে আসার দরকার নাই। ঐখানে ঝুমঝুম বাজনদার টাইপ যে সহমত ভাই আছে; এরা কিন্তু আগে ফ্রিডম পার্টি আর জামায়াতের লোক ছিলো। এখন চেতনার নেশায় মাতোয়ারা হইয়া লোকজনরে দেশপ্রেম শিক্ষা দেয়। পকেটে গোবর নিয়া ঘুরে। কারো সঙ্গে ভিন্নমত হইলেই কলতলার মতো হৈ চৈ কইরা গোবর ছুইড়া দেয়; এর পরিবর্তে টেকাটুকা পায়। এরা কৈ থিকা কী জানি পাশ দিছে; বিদেশে কাম কইরা খাওনের ক্ষমতা নাই। তাই এরা দালালি কইরা খায়। এদের রক্তেই আছে দালালি। তাই আম্রিকায় এইসব জন্তুর সঙ্গে একদম মিশবানা। এদের বোন-শালী-কন্যা-ভাগ্নি-ভাতিজি হইতে শতহাত দূরে থাকবা।
তুমি এক্কেবারে আম্রিকান হইয়া যাও। বৃটিশ একসেন্টে কথা বলবা; যেন ওখানকার লোকেরা ভাবে, কলম্বাসের সঙ্গে একই জাহাজে তোমার পূর্ব পুরুষ এমেরিকা আবিষ্কার করছে। পারলে ঐখানে ডেমোক্রাট পার্টি করে এমন বাপ দেইখা তার একটা সাদা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করবা। স্পোর্টস কার কিইনা দিছি দেড় লাখ ডলার দিয়া; তুমি কেন ফেসবুকে একা একা ছবি দিবা গো বাবা!
আমি যদি নির্বাচনের ফলগাছ কাইটা আগারগাঁও নেবার পথে বাইচান্স ধরা পড়ি; ঐখানে তোমারে ধইরা টান দিবো ঐ আমৃকান টিকটিকিগুলি।
তুমি এক কাজ করো; তোমার দাদার ছবি ফটোশপ কইরা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের মিছিলের ছবিতে বসাইয়া প্রিন্ট আউট নেও। ঐ ছবি বান্ধাইয়া ড্রইং রুমে রাখো। মানি ব্যাগে রাখবা আরেক কপি। ব্যাস এফ বি আই ভুল বুঝতে পাইরা চইলা যাইবো। তুমি বাঁইচা যাবা। তুমি আমার বংশের বাতিগো বাজান।
ডেমোক্রাট পার্টির ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠানে গিয়া টাকা ঢালো। হাজার কোটি টাকা থিকা একশো কোটি ঢাললে ক্ষতি কী! দেখবা ডেমোক্রাটের মাইয়ারা আপোষে তোমার লোটাসে আইসা উঠবো। তখন তারে মান্নাদের গান শোনাবা "চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি"।
ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে তোমার মায়েরে ঐভাবে পটাইছিলাম। গাড়ি ছিলো না; কিন্তু বিসিএস গাড়ির কথা বলছিলাম তারে। তোমার নানা তো সরকারি চাকরি করতেন। বিসিএস জামাই পছন্দ ছিলো তার। আর তোমার মা আমার কন্ঠে, চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি শুনে বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলো। ভালো মেয়ে ছিলো; সবই ভালো; খালি তোমার দাদা-দাদিরে বাসায় উঠতে দেয় নাই; গ্রামে ফালাইয়া রাখছে; এই ব্যাথাডা অমাবস্যার রাতে আমারে কষ্ট দেয়।
এইটা অনেক নিষ্ঠুর সমাজ গো বাবা; খুব নাক উঁচা সমাজ। বরং তোমার ফরেনার সাদা বৌ দেখবা তার শ্বশুর-শাশুড়িরে কালো বইলা হেলা করবে না।
তোমার ছোট বেলার ছবি দেইখা কাল রাতে কতক্ষণ কাঁদলাম বাবা। আর কী দেখা হইবো আমাদের। আল্লাহ পাক কপালে কী রাখছেন তা কে জানে!
তুমি বাবা আর ভুল কইরাও আর এইদিকে আইসো না। আমৃকাতে ঘাপটি মাইরা পইড়া থাকো। সুখী হও।
ইতি
তোমার আব্বু
উন্নয়নের জ্যেষ্ঠ আধিকারিক
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন