ভাঙনের খেলা খেলব

৮৩ পঠিত ... ১৭:১৭, অক্টোবর ২০, ২০২৪

1 (17)

আওয়ামীলীগের ফ্যাসিস্ট সহমত ভাই ও সহমত ভাইয়ের প্রয়োজনীয় সমালোচনায় ব্যস্ত থাকায়; বিএনপির রহমত ভাই ও জামায়াতের শরিয়ত ভাইদের সমালোচনা করার সময় হয়ে ওঠে না। তবে জাতীয় নির্বাচন যেদিনই হোক; জেনজি'দের একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির অভিষেক হবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সৈনিক হিসেবে তারা অতন্দ্র থাকবে। জনগণের ভোটে খুব সম্ভব ক্ষমতায় যাবে বিএনপি; আর অল্প কিছু আসন পেলেও ক্ষমতা-কাঠামোর কথামালার রাজনীতিতে জামায়াতের গুরুত্ব রয়ে যাবে। তাই তাদের দুটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন মনে করছি।  

ফ্যাসিস্ট  সহমত ভাই ও শিবব্রত দাদার সাম্প্রতিক পরিণতি দেখে শিক্ষা নিতে হবে রহমত ভাই ও শরিয়ত ভাইকে। সহমত ভাই ও শিবব্রত দাদা রাষ্ট্রকে ব্যক্তিগত টাকা বানানোর মেশিনে পরিণত করেছিল। গরীবের ছেলে, ২০০৮ সালে যে কুঁড়ে ঘরে ছিলো, পান্তা ও বাটার বন কলা খেয়ে দিন গুজরান করত, হেঁটে অথবা পাবলিক বাসে ঘেমে শার্টের কলারে চিতে পড়ে যেতো; তারা ২০০৯ সালে নৌকায় বসে দ্রুত ধনী হবার ইঁদুর দৌড়ে নেমে পড়ে। লুণ্ঠনের টাকায় তারা পাঁচতলা দালান বানিয়ে সেখানে ওঠে, প্রতিদিন বিরিয়ানি-পেস্ট্রি ও পাস্তা খাওয়া শুরু করে, পোরশে গাড়িতে বসে চর্বি এলিয়ে দেয়। তারা মনে করেছিলো তারা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদার বাবু হয়ে পড়েছে; তাই দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে কলকাতা, দিল্লী-দুবাই ও পশ্চিমা দেশগুলোতে সেকেন্ড হোম কেনে। ক্ষমতার নেশায় তারা ভিন্নমতের মানুষ খেয়ে ক্যানিবাল হয়ে ওঠে। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উতখাত করা হলে; কিছু সহমত ভাই ও শিবব্রত দাদা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। অনেকে বিচারের ভয়ে দেশেই লুকিয়ে আছে।

এতো সতেজ পতনের দৃশ্য; মাত্র দুই মাসে সহমত ভাই ও শিবব্রত দাদার চেহারা সুরত ২০০৮ সালের মতো বিবর্ণ হয়ে যাওয়া; এসব দেখে বিএনপির রহমত ভাই ও জামায়াতের শরিয়ত ভাইকে এক্ষুণি সাবধান হতে হবে। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট, আপনাদের চেহারা ঠিক যেরকম ছিলো, গৃহ ঠিক যেমন ছিলো, খাবার প্লেটে ঠিক যেরকম খাবার ছিলো, ঠিক যেরকম যানবাহনে চড়তেন আপনারা; ঐটুকু ধরে রেখে রাজনীতি করুন। সাদাসিধে জীবন যাপন না করলে রাজনীতিতে সফল হওয়া যায় না। রহমত ভাই গিয়ে সহমত ভাইয়ের চিংড়ির ঘের, জলমহাল, বালুমহাল দখল করলে, শরিয়ত ভাই গিয়ে শিবব্রত দাদার মিডিয়া দখল করে, নতুন প্রশ্ন নয় প্রশংসার আসর শুরু করলে, তেলাঞ্জলি সাংবাদিকতার পুনরাবৃত্তি করলে; ফলাফল নিম্নচাপ; আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে আবার সেই ২০০৯ থেকে অগাস্ট ৫, ২৪-এর বিবর্ণ দিনগুলো।

