মিঠুন যমুনা পল
আমার নাম অঞ্জলি শর্মা। আমি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়ি। যদিও কলেজটি ভারতে অবস্থিত কিন্তু প্রায়ই এখানে মরিশাস ও স্কটল্যান্ডের সিন-সিনারি দেখতে পাওয়া যায়। এই কলেজে প্রতি ক্লাসে ৭ থেকে ৮ জন ছাত্রছাত্রী থাকে যারা মিনি স্কার্ট-স্লিভলেস টি ইত্যাদি পরে কলেজে আসে। যদিও প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে দেখে মনে হয় এরা অন্তত দশ বছর আগে কলেজ পাশ করে ফেলেছে বা দশ বছর আগে চেষ্টা করেও কলেজ যেতে পারেনি। যাই হোক, এখানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হলো রাহুল। যদিও আমার মা ছোটবেলায় বলেছিল রাহুল নামের ছেলেগুলো ভীষণ ডাম্ব হয়, কিন্তু আমি বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এখন মনে হয় আমার মা একটি শব্দও ভুল বলেননি। আমরা দু’জনে সারাদিন বাস্কেটবল খেলতাম, যেন বাস্কেটবল কোর্ট আমাদের বাপের কেনা। এর মধ্যে কলেজের প্রিন্সিপ্যাল মিস্টার মালহোত্রার মেয়ে টিনা আমাদের কলেজে আমাদেরই ক্লাসে পড়তে আসে। সে নাকি তার পড়াশোনা বিদেশেই করেছে কিন্তু মিস্টার মালহোত্রা জোর করায় টিনা তার ফাইনাল ইয়ার আমাদের কলেজে পড়তে রাজি হয়। জানি এর চেয়ে বড় স্টুপিড ডিসিশন আপনারা কাউকে নিতে দেখেননি। কিংবা এটাও হতে পারে মিস্টার মালহোত্রা হয়ত টিনাকে বলেছেন যে আমাদের কলেজে প্রায়ই মরিশাস ও স্কটল্যান্ডের সিন-সিনারি দেখতে পাওয়া যায়, তাই হয়ত সে রাজি হয়ে যায়। কলেজের প্রথম দিন রাহুল টিনাকে র্যাগিং করে ও তাকে একটি হিন্দি গান গাইতে বলে। টিনা সবাইকে অবাক করে একদম পারফেক্ট সুরে ওম জয় জগদীশ হরে ভজনটি গেয়ে শোনায়। চূড়ান্ত লেভেলের ধার্মিক রাহুল এতে খুব ইমপ্রেস হয়ে যায় ও মনে মনে ঠিক করে নেয় যে টিনাকে বিয়ে করে তারা জগরাতার ব্যবসা শুরু করবে আর অনুপ জলোটাকে লোটা ধরিয়ে ভাতে মারবে। এরপর রাহুল টিনাকে পটানোর চেষ্টা করতে থাকে যা দেখে আমি একটু জেলাস ফিল করতে শুরু করি। এরপর একদিন ক্লাসে আমাদের একমাত্র টিচার মিস ব্রিগেঞ্জা যখন প্রেমের ওপর ক্লাস নিচ্ছিলেন তখন রাহুল বলে উঠলো প্রেম মানে বন্ধুত্ব আর প্রেমিক হতে গেলে নাকি ভালো বন্ধু হতে হয়। বিশ্বাস করুন এর ঠিক আগের মুহূর্ত অবধি আমি জানতাম না যে প্রেম কী হয়। যদিও আমি একটু টমবয় ছিলাম কিন্তু অ্যাপারেন্টলি ছেলেদেরকেই রোমান্টিক্যালি পছন্দ করতাম। রাহুলের জন্য আমার মনে প্রেম চাগার দিতে শুরুই করেছিল কি একদিন রাহুল এসে আমাকে বললো যে সে টিনাকে ভালোবাসে। সেদিন আমি চার লিটার কেঁদেছিলাম আর মরিশাস ও স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন লোকেশনে গিয়ে স্যাড সং বাজিয়েছিলাম। তারপর হঠাৎ ফাইনাল ইয়ারের পড়াশোনা শিকেয় তুলে সব জিনিসপত্র নিয়ে মরিশাস ও স্কটল্যান্ডের সিন-সিনারির মাঝে একটি ভারতীয় রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে উঠে পরি বাড়ি ফিরে যাবার জন্য। যদিও রাহুলও মরিশাস ও স্কটল্যান্ডের সিন-সিনারির মাঝে ওই স্টেশনটি খুঁজে আমাকে ফিরিয়ে নিতে আসে কিন্তু ওকে আমি বলে দিই পড়াশোনার থেকে বুকের ব্যথা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। রাহুল ওটাকে গ্যাসের ব্যথা ভেবে আমাকে যেতে দেয়। এরপর সম্ভবত কলেজে থাকতে থাকতেই রাহুল আর টিনা বিয়ে করে নেয় আর পরের বছরই ওদের একটা মেয়ে হয়। বাচ্চা জন্ম দেবার পর টিনা রাহুলকে জানায় যে সে আর কিচ্ছুক্ষনের মধ্যেই মরে যাবে। তাই তারা শেষবারের মত আড্ডা মারে। আড্ডা শেষ হলে টিনা পটল তোলে আর রাহুল একা হয়ে যায়। এদিকে ওই শেষ কিছুক্ষণের মধ্যে রাহুলের সঙ্গে আড্ডার সময় বাঁচিয়ে টিনা তার মেয়ের জন্য নিজের হাতে আট খানা চিঠি লিখে যায় আর তার শ্বাশুড়ীকে বলে যায় প্রতি জন্মদিনে তিনি যেন তার নাতনিকে একটি করে চিঠি দেন। কারণ শেষের ওই কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যে সে এমন হিসেব করে চিঠিগুলো লেখে যাতে প্রতিটি চিঠি তার মেয়ে বয়স অনুপাতে বুঝতে পারে। চিঠিতে টিনা লেখে যে তার মেয়ে যেন আমাকে খুঁজে তার বাবার সঙ্গে আমার বিয়ে দেয়। টিনা বুঝতে পেরেছিল যে আমি আর রাহুল এতটাই লুজার যে ওর পটল তোলার পর আমরা আর কাউকে পটাতে পারবো না। কিন্তু না এই এত বছরে আমি আমার আগের উইগ খুলে চুল বড় করেছি, সুন্দর করে শাড়ি পরতে শিখেছি আর এমন চরম নাচ শিখেছি যে বাচ্চাদেরও নাচ শেখাই নিয়মিত কিন্তু কয়েক মাস। এদিকে অমন নামে একটি হ্যান্ডসাম, ভদ্র, সিঙ্গেল, আনম্যারেড ছেলের সঙ্গে আমার অ্যাঙগেজমেন্ট হয়ে যায়। কিন্তু আগের সেই বুকের গ্যাসের ব্যথাটা কিছুতেই না কমায় আমি একটু কনফিউজড হয়ে পড়ি অমনকে বিয়ে করা নিয়ে। ওদিকে রাহুলের মেয়ে টিনা যে আট বছর বয়সে কার্টুন ছেড়ে এম টিভি দেখে ঠিক খুঁজে বের করে নেয় আমি কোথায় বাচ্চাদের নাচ শেখাই। সে আর রাহুলের মা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয় আর আমার কাছে নাচ শিখতে থাকে। ওদিকে রাহুলও কয়েকদিন পর ওখানে চলে আসে আর আমাকে শাড়ি-মেক আপ লুকে দেখে নেয়। রাহুলকে দেখামাত্র আমার গ্যাসের ব্যথাটা বাড়তে থাকে আর একটা গান বেরিয়ে যায়। আমি জেনে যাই রাহুলের মেয়ে আসলে রাহুলের মেয়ে। এদিকে রাহুল আমার সঙ্গে ফ্লার্ট করতে থাকে কিন্তু আমি ওকে বলে দিই যে গ্যাসের ব্যথার জন্য আমি এখন জেলুসিল নিচ্ছি অর্থাৎ আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তারপর জেলুসিল শেষ হয়ে যাওয়ায় আমি ক্লাস শেষ না করেই ওখান থেকে চলে আসি অমনকে বিয়ে করব বলে। ওদিকে রাহুল অনেক ভেবে এটা বুঝতে পারে যে ও যেটাকে গ্যাসের ব্যথা ভেবেছিল সেই ব্যথাটা এখন ওরও হচ্ছে। তাই ও আমার বিয়েতে উইদাউট ইনভাইটেশন চলে আসে এটা জানার জন্য আমি আসলে কোন ব্র্যান্ডের এন্টাসিড নিচ্ছি। ওদিকে বিয়ের লগ্নে আমার গ্যাসের ব্যথাটা ভীষণ বেড়ে যায়। কিন্তু রাহুলকে দেখে অমন বুঝতে পারে যে রাহুল বেটার ব্র্যান্ডের এন্টাসিড নিয়ে এসেছে তাই সে রাহুলের হাতে আমার হাত তুলে দেয়। আমিও অমনের মত ভালো ছেলে ছেড়ে রাহুলের মত এমন ডাম্ব ছেলেকেই বিয়ে করি যার আবার অমন ইচড়ে পাকা একটি মেয়েও আছে। এখন আমাদের আর এন্টাসিড নিতে হয় না। ও হ্যাঁ আরেকটি কথা এই সিনেমা চলাকালীন এতবার আকাশ থেকে তারা খসে পড়ে যে সিনেমা শেষ হতে হতে অর্ধেক গ্যাল্যাক্সি ফাঁকা হয়ে যায়।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন