বীরবল মাঝেমধ্যে বিচারক বা কাজীর কাজও করতেন। একদিন এক ঘি বিক্রেতা এল তাঁর কাছে। বলল, ‘হুজুর, কিছুদিন আগে এক বন্ধুকে এক হাজার টাকা ধার দিয়েছিলাম। কিন্তু, সে এখন পাওনা টাকা দিতে অস্বীকার করছে।’
‘কোন প্রমাণপত্র বা রসিদ আছে?’ জানতে চাইলেন বীরবল।
ঘি-ওয়ালা বলল, ‘আজ্ঞে না। আমরা কোন রসিদ ব্যবহার করি না।’
বক্তব্য একটা কাগজে লিখে দিয়ে যেতে বললেন বীরবল। তাই করল ঘি-ওয়ালা। এরপর অভিযুক্ত ঘি-ওয়ালা ডেকে অভিযোগ নামা পাঠ করালেন ও বললেন, ‘এ বিষয়ে তোমা বক্তব্য কি?’
দ্বিতীয় ঘি-ওয়ালা বলল, ‘সব ডাহা মিথ্যা, হুজুর। উল্টো আমি তাকে মাঝে মধ্যে ধার-টার দিতাম।’
বীরবল আর কথা না বাড়িয়ে তাকে বিদায় করে দিলেন।
পরদিন আলাদা ভাবে দু’জন ঘি-ওয়ালাকে দু’টিন ঘি দিয়ে তা বিক্রি করে টাকা দিয়ে যাবার নির্দেশ দিলেন। ঘি-ওয়ালা চলে যাবার পর পরই বীরবল তাদের পেছনে গুপ্তচর লাগিয়ে দিলেন।
প্রথম ঘি-ওয়ালা বাড়ি ফিরেই কড়াইয়ে ঘি ঢালতেই টিনের তলায় একটা মোহর পেল। কালবিলম্ব না করে সে এসে সোজা বীরবলকে মোহরটি ফেরত দিয়ে গেল।
ওদিকে দ্বিতীয় ঘি-ওয়ালাও বাড়ি ফিরে টিন থেকে ঘি ঢালতেই একটা মোহর পেল। কিন্তু সে তা ফেরত দেয়া তো দূরেই থাক, ছেলের কাছে রাখতে দিল মোহরটি। বীরবল গুপ্তচর এসে এ ঘটনাটি জানিয়ে দিল।
দু’দিন পর দু’জনই ঘি বিক্রির টাকা নিয়ে এল। বীরবল যখন তাদের সাথে কথা বলছিলেন, তখন তার নির্দেশমত দ্বিতীয় ঘি-ওয়ালার ছেলেকে এনে হাজির করা হলো। ছেলেটি আসতেই বীরবল তাকে বললেন, ‘কি হে মোহর এনেছ।’ ছেলেটি তৎক্ষণাৎ মোহর বের করে দিতেই বীরবল আবার বললেন, ‘এটা কেন? দুটো মোহর দেয়নি তোমার বাবা?’
ছেলেটি বিস্মিত হয়ে বলল, ‘না তো। ঘি ঢালার পর টিনের তলায় একটা মোহরই ছিল। বাবা তো আমাকে সেটাই দিয়েছে।’
তার অপকর্ম প্রকাশ হয়ে পড়ল। বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় ঘি-ওয়ালা বন্ধুর টাকা তো ফেরত দিলই, উপরন্ত অসৎ কাজের জন্যে আরও পাঁচশ টাকা জরিমানা করা হল।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন