কিম জন উং এর কঠোর সামরিক শাসন আর বিচিত্র সব নিয়মকানুনের জন্য প্রায়ই হাসির খোরাক হয়ে ওঠে উত্তর কোরিয়া। অনেকে দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ একটি দেশ (দেশের নাম উল্লেখ করলে বাড়ির নীচে ফুডপান্ডার ডেলিভারি চলে আসতে পারে) স্বৈরশাসনের দিক থেকে দিন দিন উত্তর কোরিয়ার সমতুল্য হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করলেও বিচিত্র কিছু নিয়ম কানুনের ক্ষেত্রে এখনো উত্তর কোরিয়াকে টপকে যেতে পারেনি বিশ্বের কোন দেশই। সেরকম কিছু অদ্ভুতুড়ে উত্তর কোরিয়ান নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এই আর্টিকেল।
#১
রঙিন জিন্সকে না বলুন!
উত্তর কোরিয়ায় ডেনিমের চড়া দামের জন্য সর্বসাধারণের পক্ষে জিন্স প্যান্ট কেনা খুবই কষ্টসাধ্য। তাও যদি কিডনি বিক্রি করে দিয়ে কেউ একটা জিন্স কেনার টাকা যোগার করে ফেলেও, সেই জিন্স হতে হবে কালো রঙের। কালো ছাড়া অন্য যেকোন রঙের জিন্স পরলেই শাস্তি পেতে হবে।
#২
রামগড়ুরের ছানা
কথা বলতে মানা!
আপনি যদি ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী স্বভাবের হয়ে থাকেন তবে উত্তর কোরিয়া হতে পারে আপনার জন্য স্বর্গরাজ্য। কেননা, কোন ট্যুরিস্টকে যদি লোকাল মানুষজনের সাথে কথা বলতে দেখা যায়, তবে দুজনকেই গুণতে হবে মোটা অংকের জরিমানা।
#৩
সরকারি উদ্যোগে ডায়েট কন্ট্রোল!
যদি আপনি বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তিত হয়ে থাকেন, তাহলে আজই উড়াল দিয়ে দিন উত্তর কোরিয়ায়। যেকোন ধরনের পশ্চিমা সংস্কৃতির খাবার খাওয়া এখানে একেবারেই নিষিদ্ধ হওয়ায় ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পিজ্জা, এমনকি কোকা-কোলা পর্যন্ত কিনতে পারবেন না। উলটো কিমচির মতো স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেয়ে দ্রুতই ভুড়ি কমিয়ে ফেলতে পারবেন এখানে।
#৪
কনডমকে না বলুন!
যেকোন ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতির ব্যবহার উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ। নিরুপায় উত্তর কোরিয়ান লোকজনদের কাছে বিদেশিদের নিয়ে আসা বেআইনি কনডমই একমাত্র ভরসা। এমনকি দেশীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী হওয়ায় মেয়েদের জন্য আধুনিক স্যানিটারি প্যাড বা ট্যাম্পন ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ সেখানে। আধুনিক স্যানিটারি প্যাড বা ট্যাম্পনের বদলে তারা হাতে তৈরি কাপড়ের প্যাড ব্যবহার করে থাকে।
#৫
চুল নিয়ে ফ্যাশন নয়!
অপু ভাইয়ের ভক্তদের জন্য উত্তর কোরিয়া নিঃসন্দেহে এক দুঃস্বপ্নের নাম হবে। কেননা সরকার নির্ধারিত কিছু হেয়ারকাট ছাড়া অন্য যেকোন ধরনের চুলের স্টাইল বা রঙ করা চুল রাখা মানেই একমাত্র ঠিকানা জেলখানা!
#৬
গরিবের দুঃখ ঢাকার আইন!
পকেটের বেহাল অবস্থার জন্য ফ্ল্যাট বা গাড়ি কিনতে পারছেন না? চলে যান উত্তর কোরিয়ায়। এমন পাতলা পকেটের মানুষদের মনের কষ্ট বুঝতে পেরেই সম্ভবত কিম জং উন সেখানে জমি, এপার্টমেন্ট এবং প্রাইভেট কার কেনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কালোবাজারে কিছু চোরাই এপার্টমেন্ট কিনতে পাওয়া গেলেও সেগুলোর দাম শুরু হয় ৬০ হাজার মার্কিন ডলার থেকে, যেখানে উত্তর কোরিয়ানদের গড় মাসিক বেতনই ৪ মার্কিন ডলার!
#৭
নাস্তিকদের অভয়ারণ্য!
যেসব বাংলাদেশি নাস্তিক দেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তারা দ্রুত উত্তর কোরিয়ার নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন। উত্তর কোরিয়া বহু আগেই নিজেকে নাস্তিক রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করেছে। সংবিধানমতে সেখানে যেকোন ধর্মীয় চর্চা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
#৮
পত্রিকার কালোবাজারি!
উত্তর কোরিয়ার কালোবাজারে পুরনো পত্রিকা বেচার ব্যবসার কথাটা ভেবে দেখতে পারেন। লাইব্রেরিতে পুরনো পত্রিকা রাখা অপরাধ বলে গণ্য হওয়ায় সেদেশে এই ব্যবসা ভালোই জমে উঠতে পারে!
#৯
কানা মামার চেয়ে নাই মামা ভালো!
উত্তর কোরিয়ায় কানা হওয়া বা চোখে কম দেখতে পাওয়াটা একটা ভয়ের ব্যাপারই বলা চলে। ভুলেও যদি আপনার চশমার রঙ বা ফ্রেম কিম জং উনের চশমার সাথে মিলে যায়, তাহলে বাকি জীবনটা জেলেই কাটিয়ে দিতে হবে।
#১০
স্মার্টফোন হইতে সাবধান!
উত্তর কোরিয়ায় আমজনতার স্মার্টফোন বা থ্রিজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার অনুমতি নেই। বিশেষ ব্যক্তিরাই কেবল স্মার্টফোনের মালিক হতে পারবেন, তাও আবার উত্তর কোরিয়ায় উৎপাদিত দেশীয় স্মার্টফোন। এমনকি অপারেটিং সিস্টেম ব্যববহার করতে চাইলেও মাইক্রোসফট বা অন্যান্য বিদেশী সিস্টেমের দিকে হাত বাড়ানো যাবেনা, ব্যবহার করতে হবে উত্তর কোরিয়ার নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম “রেড স্টার”।
#১১
‘বিটিভি’ই যেখানে একমাত্র বিনোদন!
উত্তর কোরিয়ায় বিটিভির মত সরকারি চারটি টিভি চ্যানেল ছাড়া অন্য কোন চ্যানেল নেই। নেই ইন্টারনেট একসেসও। বলাই বাহুল্য, বাতাবিলেবুর বাম্পার ফলন ছাড়া সেসব টিভি চ্যানেলে দর্শনীয় আর কিছুই নেই!
#১২
দুষ্টু ম্যাগাজিনে আসক্তির ভয়
আর নয়, আর নয়!
যেকোন ধরনের ইংরেজি ম্যাগাজিনই উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ। তাই ড্রয়ারে দুষ্টু ম্যাগাজিন রেখে আম্মার কাছে ধরা খাওয়ার ভয়ও নেই সেখানে।
#১৩
ট্রেঞ্চ কোটওয়ালার চামড়া, তুলে নেবো আমরা!
কিম জং উন চামড়ার ট্রেঞ্চ কোট পরতে ভালোবাসেন, তাই আমজনতা এই কোট পরে ঘুরতে বেরোলে তাদের গায়ের চামড়া আর আস্ত থাকবে কিনা বলা মুশকিল।
তথ্যসূত্র: ব্রাইটসাইড ডট কম
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন