ছাত্রলীগ, শিবির ও দলের দিবাস্বপ্ন

১৭০ পঠিত ... ১৬:৩৪, অক্টোবর ০৯, ২০২৪

32 (14)

ছাত্রলীগের রবার্ট মুগাবে দুপুর বেলা ফেসবুকে দুঃসংবাদ দেখতে দেখতে ভারাক্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের মধ্যে দেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার আলোচনা করছে থ্রি জিরো নিয়ে। বুদ্ধিজীবীরা চশমা পরে গাল চুলকে হাতের মুদ্রায় গ্রামসি ও হামজালাভিকে এনে রাষ্ট্রসংস্কার সম্পর্কে কঠিন কঠিন কথা বলছেন। এমন সময় মিলনায়তনের জানালার কাছে রামায়ণের হনুমানের মতো আরাফাতকে উড়তে দেখা যায়। সে চিতকার করে বলে, জুলাই মাসে মাত্র পাঁচ পারসেন্ট গুলি খরচ হয়েছে; বাকি সব আমার পকেটে। হঠাত শ্রীকৃষ্ণের রথে চড়ে কাদের ঢুকে পড়েন মিলনায়তনে। নরেন্দ্র মোদী কৈলাসে ধ্যানমগ্ন। রামসেনারা একটা বিমানে চেপে ঢাকা বিমানবন্দরে নেমেছে; জয় শ্রীরাম বলে তারা ঢাকার পথে নেমে খুঁজছে, কোথায় বৈষম্য বিরোধী! ইউনুসকে তড়িঘড়ি করে হেলিকপ্টারে তুলে দেয়া হচ্ছে; দরবেশের দাড়ি আবার কিছুটা গজিয়ে যাওয়ায় তিনি সেনানিবাসে পৌঁছেছেন তারেক সিদ্দিকির সঙ্গে বৈঠক করতে। আলো আসবেই গ্রুপ শহীদ মিনারে "জয় বাংলা বাংলার জয়" গান গাইছে। শাহবাগে আবার বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে। জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে জয় বাংলা জয় হিন্দ এডিটরস গিল্ট পৌঁছে গেছে সাড়ে চুয়াত্তর টিভিতে। রুমাল দত্ত পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে হিসাব দিচ্ছেন সেই ১৯৭০ সালে কত শতাংশ লোক আওয়ামী লীগে ভোট দেয়নি; তারাই কিভাবে রাজাকার হয়ে উঠেছে; আর মুক্তিযোদ্ধা হিন্দুদের ওপর হামলা চালিয়েছে ৫ অগাস্টের পরে। ফেসবুকে সহমত, শিবব্রত ও ললিতা চ-বর্গীয় ফেস্টিভ্যাল করছে। সাদ্দাম আবার র‍্যাম্পের মডেলের মতো হাঁটছে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। রবার্ট মুগাবে ফিনিক্স পাখির মতো উড়ছে টিএসসির মাথায়।  আর আকাশে একটা ম্যাজিক কার্পেটে চড়ে  হাসিনা ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করছেন।

: ওঠো মুগাবে চারটা ভাত খাইয়া লও।  

হারুনের ভাতের হোটেল কলকাতা শাখা মুগাবেকে ধাক্কা দিয়ে তুলে। মুগাবে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে গাইতে থাকে, একদিন ঘুম ভেঙে দেখি, সুখের সমুদ্র শুকিয়ে গেছে।

সদ্য আত্মপ্রকাশ করা ছাত্রশিবিরের খোমেনি এপিজে আবুল কালামের উদ্ধৃতি, স্বপ্ন তা নয় যা মানুষ ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন তা যা  মানুষকে ঘুমাতে দেয় না; পড়তে পড়তেই গভীর ঘুমে কাদা হয়ে যায়। দেখে শিবিরের ছেলেরা অটোমান সৈনিকদের মতো পোশাক পরে বায়তুল মোকাররমের সামনে মার্চ পাস্ট করছে। খোমেনি একটি রেশমী বালিশে কাত হয়ে শুয়ে তজবিহ জপছে। চারটি বিবি তার সামনে বসে। সবাই অনুযোগ করছে, কাজ করতে করতে হাত ক্ষয়ে গেলো। যান হুজুর আপনি গুলশান বারিধারার দাস দাসীর হাট থেকে কয়েকজন কর্মঠ দাস-দাসী এনে দিন। বঙ্গভবনে খেলাফতের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কপালে নামাজ পড়ে কালো দাগ পড়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে অতিথি প্রবেশ করানো হচ্ছে। ফার্মগেটে কয়েকটি অদ্ভুত উট হাঁটছে বিজয়ী বীরদের পিঠে নিয়ে। পেছনে পেছনে কয়েকটি কলেজের ছাত্র কালেমা লেখা পতাকা নিয়ে হাঁটছে। রাবেয়া আপা ঘোড়ায় চড়ে ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করে বেপর্দা নারীদের বেত্রাঘাত করে একটি করে হিজাব উপহার দিয়ে বেড়াচ্ছে। মাথায় পাগড়ি বেঁধে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন খলিফা শফিক। শাহবাগে খেজুর ও মিছওয়াক বিতরণ করা হচ্ছে। খেলাফতের সৈনিকরা পথচারীদের টুপি উপহার দিচ্ছে। চুল-দাড়ি কাটার দোকানগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে কেরাত প্রতিযোগিতা। হাইকোর্টের মাজার গুড়িয়ে দিচ্ছে খিলাফতের বুলডোজার। রেডিওতে খালি গলায় গান পরিবেশন চলছে, এ কোন মধুর শরাব দিলে আল আরাবি সাকি। কিছুক্ষণ পর পর ফিলার বাজছে, ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি ইঞ্চি ইঞ্চি।

হঠাৎ আবদুল্লাহর ধাক্কায় ঘুম ভাঙে খোমেনির, ওডো ওডো আসরের ওয়াক্ত যায় যায়।

খোমেনি জড়িয়ে ধরে আবদুল্লাহকে, দোস্ত একি মধুর স্বপ্ন দেখাইলেন আল্লাহ আমারে।

অন্তর্বতীকালীন সরকার এসে পড়ায় ক্ষমতার অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে পার্টির নতুন অফিসে চেয়ারে বসে কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ছাত্রদলের আনোয়ার সাদাত। স্বপ্নে দেখে বিমানবন্দরে তারেক রহমান নেমেছেন; ফুল হাতে নিয়ে ভেউ ভেউ করে কাঁদছে সাদাতেরা। টিভিতে গান বাজছে, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ। শফিক রেহমান এক ডালা গোলাপ নিয়ে পৌঁছে গেছেন খালেদার বাসায়। মাহমুদুর রহমান বৈঠক করছেন সেনাপ্রধানের সঙ্গে। এতোদিন পদবঞ্চিত সরকারি কর্মচারিরা সচিবালয়ে মিছিল করছে, আমরা সবাই জিয়ার সেনা; আমায় একটা লুক্রেটিভ পোস্টিং দে না! জাসাসের লোকেরা শাহবাগে কোদাল ও ডালি হাতে খাল কাটার ইন্সটলেশন আর্ট এক্সজিবিশন করছে। ব্যবসায়ীরা শহরময় বিরিয়ানি বিতরণ করছে। লুতফুজ্জামান বাবর সদ্য দখলকৃত সাড়ে চুয়াত্তর টিভিতে বলছেন, উই আর লুকিং ফর মিত্রজ। ফেসবুকে রহমত ভাইয়েরা এতোকালের নীরবতা ভেঙ্গে শত্রু চিহ্নিত করতে শুরু করেছে, এই লোক জুলাই বিপ্লবের পক্ষে থাকলেও অতীতে শাহবাগী ছিলো। সুমাইয়া আপারা দেখিয়ে দেয়, ঐ লোক জুলাই বিপ্লবে ভূমিকা রাখলেও সে কথায় কথায় বঙ্গবন্ধু বলে। জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের কয়েকজনের অভিভাবককে ক্ষতিপূরণের চেক হাতে তুলে দিয়ে অশ্রুসিক্ত মীর্জা ফখরুল। রিজভী শান্তি নিকেতনী শাল পরে কাব্য করছেন, তুমি এলে অনেকদিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো। রুমিন ফারহানা অবিরত হাসছেন বিভিন্ন টিভি টকশোতে। পার্লারে দেরি হয়ে যাওয়ায় টকশোতে দেরিতে আসছেন শামা ওবায়েদ। নিপুণ রায় জনগণের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করছেন। আনোয়ার সাদাত গদিঘরে আধশোয়া, বাদামতলীর মাঝিরা এসেছে জিজিয়া কর দিতে, ঝুট কাপড়ের ব্যবসায়ীরা এসেছে নজরানা নিয়ে। সাদাত শুধু বলে, হাইকমান্ডের নিষেধ করেছে; তবু খুশিমনে দিচ্ছেন যখন না বলি কেমনে!

বন্ধু সালেক এসে ধাক্কা দিয়ে তোলে, অই সাদাত হুনছোস বার দখলের অপরাধে কালু-লালু ভাইয়ের পদ স্থগিত হইছে।

মন খারাপ করে সাদাত ফেসবুক সার্ফিং করার সময় দেখে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তার ইন্টারভিউতে মতিউর রহমানকে বলছেন, আসল হচ্ছে সংস্কার; সংস্কারের প্রশ্নে দেশবাসী একত্র হয়েছে; এই সুযোগ জাতির জীবনে আর আসবে না; একে কাজে লাগান। কেন নতুন প্রজন্মকে আটকে রাখবেন পুরাতন জঞ্জালে; তারা যেভাবে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে চায় তাদের করতে দিন।

১৭০ পঠিত ... ১৬:৩৪, অক্টোবর ০৯, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top