দুর্নীতিবাজদের সন্তানরা যদি আমার বাবা রচনা লিখত

১৯৩ পঠিত ... ১৭:৩৬, জুলাই ১১, ২০২৪

21

আস্থা, ভরসা আর পরম নির্ভরতার অপর নাম বাবা। আমার বাবাও এর ব্যতিক্রম নয়। তার একটি মাথা, দুটো চোখ, দুটো কান, দুটো হাত-পা, এবং একটি মুখ আছে। পরীক্ষার আগে আমার পরম আশ্রয় বাবা। তিনি কোনোদিন আমাকে পরীক্ষা নিয়ে টেনশন করতে দেননি। পরীক্ষার আগের রাতেই হাজির হয়েছেন উত্তরপত্রসহ প্রশ্ন নিয়ে। আমার বাবা ভীষণ দানশীল মানুষ।

রাস্তায় বেশি স্পিডে গাড়ি চালানো বা অন্য কারণে পুলিশ আটকালে বাবা তাদের বড় অঙ্কের টাকা দান করেন। বাবা বলেন, এগুলো হলো সদকায়ে জারিয়াহ। এসব দান খয়রাতের প্রতিদান দীর্ঘদিন অব্যহত থাকবে। 

আমার বাবা অন্য সবার বাবার মতো না। তিনি রাত জেগে জেগে ফোনে কথা বলেন। আমাদের বাসায় রাতেরবেলা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়। বাবা বলেন, পৃথিবীর সৃষ্টিশীল কাজগুলোর জন্য মোক্ষম সময় রাতের বেলা। এ সময় বোকারাই ঘুমায়, চিন্তাশীলরা জেগে থাকে।

ছোটো থাকতে আমরা ছিলাম ভীষণ গরিব। বাবা কুলির কাজ করতেন, মায়ের ছিল একটি সেলাই মেশিন। একদিন বাবা ইউরেকা স্টাইলে বাসায় আসার পর জানতে পারি, আব্বা একটা সরকারি চাকরি পেয়েছেন। সেখান থেকেই আমাদের জীবন বদলে যায়।

এখন আমাদের কোনো অভাব নেই। আমার মায়ের অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ঢুকে শত কোটি টাকা। শুনেছি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় আমার আরও কয়েকটি ভাই-বোন আছে৷ বাবাকে ধন্যবাদ কিছু ভাই-বোন রাখার জন্য। যদিও তাদের সাথে কোনো পরিচয় নেই, তাদের অস্তিত্বই আমাকে আনন্দ দেয়।

আমার পড়ালেখায় সারাজীবন সাহায্য করার পাশাপাশি বাবা আমাকে সাপোর্ট দেন বিনোদনের দিক থেকেও। ক্লাসের ফাঁকে বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে রেস্ট নেওয়ার জন্য ঢাকায় কিনে দিয়েছেন চারটি ফ্ল্যাট, ছয়টি দামি গাড়ি। ছাগল ভালোবাসায় বাবা আমাকে উপহার দিয়েছেন ১৫ লাখ টাকার ছাগল। বাবা আদর করে আমাদের বলেন, আমরা দুই ভাই।

আমার বাবা শুধু বাবা হিসেবেই প্রিয় নন, ছেলে হিসেবেও তিনি অসাধারণ। আরও নয় ভাই-বোন থাকার পরও মৃত্যুর আগে আমার দাদা সকল জমি, ভিটা বাড়ি বাবার নামে দিয়ে গেছেন। পৃথিবীতে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ ছেলে এবং বাবা—দু ক্ষেত্রেই  অসাধারণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমার বাবা তাদের মধ্যে একজন।

উপরোল্লিখিত গুণের পাশাপাশি আমার বাবা একজন পরিবেশবাদী বাবাও। ট্যাক্সসহ আরও যত কাগজপত্র তা তিনি বাড়ি আসার সাথে সাথেই নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেন।

মানুষ বলে, অর্থবিত্তের দেখা পেলে নাকি মানুষ আল্লাহ খোদাকে ভুলে যায়। অথচ আমার বাবা এখানেও ব্যতিক্রম। দু দিন পরপরই আমরা বিদেশ ভ্রমণে যাই। বিশ্বের বিভিন্ন বিচে গিয়ে আব্বা নামাজ পড়েন। তার সবচেয়ে ভালো লেগেছে পাতায়া বিচে নামাজ পড়ে।

দশ নয়, পাঁচ নয়, মানুষের সুন্দর এবং নৈতিক জীবন গড়তে একজন রোল মডেলই যথেষ্ট। আর আমার জীবনের আদর্শ ব্যক্তিত্ব আমার বাবা। জীবনে যতদিন বেঁচে থাকি, বাবার মতো মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই।

পরিশেষে বলতে চাই, আমার বাবাও ইলন মাস্ক, আম্বানিদের মতো হাজার কোটি টাকার মালিক। শুধু আমার বাবার নাম ফোর্বস ম্যাগাজিনে আসে না। কারণ আমরা শো অফ পছন্দ করি না।

 

১৯৩ পঠিত ... ১৭:৩৬, জুলাই ১১, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top