অ্যাশেজের ১০টি ক্রিকেটীয় মজার ঘটনা

৩১১৩ পঠিত ... ২২:২৬, জানুয়ারি ০৬, ২০১৮

ছোট্ট একটা ট্রফি, বড়জোর আমাদের এলাকার টং দোকানের চায়ের কাপের সমান। অথচ সেই ছোট্ট ট্রফির জন্য দুইটি দলের মধ্যে সে কি হুলুস্থুল প্রস্তুতি! নিন্দুকের বলে বিশ্বকাপে পর্যন্ত দল দুইটি পূর্ণ শক্তির দল পাঠায় না, পাছে আবার এই মহাগুরুত্বপূর্ণ সিরিজের আগে কেউ ইনজুরি আক্রান্ত হয়। একবার তো অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে পর্যন্ত এই সিরিজ নিয়ে তোলপাড়। ইংল্যান্ডের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় যায় যায়। হ্যাঁ, 'অ্যাশেজ'-এর কথাই বলা হচ্ছে। প্রায় ১৪০ বছর আগে শুরু হওয়া এই মহাকাব্যিক সিরিজের প্রতিটি মুহূর্ত ক্রিকেটফ্যানদের কাছে স্মরণীয়। এই সুদীর্ঘ ক্রিকেটীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা জন্ম দিয়েছে ছোট ছোট কিন্তু অদ্ভুতুড়ে এবং মজার সব গল্পের। সেরকমই ১০টি মজার ঘটনা উদঘাটন করেছে eআরকির 'ক্রীড়ারকি' দল।

১#

 

ইংল্যান্ডের রবিন স্মিথ নামে একজন ব্যাটসম্যান ছিলেন। লম্বা চুলে রাখতেন এবং সেই চুলের জন্য এক জাজের সাথে তাঁর চেহারা মিলতো বলে সতীর্থরা তাকে 'জাজ' নামে ডাকতেন। একবার অ্যাশেজে তিনি ব্যাট করছেন, বোলিং করছেন অস্ট্রেলিয়ার মার্ভ হিউজ, যিনি লম্বা গোঁফের জন্য বিখ্যাত। তিনি এসে স্মিথ কে তাচ্ছিল্য করে বললেন 'তুমি তো একটুও ব্যাটিং জানো না দেখছি হে'!
স্মিথ তখন কিছু না বলে পরের বলে চার মারলেন। এরপর মার্ভকে বললেন, 'শোনো মার্ভ, তুমি আর আমি একটা চমৎকার জুটি হব। আমি তো ব্যাটিং পারিই না, আর তুমিও বোলিংয়ে একদম যাচ্ছেতাই।'

২#

স্বল্পবুদ্ধির মানুষ হিসেবে ড্রেসিংরুমে ইংলিশ বোলার ফিল টাফনেল-এর কিঞ্চিৎ খ্যাতি(!) ছিল। অ্যাশেজে তিনি একবার বাউন্ডারির পাশে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করছেন। হুট করে এক অজি দর্শক ফিল-কে উদ্দেশ করে বলে বসলো, 'হেই টাফনেল! তোমার মগজটা আমার একটু দরকার। একটা ইডিয়ট বানাবো ভাবছি।'

৩#

সাল ১৯৬৮, অ্যাশেজের ওভাল টেস্টের পঞ্চম দিনে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা খুবই নাজুক। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৮৬ রানেই ৫ উইকেট নেই। এমন সময় শুরু হলো বৃষ্টি। যেন ক্রিকেট ঈশ্বরের আশীর্বাদ নেমে এলো অজিদের উপরে। নিশ্চিতভাবেই আর খেলা চালু হওয়ার উপায় নেই। কিন্তু বিধি বাম! হাতের কাছে রুমাল, চাদর, টাওয়েল যা পাওয়া গেলো তাই নিয়ে মাঠ শুকানোর কাজে লেগে গেলেন উপস্থিত দর্শকরা। ফলাফল- খেলা আবার শুরু হলো! এরপর যা হওয়ার তাই... ম্যাচ শেষ হতে যখন আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি, তখন অজিদের শেষ উইকেটের পতন ঘটে। সেদিন ক্রিকেট ঈশ্বরকে পরাজিত হতে হয় সাধারণ মানুষের কাছে। মাঠের দর্শকরা যে নিশ্চিতভাবেই অনেক রাত পর্যন্ত এলাকার পাবগুলোতে হই-হট্টগোল করেছিলেন তা নিশ্চয়ই কাউকে বলে দিতে হবে না।

৪#

মাইকেল আথারটন বিখ্যাত ছিলেন তাঁর ধীর-স্থির ইনিংস গুলোর জন্য। একবার অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাশেজের এক ম্যাচে আথারটন ব্যাটিং করছেন। বল সম্ভবত ব্যাট ছুঁয়েই পৌঁছেছিল ফিল্ডার হিলির কাছে। কিন্তু আম্পায়ার হিলির আবেদনে সাড়া দেননি। আথারটনও নির্বিকার। ইয়ান হিলি তাকে বলে বসলেন 'তুমি একটা চিটিংবাজ' প্রত্যুত্তরে মাইক তাকে যা বললেন তার ভাবানুবাদ দাঁড়ায়, 'যস্মিন দেশে যদাচার, খোকা!'

৫#

কোনো এক অ্যাশেজ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান রডনি মার্শ মুখোমুখি হয়েছেন বোলার ইয়ান বোথামের (তাঁর ডাকনাম ছিল 'বিফি')! বিফিকে খোঁচানোর লোভ সামলাতে না পেরে রডনি জিজ্ঞেস করে বসলেন, 'বিফি, তোমার বউ আর আমার পিচ্চিগুলো কেমন আছে?' বোথাম তাকে পাল্টা জবাব দিলেন, 'আমার বউ ভালই আছে, কিন্তু তোমার বাচ্চাগুলো সব প্রতিবন্ধী'!

৬#

ক্রিকেটার হিসেবে অপেক্ষাকৃত মোটা বলে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মাইক গ্যাটিংকে নিয়ে তাঁর সতীর্থরাও ঠাট্টা–মশকরা করতো। সেক্ষেত্রে স্লেজিংয়ে পারদর্শী অজিরা যে তাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না তা বলাই বাহুল্য। একবার অজি পেসার ডেনিস লিলি বল করার সময় ব্যাট করতে থাকা গ্যাটিংকে বললেন, 'গ্যাট, তুমি একটু সরে দাঁড়াও তো। তোমার জন্য আমি একটা স্টাম্পও ভাল করে দেখছি না।'

৭#

ডেনিস লিলি অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলারদের একজন। মাত্র ৫৬ টেস্টে তিনি ৩০০ উইকেট নিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের অ্যাশেজের কোনো এক ম্যাচে বল করার সময় ইংল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার ডেরেক আন্ডারউড-কে তিনি একটি বাউন্সার দেন। বাউন্সারটি আন্ডারউডের হাতে এসে বেশ জোরেই লাগে। পরিস্থিতি বুঝে অজি অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল স্লিপ থেকে দৌড়ে এসে প্রশ্ন করেন 'তুমি কি ঠিক আছো? কোন হাতে লেগেছে?'
ব্যথায় কাতরআন্ডারউড উত্তরে বলেন “ডান হাত”
'খুব খারাপ। লিলির উচিত ছিল বলটা তোমার বাম হাতে লাগানো...' চ্যাপেলের উত্তর!

৮#

২০০৬-০৭ এর অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট, ভেন্যু অ্যাডিলেড। ইংল্যান্ড আগে ব্যাট করে করেছে ৫৫১ রান, পল কলিংউড হাঁকিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি। জবাবে অজিরা করেছে ৫১৩। এই দুই পাহাড়সম ইংনিস ধারণ করতে গিয়েই চারদিনের খেলা শেষ, বাকি মাত্র আর একদিন। চতুর্থ দিনের খেলা শেষে মাইকেল ক্লার্ককে পাঠানো হলো সংবাদ সম্মেলনে। আত্মবিশ্বাসী ক্লার্ক বলে বসলেন, তাদের দল এখনো এই ম্যাচে জয়ের আশা দেখছে। শুনে সাংবাদিক মহলে হাসির রোল। হাসি আসাটাই যৌক্তিক, তখনো ইংল্যান্ড নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৭ রানে এগিয়ে ছিল, হাতে বাকি ৯ উইকেট। সবাই নির্ঘাত ক্লার্ক কে পাগল ঠাউরে বসেছিল ওইদিন।
পরের দিন অবশ্য গতদিন হেসে খুন হওয়া সাংবাদিকরাই বিস্ময় চেপে রাখতে পারেন নি। পঞ্চম দিন শেষে যে টেস্টটা ড্র হয় নি, ম্যাচটা সত্যিই জিতে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ শেষে ক্রিজে ২১ রানে অপরাজিত আগের দিন সংবাদ সম্মেলনের হাসির খোরাক হওয়া সেই ক্লার্ক।

৯#

২০০৫-এর অ্যাশেজে দুর্দান্ত বোলিং করে ইংল্যান্ডের সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিলেন যে চারজন, তাঁর মাঝে একজন ছিলেন হার্মিসন। ২০০৬-০৭ মৌসুমে ইংল্যান্ড যখন অস্ট্রেলিয়াতে ফিরতি সিরিজ খেলতে যায়, স্বভাবতই প্রত্যাশার চাপটা হার্মিসনের উপর কিছু বেশিই ছিল। কিন্তু সেই অ্যাশেজের শুরুটাই হার্মিসনের জন্য পাশাপাশি ইংল্যান্ডের জন্য নিয়ে এসেছিল অশনি সংকেত। প্রথম ম্যাচে হার্মিসনের করা সেই প্রথম বলটি এতটাই বাজে বল ছিল, সেটা ব্যাটসম্যানের কাছে না পৌঁছে সোজা উইকেটকিপার থেকে দশ হাত দূরে সেকেন্ড স্লিপে দাঁড়ানো ফ্লিনটফের কাছে যায়। সেই সিরিজে ৬১.৪ গড়ে মাত্র দশটি উইকেট নেওয়া হার্মিসনের বোলিং বিশ্লেষণের এক পর্যায়ে ধারাভাষ্যকার বিল লরি বলে বসেন 'সে (হার্মিসন) এখন সম্পূর্ণ হার্ম–লেস'!

১০#

মার্ক ওয়াহ এবং স্টিভ ওয়াহ। ক্রিকেটের জগতে এই দুই ভাইয়ের নাম শোনেনি এমন মানুষ নেই বললেই চলে। দৃষ্টি নন্দন ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি সানগ্লাস পরে খুব স্টাইলিশ ভাবে ফিল্ডিং করতেন মার্ক। তবে সমালোচকরা বড় ভাই অর্থাৎ পরিশ্রমী স্টিভকেই বেশি পছন্দ করতো। কোনো এক অ্যাশেজে ইংলিশ বোলার জিমি ওরমন্ডকে উদ্দেশ করে মার্ক বলে ওঠেন 'তুমি তো মোটেই ইংল্যান্ড টিমে খেলার মতন খেলোয়াড় নও!'
'হতে পারে, কিন্তু আমি অন্তত এটুকু দাবি করতেই পারি যে আমি আমার পরিবারের সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়', ওরমন্ডের পাল্টা জবাব!

ডিজাইন: মাসরুর সাদীদ

৩১১৩ পঠিত ... ২২:২৬, জানুয়ারি ০৬, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top