চাটতে থাকে আপন খেয়ালে

১৯৮ পঠিত ... ১৭:৩৭, জুন ২৫, ২০২৪

33 (9)

আমরা কেন ক্রিকেট নিয়ে আকুল হই! আমরা কী করে ভাবলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বিস্তর টাকা-পয়সা আছে বলেই; আমাদের ছেলেরা ভালো ক্রিকেট খেলবে!

বিংশ শতকের জ্ঞান নির্ভর সমাজকে নির্বাসনে পাঠিয়ে একবিংশ শতকে আমরা যখন টেকাটুকা নির্ভর নব্যপ্রস্তরযুগের সূচনা করেছি; তখনই আমাদের বোঝা উচিত ছিলো; লাল সালুর দুই মাজার কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে এইখানে বৈষম্যমুখর মাঠা সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে।

কোক স্টুডিওতে সবচেয়ে ভালো বাজেট দিয়ে তৈরি হয় দক্ষিণ এশিয়ার দুর্বলতম সংগীত; সরকারি অনুদানে নির্মিত হয় দুর্বল চলচ্চিত্র; কামাল করা রাজকবিদের নেতৃত্বে লিখিত হয় দলীয় স্তুতি কাব্য, বাতাবি লেবু বৃক্ষের তলে সাংবাদিক বাবুরা ‘প্রশ্ন নয় প্রশংসা করতে এসেছি’ অনুষ্ঠানে কেঁপে কেঁপে তেলাঞ্জলি দেয়!

জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ একটি দুটি প্রশ্ন এলে ইডেন কলেজের টেনেকষে পাশ করা বিদ্যা তাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়!

বেনজির-প্রদীপ-শিমুল-আসাদ এর শুদ্ধাচার পুরস্কারের আড়ালে লুন্ঠন ও গুমের সাপের মণিতে দুর্নীতি ও মানবাধিকার হরণের মতিগতি খেলা করলে; পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন ভাবমূর্তি রক্ষার বায়না ধরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদকদের হুমকি দেয়!

মাজার কেন্দ্রিক ডাকাত দলদুটির ভাবমূর্তি রক্ষার বায়না থাকলে পুলিশ-প্রশাসন-কর-শুল্ক বিভাগের ডাকাতদের ভাবমূর্তি রক্ষার মামা বাড়ির আবদার থাকবে না কেন!

আলফাডাঙ্গা-পাটগাঁতির ছাতা মেরামত প্রকৌশল ও ভিক্ষাবৃত্তির কর্কশ জীবনে ভাবমূর্তির আকাংক্ষা কেন প্রবল হবে না! লস্কর বাড়ির ছেলেমেয়েদের কাঠি লজেন্স চুষতে দেখে জিদ হয়েছিলো, দেখে নিস একদিন আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েরাও স্পোর্টসকার চুষবে! সেনাকুঞ্জে ‘মেরা সুলতান’-এর সুটিং সেট সাজিয়ে উন্নয়নের রাজপুত্র ও রাজকন্যাদের বিয়ে হবে!

নেহাত সৎ পরিবারগুলোর বাবা-মায়ের জীবন উতসর্গ করার মাঝ দিয়ে হাতে গোণা যে অল্পকিছু মেধাবী তরুণ-তরুণী মানুষ হয়; তারা হয় পশ্চিমে পালিয়ে বাঁচে; অথবা চোরের খনিতে মিসফিট সৎ মানুষ হিসেবে দোজখ যন্ত্রণা ভোগ করে।

আর কৃষক-কারিগর-প্রবাসী শ্রমিক; তারা হচ্ছে উন্নয়নের কলুর বলদ; তারা রক্ত-শ্রমে ও ঘামে অর্থ উপার্জন করে; আর উন্নয়নের নতুন ভ্যাকসিন চৌধুরীরা সে অর্থ লুট করে ঘাপটি মেরে থাকে। হঠাত ধরা পড়লে নিজেই নিজের মাথা ন্যাড়া করে ওতে ঘোল ঢেলে বিদেশে পালিয়ে যায়। ডিএনএ-তে এমন চুরি করে ধরা পড়ে মাথা ন্যাড়া হবার স্মৃতি আছে; তাইতো গ্রামবাসীকে আর কষ্ট করে চোরের মাথা ন্যাড়া করে দিতে হয় না!

একবিংশ শতকে বৈষম্য জর্জরিত বাংলাদেশে স্বপ্ন ঐ দুটো; হয় ক্ষমতাসীন দলের সহ-সভাপতি হয়ে ফরিদপুরের নিশানের মতো দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করা; অথবা অথবা বিসিএস দিয়ে গোপালগঞ্জের বেনজির হয়ে উন্নয়নের জমিদার হওয়া।

সেইখানে কি হবে আর শিক্ষা-সংস্কৃতি-ক্রীড়া দিয়ে! উপাচার্য যুবলীগের সভাপতি হতে চায়; সংস্কৃতি কর্মী মোদি প্রগতিশীল হয়ে ঠিকাদারি পেতে চায়, ক্রিকেটার এমপি হতে চায়। শিল্পীরা ক্ষমতা খোদাকে তেলাঞ্জলি দিয়ে সংরক্ষিত আসনের অলংকার হতে চায়। ঊনবুদ্ধিজীবী শেয়ালে পদ-প্লট-পদক এঁকে দেয়ালে, চাটতে থাকে আপনমনে খেয়ালে!

দেশের নানা জায়গা থেকে ভিক্ষুক-চোর-ডাকাতের ডিএনএ খুঁজে সাজানো ক্ষমতার রঙ্গভবন; ছাপড়া থেকে গজদন্তের মিনারে উঠে; গরুর গাড়ি থেকে পোরশেতে চড়ে, পান্তা থেকে পাস্তার পাঁচতারা হোটেলে সোনার জিলাপি খেয়ে সারাদিন পলিসির হাইকমোডে ক্ষমতার বর্জ্য নিক্ষেপ; এই হচ্ছে বাংলাদেশের উচ্চনগরীর ছাপড়ি কালচারের সারসংক্ষেপ।

আর বাংলাদেশের নিম্ননগরীতে বৈষম্যে লীন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে রক্তঘামে প্রাণপাত করা দেশপ্রেমিক ডিএনএ, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে জীবন দেয়া, যুদ্ধ করা, শরণার্থী হওয়া ত্যাগী ডিএনএ।

তাদেরকে এখন পালা করে বৃটিশের কোলাবরেটর গেরুয়া তস্কর, পাকিস্তানের কোলাবরেটর হরিত তস্কর, লালসালুর দুই মাজারের হাইব্রিড কোলাবরেটরদের কাছ থেকে দেশপ্রেম ও স্বদেশচেতনার সনদ নিতে হয়। বাংলাদেশ অচল আজ তস্কর শেয়ালদের সুপরামর্শ ছাড়া!

১৯৮ পঠিত ... ১৭:৩৭, জুন ২৫, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top