মানুষ হাসানো সহজ না। বেশ কঠিন কাজই। এই কঠিন কাজটি দিনের পর করে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ানরা। কারও মতে হাসাতে পারছে, কারও মতে হাসাতে পারছে না। তবে পত্রিকাগুলোর রাজনৈতিক পাতা এইদিক থেকে সফল। রাজনৈতিক পাতার খবর অন্তত আমাকে প্রতিদিনই হাসাচ্ছে।
সাম্প্রতিক কয়েকদিনের কিছু খবর নিয়ে আলোচনা করলে পাঠকরাও আমার সাথে একমত হবেন বলে আমার ধারণা।
প্রথম খবরটি কালবেলা পত্রিকা। দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির একজন সহকারী উপপরিদর্শক আছেন, ভদ্রলোকের নাম মো. ওয়াসিম। পুলিশ মানুষ, ভাত-মাছের চেয়ে বেশি খান ঘুষ। ঘুষ খেলেও মানুষটা মানবিক। কোনো ভুক্তভোগীর কাছে যদি টাকা না থাকে কিংবা একসাথে ঘুষের টাকা দিতে না পারেন তার জন্য রয়েছে বাকিতে কিংবা কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা। তিনি আবার লামচামভাবে ঘুষের টাকা নির্ধারণ করেন না। ঘুষের টাকা নির্ধারণ করার জন্য তার রয়েছে নিজস্ব আদালত। একজনকে ধরে আনেন, এরপর নিয়ে আসা হয় সিভিল এভিয়েশনের গার্ডরুমে। সেখানে আদালত বসে। বিচারকের আসন অলংকৃত করেন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ টিএম আলামিন। ঘুষের টাকা নির্ধারণ হলে, ওয়াসিম তা কিস্তিতে টাকা তোলেন।
অবসরের পর চাইলে ওয়াসিম ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংকের মত মাইক্রোফিন্যান্স প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ওয়াসিমের একটা গল্প বলেছেন। তিনি একটি রিকশা গ্যারেজের মালিক। শ্বশুরবাড়ি থেকে ভদ্রলোককে একটা মোটর সাইকেল দিয়েছে। রাস্তায় এই মোটর সাইকেল চালাতে দেখে ওয়াসিমের চোখে পড়ে। মোটর সাইকেলটি পছন্দও হয়ে যায় ওয়াসিমের। এরপর ওয়াসিম এই লোককে জানান, হয় মোটর সাইকেলটি ওয়াসিমকে দিয়ে দিতে হবে। কিংবা একই রকম একটা মোটর সাইকেল কেনার টাকা দিতে হবে।
দ্বিতীয় খবরটি প্রথম আলোর। সাবেক নৌসচিব ছিলেন অশোক মাধক রায়। তার ইচ্ছায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের বাল্লায় একটা স্থলবন্দর নির্মাণ করা হয়। যাতে সরকারের খরচ হয় ৪৯ কোটি টাকা। উদ্দেশ্যে ভারতের সাথে স্থলবাণিজ্য। কিন্তু সীমান্তের এপারে স্থলবন্দর নির্মাণ হয়ে গেলেও ওপারে অর্থাৎ ভারত অংশ নেই কোন শুল্ক বন্দর। বানানোর নামগন্ধও পাওয়া যায়নি। ফলে ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি এই স্থলবন্দর কোনো কাজেই আসছে না।
এ বিষয়ে সাবেক নৌসচিব অশোক মাধব রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ভারতের অংশে কোনো অবকাঠামো নেই, অথচ আমরা ৪৯ কোটি টাকা খরচ করেছি। এই অর্থ গচ্চা যাবে কি না? জবাবে অশোক মাধব বলেন, টাকা গচ্চা যাবে কেন? হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক যদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ স্থলবন্দরের গুরুত্ব জানিয়ে চিঠি দেয়, তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। ভারত অংশে হয়তো এখনও অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি, তবে নিশ্চয় হবে।
প্রথম আলোর আরও একটি খবর আমাকে হো হো করে হাসতে সাহায্য করেছে। খবরটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একটি চাঁদাবাজির খবর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই নেতা এক দোকানদারের কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছে। এই ঘটনার একটা ফোনালাপও ফাঁস হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওরা রোজা রেখে চাঁদা চায়নি, চেয়েছে ইফতারের পরে। ধর্মের প্রতি কী টান ছেলেগুলোর!
ফোনালাপে নাকি একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘চাইলে পোলাপান নিয়ে এসে আপনার ব্যবসা নষ্ট করে দিতে পারি। কিন্তু করছি না, এটা আপনার প্রতি ভালোবাসা বলতে পারেন।’
চাঁদার টাকা চাইতে গিয়ে ছাত্রলীগের জাহিদ হাসান নামের একজন বলেন, ‘যেকোনো জায়গা থেকে যা সাপোর্ট লাগে আমরা দেব। আমাদের একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। আমরা ভাই-ব্রাদার হয়ে যাব। আপনি আমাদের দেখবেন, আমরা আপনাকে দেখব। এটাই স্বাভাবিক। আপনি আজকে কিছু দেন।’
আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, চাঁদাবাজির এই ঘটনা ছাত্রলীগের জাহিদ হাসান অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এইগুলা তার ব্যাপারে অপপ্রচার। রোজা রেখে তিনি চাঁদা কেন চাইবেন? তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইবলিশ মাঠে বসে ইফতার করছিলেন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন