অতিরঞ্জনবাজার পত্রিকা

১৫২ পঠিত ... ১৫:৫৪, অক্টোবর ০৮, ২০২৪

23 (22)

বার্তা সম্পাদক অতিরঞ্জন বাড়ুজ্যে ভাঁড়ের চা খেতে খেতে একটা চারমিনার ধরায়। কুণ্ডলি পাকানো ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে ভাবতে থাকে, বাংলাদেশ রিপোর্টিং-এর এংলিংটা কী হতে পারে। এমন সময় ঢাকা থেকে অতিহোত্রীর ফোন আসে, দেখা গেছে আকাশে খেলাফতের চাঁদ দেখা গেছে। হোয়াটস অ্যাপ চেক করুন ছবি পাঠিয়েছি। হিজবুত তাহরিরের মুখপাত্র গ্রেফতার হয়েছে। ব্রেকিং লাগিয়ে দিন মশয়।

অতিরঞ্জন বাড়ুজ্যে নিউজরুমে ফিরে গদিপাবলিক বাংলা চ্যানেল চালিয়ে দিতেই দেখে অতিরঞ্জন ঘোষ নেত্য করছে, মুহম্মদ ইউনুস একি করলেন আপনি; সাজানো গোছানো সংসারটা তছনছ করে দিলেন! খাবোনা আপনার পাঠানো ইলিশ মাছ; ওতে হিন্দুদের রক্ত লেগে আছে; আমাদের ডায়ামন্ড হারবারে মুসলমানের রক্ত মাখা অনেক ইলিশ পাওয়া যায়; এসে খেয়ে যেতে পারেন।

বাড়ুজ্যের স্ত্রী ফোন করে, ওগো বাংলাদেশের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে; দাম একটু বেশি; কিনে নিই আড়াইশো গ্রাম কি বলো!

: খবরদার; বয়কট বাংলাদেশের ইলিশ; তারচেয়ে বরং থানকুনি পাতার ঝোল খেয়ে বেঁচে থাকবো!

: ধ্যাত! পেট ভর্তি হিংসে গো তোমার; আমি জিদ করে এবার ১ কেজি ইলিশ কিনব; তোমায় দেখিয়ে দেখিয়ে খাব।

বাড়ুজ্যে বিরক্ত হয়ে আবার একটা চারমিনার ধরায়। সুতপা সেনগুপ্ত বলে, বলেছি না; নিউজ রুমের মধ্যে সিগ্রেট ধরাবেন না; আমার সাইনাসের ব্যথা বেড়ে যায়। যান নীচে গিয়ে খেয়ে আসুন।

এমন সময় বাংলাদেশ বিটের ক্ষতিরঞ্জন সাহা এসে তসলিমা অতিঋণের একটা ফেসবুক পোস্ট দেখায়, যেখানে তসলিমা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাহফুজকে হিজবুত তাহরির বলেছে।

: এই তো কোট পেয়ে গেলে; যাও কপি বানাও, মাহফুজ মৌলবাদি।

সুতপা কটমট করে তাকিয়ে বলে, এই ছেলের ইন্টারভিউ পড়েছি; সে বলেছে, এতোদিন আওয়ামী লীগ আমার শত্রু ছিলো, এখন ইসলামপন্থীরা আমার শত্রু হবে। আমি এসবকে ভয় পাইনা।

: সুতপা তুমি বাংলাদেশে চলে যাও; ইউনুস সাহেব তোমাকে কোন একটা সংস্কার কমিটিতে নিয়ে নেবেন। এই ক্ষতি দাঁড়িয়ে দেখছো কি! যাও কপি বানাও। কালেমা লেখা পতাকা হাতে কলেজের ছাত্রদের ছবি ফরোয়ার্ড করছি; নামিয়ে নিয়ে স্টোরিতে লাগিয়ে দিও। এই অতিপ্রিয়া প্রাচী কোথায় গো! দেখোনা বাপু তার একটা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় কিনা!

: উনি তো গা ঢাকা দিয়েছে; তবে তাপসী অতিসুমসুম নামে এক হাসিনা সৈনিক পেয়েছি; সে আবার ম্যাজিস্ট্রেট।

: তাই নাকি! তাকে নিয়ে একটা বক্স স্টোরি করো, ম্যাজিস্ট্রেট বিদ্রোহ শিরোনামে। সিপাহী বিদ্রোহের ফ্লেভারটা আসা চাই; ছবি দিও মেয়েটির।

: ঐ তো একটা সমস্যা; মেয়েটি হিজাব পরে!

: লিখে দেবে বাংলাদেশে হাসিনার সফট ইসলামের সৈনিক; সে মাহফুজদের হার্ড ইসলামের বিরোধী। মনে নেই, আফঘানিস্তান রিপোর্টিং-এ আমরা যেমন গুড মুসলিম-ব্যাড মুসলিম ক্যাটেগরি করেছিলাম।

সুতপা কটাক্ষ করে, এতো কিছু করেও তো কাবুল থেকে লেজ তুলে পালাতে হলো; কিন্তু লজ্জা হলো কই!

অতিভক্তি রায় দৌড়ে এসে একটা ছবি দেখায়, দেখুন বাড়ুজ্যে মশয়! ঢাকায় কিভাবে সেনাবাহিনীর লোকেরা দুর্গা প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে; এই সেনাদূর্গ পেরিয়ে কি ঠিকমতো দুর্গা প্রতিমা ভাঙ্গতে পারবে হিজবুত তাহরিরের লোকেরা! না পারলে আমাদের নিউজের এংগেলটা কি হবে!

: নো প্রবলেম ভক্তি। নিউইয়র্কের পুজোর ছবি আর ঢাকার পুজোর ছবি পাশাপাশি দাও। দুর্গা নিউইয়র্কে মুক্ত , ঢাকায় সেনাবন্দী! আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম।

: আপনি ম্যাজিশিয়ান দাদা; এমনিই তো আর ডাকসাইটে বার্তাসম্পাদক হয় না কেউ!

সুতপা সেনগুপ্ত চেয়ার থেকে উঠে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি ফেরার আগে মুচকি হেসে বলে, এবার নির্ঘাত বাড়ুজ্যে মশয় অতিপুলিতজার পুরস্কারটা পেয়ে যাবেন; সঙ্গে অতিশ্রী পুরস্কারটাও। সাংবাদিকতা তো না; এসব হলো গিয়ে মিডিয়ার গায়ে হলুদ।

 

১৫২ পঠিত ... ১৫:৫৪, অক্টোবর ০৮, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top