সিভিল সার্ভিসে আই হেট টিয়ারস পুষ্পা

১৬৬ পঠিত ... ১৬:১৩, অক্টোবর ০৭, ২০২৪

21

যারা জব সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে চায়; তারা বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে যায়; আর যারা বাকস্বাধীনতা বা নিজস্ব অভিমত প্রকাশের স্বাধীনতা চায়; তারা বিসিএস না দিয়ে অপেক্ষাকৃত অনিশ্চিত চাকরি বেছে নেয়। দুটো জিনিস একই সঙ্গে পাওয়ার ইতিহাস বিরল।

রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রযন্ত্র বলা হয়; আর রাষ্ট্রের কর্মচারী হচ্ছে এর কলকব্জার মতো। কাজেই রাষ্ট্র তার রিসেট বাটনে চাপ দিয়ে যে কমান্ড দেবে; প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ঐ কমান্ড অনুযায়ী চলতে হবে। সরকারি চাকরির আচরণ বিধিতে এ কথা স্পষ্ট করে লেখা আছে। সরকারি চাকুরেদের কেবল শিল্প-সাহিত্যের অনুমতি আছে। রুপক ও প্রতীকের আশ্রয় নিয়ে একজন কর্মচারী তার সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাতে পারে। কিন্তু সেখানেও বিদ্রোহী হবার কোনো সুযোগ নেই। দ্যাটস সিভিল সার্ভিস।

এখানে উল্লেখ্য যে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, ভাষা শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস পালন অন্যদের জন্য ঐচ্ছিক বিষয় হলেও; স্বাধীনতার ৫৩ বছর ধরেই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য তা বাধ্যতামূলক। সুতরাং প্রতিটি সরকারি কর্মচারীর জীবনের স্বদেশ পরিচর্যা তার চাকরিরই অংশ।

বাংলাদেশ বাস্তবতায় দেশের মানুষ বেশিরভাগ মানুষই কোনো না কোনোভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও; আওয়ামীলীগ এই যুদ্ধের নেতৃত্বে থাকায় সে সুযোগ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বার বার একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার টুল হিসেবে অপব্যবহার করেছে। দলীয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আইকন সামনে রেখে দেশলুণ্ঠন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। যাকে অপছন্দ তাকে ’রাজাকার’ তকমা দিয়ে হীনলোকের বাচ্চার কালচার প্রচলন করে সেটাকেই হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করছে।

আওয়ামীলীগ গত সাড়ে পনেরো বছরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসকে আওয়ামী সিভিল সার্ভিসে রুপান্তরের হীনচেষ্টা করেছে। ফলে পুলিশ-প্রশাসন ও অন্যান্য সার্ভিসের লোকেরা আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে; এর পরিবর্তে মাথাপিছু হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে নিয়ে গেছে। এর ফলে আওয়ামীলীগ নেতাদের চেয়ে তাদের বেশি সেকেন্ড হোম নির্মিত হয়েছে; অধিক সম্পদ লুণ্ঠন করেছে তারাই। এমপি-মন্ত্রীরা পাঁচ বছর করে পর্যায়ক্রমে দুর্নীতি করলেও সরকারি কর্মচারীরা পনেরো বছর ধরে লুণ্ঠনের সুযোগ পেয়েছে।

সিভিল সার্ভিসে কাজ করতে গেলে ব্যক্তিকে অবশ্যই দল নিরপেক্ষ হতে হবে; রাজনৈতিক দলের হোলিয়ার দ্যান দাও হয়ে পুলিশের বেনজির, হারুন, মনিরের কী পরিণতি হয়েছে; তা সবাই নিজ চোখেই দেখছেন। সিভিল সার্ভিস রুল ভেঙে অসদাচরণ করলে একসময় পলাতক জীবন যাপন করতে হয়; অথবা কারাগারে কাটাতে হয়।

একজন সিভিল সার্ভেন্টের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে নির্বাচনের সময় সৎ ভাবে কাজ করে জনগণের ব্যালটের নিরাপত্তা দেওয়া, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় বন্ধুর মতো জনগণের পাশে থাকা, কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রাণান্ত পরিশ্রম করা, বহুত্ববাদী সমাজে প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট থাকা; সর্বোপরি জনসেবার মাধ্যমে জব স্যাটিসফেকশন লাভ করা।  কোনো দলীয় চেতনার লিপসার্ভিসের অনুমতি সার্ভিস রুলে নেই।

ফেসবুকের সহমত ভাই, শিবব্রত দাদা, শরিয়ত ভাই, নেয়ামত ভাই, ললিতা আপা ও রাবেয়া আপা হলো বন্যপ্রাণী। তারা ফেসবুকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোকান ও ইসলামি চেতনার দোকান খুলে তারস্বরে চেঁচিয়ে কাস্টমার ডাকবে সেটাই স্বাভাবিক। মুলানরুশ কিংবা নিউইয়র্কের সোহোর সামনে ডেভিড ও জনসন যেভাবে কাস্টমারকে নানা উত্তেজনাকর অঙ্গভঙ্গিতে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে; আমাদের সমাজের দলান্ধ ও ধর্মান্ধ ব্রোকারেরা সেই একই চেষ্টা করে।

কিন্তু সিভিল সার্ভিসের সদস্যদের তা মানায় না; তারা শৃঙ্খলা সম্পন্ন সভ্য একটি ব্যবস্থাপনার অংশ। তাদের আচার আচরণ হতে হয় কম্পোজড বা সংযত। জোরে হাসতে ইচ্ছা করলেও আস্তে হাসা, কাঁদতে ইচ্ছা করলেও না কাঁদা, ভাটের আলাপ বা ট্র্যাশ টক করতে ইচ্ছা করলেও কেবল প্রয়োজনীয় কথা বলা; আর জনপরিসরে যে কোনো আলোচনায় নিরপেক্ষ থাকার এক যাজকীয় ভ্রমণ হচ্ছে সিভিল সার্ভিস।

কাজেই দলীয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা দলীয় ইসলামি চেতনায় দোলা দিয়ে আওয়ামী ও জামায়াত বাজারে ভাইরাল হয়ে সিভিল সার্ভেন্টের লাভ নেই বরং ক্ষতি। ললিতা বা রাবেয়ার পাগলামি সাজে; কিন্তু সরকারি পান্নুর পাগলামি সাজে না। মনে পাগলামি এলে মানসিক ডাক্তারের কাউন্সেলিং নিতে হবে। মস্তিষ্কের কেমিক্যাল ডিসঅর্ডার হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। তবু পাবলিকলি সিনক্রিয়েট করা যাবে না। বুঝিবা সিভিল সার্ভিসের সদস্যের জন্য বিখ্যাত ঐ সংলাপ প্রযোজ্য; আই হেট টিয়ারস পুষ্পা।

১৬৬ পঠিত ... ১৬:১৩, অক্টোবর ০৭, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top