 ২০০১-০৬ জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট পেয়েও; দ্রুত ধনী হবার নেশায়, দ্রুত ইসলামপন্থা কায়েমের নেশায়, রহমত ভাই ও শরিয়ত ভাইয়ের জীবনে যে বিপদ নেমে এসেছিলো; ঐ অভিজ্ঞতা স্মরণে না রাখলে; বুঝতে হবে রহমত ভাই ও শরিয়ত ভাইয়ের বিনাশ এড়ানো যাবে না। ২০০৯ সালে জনগণের ম্যান্ডেট পেয়ে দ্রুত ধনী হওয়া ও হিন্দুত্ববাদ-ইসলামপন্থার সম্মিলিত বিষ পরিবেশন করে আজ কি চেহারা হয়েছে আওয়ামী লীগের লোকেদের; তা বার বার দেখুন। সাবেক আইনমন্ত্রী কারাগারে শুকিয়ে এতোটুকু হয়ে গেছেন, জাসদ নেতা ইনুর গাল ভেঙ্গে গেছে, মেননের ভয় পাওয়া চোখগুলো, দরবেশের ক্লিনসেভড গাল ও লুঙ্গি, কলকাতায় সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ভিখিরি বেশ, নওফেলের বিবর্ণ সন্ন্যাসীর চেহারা, হারুন-মনিরুলের আবার সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মতো বিষণ্ণ মুখ; অপু উকিলের অভিজাত পল্লীর করে সাজানো মুখচ্ছবিতে আজ জেলেপাড়ার পোড়খাওয়া বিষাদ, ঈশ্বর নেই পলাতক পল্লীতে। ঈশ্বর বসবাস করেন কেবল সত মানুষের জীবন চর্যায়। সাড়ে চুয়াত্তর টিভিতে রুমাল দত্ত আর জয় হিন্দ বাবুর যে উদ্ধত চেহারা; তা আজ দাড়ি গোঁফ কেটে কারাগারে। সুভাষ সিঙ্ঘ-দের পণ্ডিত হয়ে ওঠার গোলগোল চেহারাগুলো আজ কোন গোবরডাঙ্গায় লুকিয়েছে কে জানে।

হে রহমত ভাই ও শরিয়ত ভাই, ওরা যদি ঘুঁটে পোড়ার দৃশ্য হয়; সাবধান না হয়ে ওদের মতো ঔদ্ধত্য দেখালে; আপনি আজকের হাসিমুখ গোবর।

কোন রাজনৈতিক দল, কোন ইজম কিংবা আদর্শ দেশের মালিক নয়। এমনকি যারা জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরিয়ে এখন সরকার পরিচালনা করছেন; তারাও দেশের মালিক নন।

 দেশের মালিক হচ্ছেন দেশের সাধারণ মানুষ, যারা ফসল ফলায়, শ্রম দেয় দেশে বিদেশে, যারা অর্থনৈতিক মুক্তির যুদ্ধে জেগে আছেন। যারা বৃটিশ আমল ও পাকিস্তান আমলের ঔপনিবেশিক শাসনের শেকল ছিঁড়ে; স্বাধীন বাংলাদেশ আমলেও পায়ে অদৃশ্য শেকল নিয়ে দাসের জীবন যাপন করছেন। এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের সুফল কুড়ানো উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্তের লজ্জা হওয়া উচিত। ৫৩ বছর হয়ে গেলো, অথচ অন্ন-বস্ত্র- বাসস্থান-চিকিতসা-শিক্ষার স্বাধীনতা পায়নি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ।

বাংলাদেশ মানে রাজনীতি ব্যবসায়ী, ধর্ম ব্যবসায়ী, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, এনজিও জমিদার ও ব্যবসায়ীর দেশ লুন্ঠন ও শ্রম শোষণের বিষাদসিন্ধু। এ অসভ্য বৈষম্য ধূসর অবস্থা কোনভাবেই চলতে দেয়া যায় না। কল্যাণ রাষ্ট্র না হলে সেটা কোন রাষ্ট্রই নয়।

কেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, ক্ষুদে দোকানি, ফেরিওয়ালা ও ভিক্ষুককে পালা করে সহমত ও রহমতকে চাঁদা দিতে হবে; আর পালা করে শিবব্রতের অখণ্ড ভারত চেতনা ও শরিয়তের খেলাফত চেতনার বাকোয়াজ শুনতে হবে। এই দেশে শিবব্রত আর শরিয়তের কাজ হচ্ছে খেলনা ইস্যু এগিয়ে দিয়ে কলতলার হৈ চৈ সৃষ্টি করা; কুঁচকুঁচানি হিন্দু-মুসলমান, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি-বিপক্ষের শক্তি ইত্যাদি কাল্পনিক বিভাজন সূত্র রচনা করা। আর ঐ হৈ চৈ ডামাডোলের মাঝে সহমত ও রহমতের কাজ হচ্ছে দেশ ডাকাতি ও জনগণের হক মেরে বিদেশে পাচার।

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ৫৩ বছর ধরে চলেছে। ফুল মি ওয়ান্স, শেম অন  ইউ, ফুল মি টুয়াইস শেম অন মাইসেলফ। বাংলাদেশের মানুষকে বার বার বোকা বানিয়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ হয়ে গেছে। একই কাজ যদি বিএনপি বা জামায়াত কেউ করতে চেষ্টা করে; তারাও উচ্ছেদ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের তো পার্শ্ববতী স্বামীর সংসারে শাবানার মতো ভাত রান্না করে বেঁচে থাকার অবলম্বন আছে। আপনাদের আশ্রয় দেবার মতো তেমন কেউ নেই। বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোন গন্তব্য নেই বাকিদের।

ফইন্নির ছেলের ভি আই পি সেজে ঘুরার যে রাজনীতি, এই রাজনীতির কবর ৫ অগাস্টে হয়ে গেছে। নতুন রাজনীতি খুঁজতে হবে জেন জি'র বাংলাদেশ টু পয়েন্ট ও'তে।

সহমত হেলমেট পরে গুলি করে জেন জি-কে হত্যা করে শেষ করতে পারেনি; ঘাতক পুলিশ বলেছে, একজনরে গুলি করলে সে পড়ে মারা যায়, কিন্তু বাকিরা সরে না; দাঁড়াইয়া থাকে। রহমতকে এই ব্যাপারটা খুব পরিস্কার ভাবে বুঝতে হবে। শিবব্রত জেন জিকে রাজাকার, হিজবুত, জিন্নাহ'র বাচ্চা কত গালি দেয়া ন্যারেটিভ তৈরির অপচেষ্টা করেছে; কিন্তু বেঁচে থেকেছে সেই অমোঘ সত্য; এরা বাংলাদেশের অগ্নিসন্তান; ওদের বুকে কল্যাণরাষ্ট্রের আলো জ্বালানোর আগুন। কাজেই শরিয়তকে ওদের বিরুদ্ধে নাস্তিক, মালাউন, শিরক কারী ইত্যাদি ন্যারেটিভ তৈরির অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে। ১৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্টের স্মৃতি মনে করে দেখুন, এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে সৃষ্টি কর্তা ছিলেন। অচলায়তন ভেঙে মুক্ত বাংলাদেশ সৃষ্টির মাস্টারমাইন্ড এই বাংলাদেশের আলো হাওয়া, এই রক্ত রঞ্জিত মাটি, সেই সবুজ বৃক্ষ যেইখানে ওরা লালসবুজ পতাকা বেঁধে দিয়েছিলো।

রহমত ভাই ও শরিয়ত ভাই আর পরাজিত সহমত ভাই ও শিবব্রত দাদা, ২০২৪ -এর বাংলাদেশ মায়ের শক্তি কল্পনা করুন; যারা সন্তানকে বিপ্লবে পাঠিয়ে নিজেরাও মুক্তির মিছিলে পাশে দাঁড়িয়ে বিপ্লবী হয়েছেন, সন্তানের মৃত্যু যন্ত্রণা বুকে নিয়ে লাখো সন্তানের জন্য ঐ হাসিনার দোজখ থেকে মুক্তির প্রার্থনা করেছেন।

আগামীতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত এই জেনজি প্রজন্মের বুকে একটিও গুলি চালানোর আগে পুলিশ-প্রশাসন-গোয়েন্দা সংস্থার খুনে ডিএনএ-রা সাবধান হয়ে যান। রহমত কিংবা শরিয়ত হেলমেট পরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বীরত্ব দেখানোর আগে মনে করুন পরাজিত সহমত ঘাতক সাদ্দামের মুখ। যেসব বর্বরতা, নরভোজিতা, অশ্লীলতার ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ৫৩ বছরের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, আমলাতন্ত্র, ভি আই পি কালচার ও কালো ব্যবসা; তার অবসান ঘটাতে ভাঙ্গনের খেলা খেলার আদেশ করেছেন বাংলাদেশ মা। এই ভাঙ্গনের খেলায় ফেলে দেয়া তাসের ঘরের চিহ্ন মিশিয়ে দিয়ে; সেইখানে নির্মিত হবে কল্যাণরাষ্ট্রের ঠিকানা; এই প্রত্যাশা রাখি গভীরভাবে।

৮৩ পঠিত ... ১৭:১৭, অক্টোবর ২০, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top