মহল্লায় আছি, সংস্কৃতি লাগলে মিসকল দিয়েন

১৮৮ পঠিত ... ১৭:৪৪, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪

25

সাড়ে চুয়াত্তর জার্নাল নেই; কফি মগে চুমুক দিতে দিতে সংস্কৃতি রক্ষার সেই আড্ডাটা আজ আর নেই। প্রোডিউসার আর ফোন করে ডাকে না। ব্লাউজের মতো খাটো টি-শার্ট পরে ক্যাজুয়াল ভঙ্গিতে গাল চুলকাতে চুলকাতে মৌলবাদের বিরুদ্ধে চারটি কথা বলার ফোরাম নেই। অগত্যা রিপাবলিক বাংলা খুলে ময়ূখের মৌলবাদ বিরোধী একাংকিকা দেখে প্রাণ জুড়ায়।

সাবান মাখুন ভাইকে হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ দেয়, ও দাদা, রিপাবলিক বাংলায় একটু ডেকে দিন না; দুটি কথা বলতে না পেরে প্রত্যেক রাতে গা ম্যাজ ম্যাজ করে; অথচ কত কিছুই তো বলার আছে!

: হত্যামামলার আসামী হন নাই মিয়া; সেইডা নিয়া খুশি থাকেন। আমি নিজামউদ্দীন আউলিয়ার মাজারে খিঁচুড়ি খাইয়া পইড়া আছি; জ্বালাইয়েন না।

বাংলা একাডেমি থেকে হুদা ভাই চলে যাবার পর; আর কেউ দুটি কবিতা পড়তে ডাকে না। কবির অস্থির লাগে। ফেসবুকে লাইকের দারিদ্র্য সীমার নীচে জীবন। আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম কবিতার নীচে এসে লোকজন লিখে গেছে; এইরকম ফাউল কবিরে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দিছে! মুরুক্ষুলেদা কবি কুনহানকার।

কবি মন খারাপ করে স্ত্রীর কাছে গিয়ে অনুযোগ করে, কী পেলাম শিল্প-সাহিত্য করে।

: বাংলা একাডেমি পুরস্কার ধুইয়া পানি খাও; আমারে জ্বালাইও না। কই গেল তোমার মিউজেরা; যাগো কবিতা পইড়া শুনাইতা!

শুল্ক ও সাহিত্য, পুলিশি ও সাহিত্য, ব্যাংকিং ও সাহিত্যের লোকেরা শতবর্ষ কামাল স্যারকে অনুরোধ করে; কোথাও একটা মিলনায়তন ভাড়া করে; হোক না একটা কবিতা ও গল্প পাঠের আসর!

শতবর্ষ কামাল বলেন, আমি শতবর্ষের নীরবতার কাছে সমর্পিত হয়েছি। আপনারা বরং অন্য কাউকে কো অর্ডিনেট করতে বলুন। আমি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বলে দেব।

শতবর্ষ কামাল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ফোন করলে অপর প্রান্ত থেকে বলে, স্যার এখন বারো রকম সংস্কার গ্রুপ এসে পড়েছে। নতুন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সংস্কারের ফ্যাশান প্যারেড চলছে। অডিটোরিয়ামে এটার সংস্কারের ব্যানার সরাতেই সেটার সংস্কারের ব্যানার এসে পড়ে। আপনারা বরং সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে খোঁজ নিন।

আলো আসবেই গ্রুপের শিল্পীরা রেডিও-টিভির কালো তালিকায় পড়ে শিল্পকলা একাডেমিতে কিছু একটা করা যায় কিনা তা জানতে সেখানে হাজির হয়। মহাপরিচালক ইংরেজিতে কিসব বলেন, শুনে মাথা ঘুরান্তি দেয়। চ্যাট জিপিটিকে জিজ্ঞেস করতেই অনুবাদ করে দেয়, আমরা নতুন শিল্পী খুঁজছি যাকে আনলার্ন করাতে হবে না ভুল শিক্ষাগুলো। জেন জিদের ট্যালেন্ট হান্টিং করছি; বিশ্বমানের থিয়েটার প্রোডাকশন সম্ভব এদের দিয়ে।

আলো আসবেই গ্রুপের বুকের মধ্যে খাঁ খাঁ করে। লাকি ভাইয়ের সেই সুরম্য রুপাঞ্জলির মধুমাখা সময়টা কীভাবে এমন আনলাকি হয়ে গেল।

বুদ্ধি করে আলো আসবেই গ্রুপের এক বর্ধিষ্ণু শিল্পী ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টারে ফোন করে। কেউ ফোন ধরে না। কিছুক্ষণ পরে একজন কলব্যাক করে বলে, পুজোর ছুটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে সবাই। পুজোর পর কোনো অনুষ্ঠান হলে নেমন্তন্ন পাবেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আজকাল মোমবাতি প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে লোক খুঁজে পায় না। কেউ মরেও না যে শহীদ মিনারে একটু শেষ কৃত্যের শো ডাউন থেকে অন্তর্বতীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলবে।

চুক চুক করে এক সংস্কৃতি খালা ফেসবুকে পোস্ট দেন, বাঙ্গালির হাজার বছরের সংস্কৃতি কী এভাবে পরিচর্যার অভাবে শেষ হয়ে যাবে।

অমনি কে একজন এসে আশ্বাস দেয়, মহল্লায় আছি, সংস্কৃতি লাগলে মিসকল দিয়েন; অগো উষ্ঠা দিমু মায়েরে বাপ।

১৮৮ পঠিত ... ১৭:৪৪, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top