নির্মলেন্দু গুণ তখন পলাশী থাকেন। পত্রিকায় কাজ করেন।
অফিস যাওয়ার সময় ইডেন কলেজের দেয়ালে মারা চিকাগুলো পড়তে পড়তে যান, ফেরার সময় পড়তে পড়তে ফিরেন।
তার একটাতে লেখা ছিল, অমুক ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।
তো ওই ভাইকে গুণ চিনতেন না।
কিন্তু তার বিষয়ে চিকায় যে সদম্ভ হুঁশিয়ারি দেওয়া আছে তা কবিকে ভাবিয়ে তোলে।
কৌতূহল তীব্র হওয়ায় একদিন অফিস যাওয়ার পথে আজিমপুর মোড়ে টহল পুলিশের কাছে গেলেন তিনি।
সাহস করে এক পুলিশ সদস্যকে বললেন, আচ্ছা ভাইজান, ইডেনের দেয়ালে এই যে নেতার নামে চিকা দেখছি, ওনার সম্পর্কে আপনি কি কিছু ধারণা দিতে পারেন? ওনার সর্বশেষ খবর কী?
কথা শুনে পুলিশ সদস্য ইডেনের দেয়ালের দিকে চোখ ফেরালেন এবং চিকাটা পড়লেন।
তারপর খুব বিরক্ত হয়ে পাশে দাঁড়ানো সহকর্মীকে বললেন, কীয়েরে, ওই হালারে চিনসনি?
সহকর্মীটিও চিকাটি পড়লেন। এবং পড়া শেষে আগের জনের চেয়ে দ্বিগুণ বিরক্ত হয়ে কবিকে বললেন, যান তো ভাই!
গুণ বললেন, দেখেন ভাই, আমি বাসায় তালা দিয়ে বের হয়েছি, কাজে যাব। এখন ধরেন, খোদা না করুন, হঠাৎ ওই নেতার যদি কিছু একটা হয়ে যায়, আর নেতার সৈনিকরা যদি আজিমপুর-লালবাগের ঘরে ঘরে সত্যি সত্যি আগুন জ্বালিয়ে দেয়? তাহলে তো আমার ঘর, ঘরের ভেতরের সব জিনিসপত্র পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।
এইবার সেই প্রথম পুলিশ সদস্যটি কবির দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী করেন?
: আমি? আমি ছোটোখাটো একজন সাংবাদিক।
শুনে পুলিশ সদস্যটি হাত বাড়িয়ে দিলেন গুণের দিকে। গুণও হাত বাড়ালেন।
করমর্দনের নামে সেই হাতে কড়া একটা চাপ দিয়ে পুলিশটি বললেন, সাম্বাদিক অইয়া আপনে যদি এই চুদনারে না চিনুইন, তো আমরা হালারে কেমনে চিনুম, কন?
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন