দুই হাজার সাতান্ন সালের এক সুন্দর সকাল।
আমি, আমার নাতনি আর তার দাদি তিনজনে বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে রোদ পোহাচ্ছি। নরম মিঠে রোদ আলতো করে শরীরে ঢুকছে। মনে হচ্ছে যেন প্রকৃতি নিজের হাত দিয়ে আদর করে দিচ্ছে।
চোখে আগের চেয়ে কম দেখি, যা দেখি তাও ঝাপসা। নাতনিকে বললাম, সুইটহার্ট, হকার কি পত্রিকা দিয়ে গেছে? দাদুকে পড়ে শোনাও না?
নাতনি খিলখিল করে হেসে উঠল। বড় সুন্দর সে হাসির শব্দ। মনে হলো, এমন পাখি ডাকা শান্ত সকালে কেউ যেন উকুলেলে বাজিয়ে স্প্যানিশ ফোকের চমৎকার সুর ছড়িয়ে দিলো চারপাশে।
আমি বললাম, কী সুইটহার্ট? হাসো কেন?
সে বলল, দাদু ইউ আর সো ওল্ড! দাদি বলেছে, তোমরা যখন ইয়ং ছিলে, তখন হকার ঘরে ঘরে পত্রিকা দিয়ে যেত প্লাস অনলাইনেও পড়া যেত। এরপর তো তারা ডাইনোসরের মতো হারিয়েই গেল। এখন সব অনলাইনেই থাকে।
তার দাদি বলল, তোমার দাদু কিচ্ছু মনে রাখতে পারে না, আগে থেকেই এমন। টয়লেট থেকে বেরিয়ে কোনোদিন বাতি নেভাতে তার মনে থাকত না।
নাতনি বলল, ওহ্ দাদি! তোমাদের সময় টয়লেটের বাতি আবার নেভাতেও হতো? এসব কিছু তো এখন নেই, মানুষ ঢুকলে বাতি জ্বলে, মানুষ বেরিয়ে গেলে বাতি নিভে যায়। ইশ আমার দাদুটা কত কষ্টই না করেছে ইয়ং থাকতে! আচ্ছা দাদি, তোমার কি সব মনে থাকত?
তার দাদি হাসলো, আমি এ+ পাওয়া ছাত্রী, আমার সবই মনে থাকত। আমি সহজে কিছু ভুলি না।
আমি বললাম, সুইটহার্ট, আমার ওল্ড সুইটহার্টের স্মরণশক্তি ভালো আর সে আসলেই অনেক বুদ্ধিমতী, তা না হলে তো আমাকে বিয়ে করত না। এবার তুমি লক্ষ্মী মেয়ের মতো দাদুকে অনলাইন থেকে পত্রিকা পড়ে শোনাও।
নাতনি হাসতে হাসতে বারান্দার চায়ের টিপয়ের কভার সরালো। একপাশে বৃদ্ধাঙ্গুলি ছোঁয়াতেই টিপয়ের কাঁচটা একটা স্ক্রিনে রূপ নিলো।
নাতনি একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, ওকে! আমার দাদুব্রো এর জন্য প্রথম নিউজ হচ্ছে—সাগর-রুনি হ*ত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার সময় পেছালো ৯৯৭ বার!
দাদু! হোয়াদ্যা ফা*! হু দ্য ফা*!
আমি স্মৃতি হাতড়ে অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না এই সাগর রুনি কারা বা এদের কাহিনিটা কী। বললাম, তোমার ট্যালেন্টেড দাদিকে জিজ্ঞেস করো, ও অবশ্যই জানবে।
রোদ কড়া হয়ে ওঠেছে। নাতনি তার হাতের আঙুল ফুটাতে ফুটাতে বলল, দাদিসিস, তুমি বলো এই দুজন কে?
নাতনির দাদি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বলল, আমিও তো মনে করতে পারছি না!
আমি নাতনিকে বললাম, তোমার দাদি মনে করতে পারছে না এ তো হতেই পারে না। আমার মনে হয় এটা রিয়েল ঘটনা না তুমি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ আই মিন পত্রিকার সার্কাজম পেজ থেকে এটা পড়ছ।
নাতনি শিওর হওয়ার জন্য পত্রিকায় একবার চোখ বুলিয়ে আবার আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল। আমার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা। ও শিওর হয়েছে কি না বুঝতে পারছি না।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন