ছোটবেলা থেকে অজানার প্রতি টেসলার ছিলো তীব্র কৌতূহল। বলা হয় এই কৌতূহল তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিল একটি বেড়াল। টেসলার শৈশব কেটেছে ক্রোয়েশিয়ার একটি নির্জন খামারবাড়িতে। সেখানে তার প্রিয় সঙ্গী ছিলো ম্যাচেক নামের বড় জাতের একটা বেড়াল। সার্বিয়ান ভাষায় ম্যাচেক মানে পুরুষ বেড়াল। পরবর্তীতে টেসলা ডায়েরিতে তার শৈশবের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ম্যাচেকের বর্ণনা দিয়েছেন ‘বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট বেড়াল’ বলে।
৫-৬ বছর বয়স পর্যন্ত টেসলার বিজ্ঞানের প্রতি কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। একবার তিনি দেখলেন, তুষারের মানুষের পদচ্ছাপ থেকেও উজ্জ্বল আভা বের হতে দেখা যাচ্ছে (শুষ্ক আর তীব্র শীতের দিনে প্রচুর পরিমাণে স্ট্যাটিক ইলেক্ট্রিসিটির চার্জ জমা হয়)। স্নোবল দেয়ালে বা গাছে ছুড়ে মারলে আতশবাজির মতো বিস্ফোরিত হচ্ছিল। এই অদ্ভুত (আপাতদৃষ্টিতে) ঘটনাটিই তাকে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
তবে সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে টেসলার প্রিয় সঙ্গী ম্যাচেকের সাথে।
‘সন্ধ্যায় আমি ম্যাচেকের পিঠে হাত দিয়ে চাটি মারলাম আর এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটল যে আমি আনন্দে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।’– পরবর্তীতে স্মৃতিচারণায় লিখেছেন টেসলা- ম্যাচেকের পিঠ যেন আলোর আস্তরণ। আমার হাত সশব্দে এমন স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করলো যে সারা বাড়ি থেকে শোনা গেলো।’ এমনকি অন্ধকার রুমে বেড়ালটা হাটার সময়ও গা থেকে আলোর আভা বের হচ্ছিলো।
টেসলা আরও লিখেছেন, ‘মাকে খুব একটা অখুশি মনে হলো না, যদিও সে বললো, ‘বেড়ালটার সাথে খেলা বন্ধ করো। যেকোনো সময় আগুন লেগে যেতে পারে।’ কিন্তু আমার মাথায় তখন বিমূর্ত চিন্তা। ‘প্রকৃতি নিজেই কি দানবীয় এক বেড়াল? যদি তাই হয় তাহলে বেড়ালের পিঠে চাটি কে মারে? সেই আশ্চর্য রাতের প্রভাব আমার শিশু মনের কল্পনায় যে কতটা ব্যাপক ছিলো তা বলে শেষ করা যাবে না। দিনের পর দিন নিজেকে প্রশ্ন করেছি, ইলেক্ট্রিসিটি কী?’
সেই আলো আর আলোকিত বেড়াল বালক টেসলার কল্পনাকে এমনই প্রভাবিত করেছিলো যে জীবনভর ইলেক্ট্রিসিটি বুঝতে কাজ করেছেন তিনি।
অনেকে বলেন, টেসলা তার কাজের মাধ্যমে বিশ শতকের বিশ্ব ইতিহাস বদলে দিয়েছেন। যদি সেটিই হয়ে থাকে বিশ্ব ম্যাচেকের কাছে কিছুটা হলেও ঋণী যে টেসলাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন