১# গণিতের মিস ইউনিভার্স!
গণিতের যদি একটা মিস ইউনিভার্সের মতো সুন্দরী প্রতিযোগিতা হতো, তাহলে বিনাবাক্যে বিশ্বসুন্দরীর খেতাব জিতে নিতো ইউলারের সমীকরণ। পাঁচটি ধ্রুবক ও তিনটি গাণিতিক ক্রিয়াবিশিষ্ট সমীকরণ নাকি গণিতবিদদের চোখে এতটাই সুন্দর যে একে তুলনা করা হয় শেক্সপিয়ারের সনেটের সাথে।
২# রেশিওর ভেলকি
সমীকরণদের মধ্যে যেমন মিস ওয়ার্ল্ডের খেতাব ইউলার সমীকরণের দখলে, তেমনি সংখ্যা বা অনুপাতের প্রতিযোগিতায় সেরার পদকটা ১.৬১৮ বা ‘ফাই’ এর। গণিতবিদদের মতে, শুধু পৃথিবী নয়, গোটা মহাবিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় ও সুন্দর সংখ্যা হল ফাই (ɸ) বা গোল্ডেন রেশিও। প্রাচীনকালের মানুষ মনে করত, এ সংখ্যাটির রয়েছে জাদুকরী ক্ষমতা। একটি মৌচাকে স্ত্রী মৌমাছির সংখ্যাকে পুরুষ মৌমাছির সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে কোন সংখ্যাটি আসবে জানেন? অবশ্যই ১.৬১৮। শামুকের প্রতিটি স্পাইরালের ব্যাস পরেরটির সঙ্গে ১.৬১৮ অনুপাতে রয়েছে। তেমনি মানুষ থেকে গাছপালা, ফুল-ফল, পোকামাকড়ের বিভাজন সবগুলোই বিস্ময়করভাবে এই অনুপাত মেনে চলে।
৩# অ্যাভোগাড্রো ধ্রুবক
অ্যাভোগাড্রো শুনতে অনেকটা এভোক্যাডো ফলের মতো মনে হলেও আদতে জিনিসটা একেবারেই ভিন্ন। কোন একটা বস্তুকে ভাঙলে অণু-পরমাণু পাওয়া যায়, তা তো জানা কথাই। তবে এই অণু পরমাণুকেও ভাঙতে থাকলে যা পাওয়া যায়, তা হলো অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বা ধ্রুবক।
৪# কল্পনার রাজ্যে হারানো সংখ্যারা
শুধু কি মানুষই কল্পনার রাজ্যে হারাতে পারে? সংখ্যা বলে কি তাদের কোন অধিকার নেই কল্পনাবিলাসী হবার? মানুষের এই অমানবিক নিয়ম থেকে প্রতিবাদ করে যে সংখ্যাটি বিপ্লব সাধন করে ফেলেছে, তা হলো -১ এর বর্গমূল। তাই একে বলা হয় কাল্পনিক সংখ্যা, যার একক i.
৫# মহাকর্ষের আকর্ষণ
ক্রাশ আপনার প্রতি আকর্ষিত হচ্ছেনা দেখে দুঃখিত হবার কিছু নেই। বরং নিউটন সাহেবকে ধন্যবাদ দিন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক আবিষ্কার করার জন্য। কেননা নিউটন সাহেবের এই ধ্রুবক মেনেই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু একে অপরের সাথে আকর্ষণ রক্ষা করে চলেছে। তাই আপাতদৃষ্টিতে ক্রাশ আপনার দিকে ফিরে না তাকালেও বিজ্ঞানের হিসেবে আপনার প্রতি আকর্ষণ বোধ না করে ক্রাশের উপায়ই নেই!
৬# গতিমানব ‘আলো’
আপনার জীবনে দুঃখ এসে হাজির হবার গতিটা সবচেয়ে বেশি মনে হলেও আসলে মহাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি গতি রয়েছে আলোর। আলোর গতি এতটাই বেশি যে ধারণা করা হয়, এর সমপরিমাণ গতি অর্জন করতে পারলে সময়কে স্থির করে ফেলা যেত। এরজন্যই বোধহয় তাহসান বলে গেছেন, “আলো আলো আমি কখনো খুঁজে পাবোনা!”
৭# ইউলারের সংখ্যা
ইউলার সাহেব শুধু এক বিশ্বসুন্দরী সমীকরণ আবিষ্কার করেই থেমে থাকেননি। গণিতবিদেরা যাতে বড় বড় হিসাবনিকাশ বাদ দিয়ে সেই সুন্দরীর পেছনে মাথা ঘামাতে পারে সেজন্য আবিষ্কার করেছেন লগারিদম, যা দিয়ে বড় বড় হিসেবগুলোকে ছোট করে ফেলা যায়। লগারিদমের বেইস বা ভিত্তি হলো e, যার ওপর পাওয়ার বা ঘাত বসিয়ে হিসাবগুলো করা হয়।
৮# প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক
দুনিয়ায় শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই মারামারি হয়- এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। পরমাণুর ভেতরেও ‘হ্যাডম’ বা শক্তির অন্তর্নিহিত মারামারি চলতে থাকে। পরমাণুর এই অস্থির পরিবেশ ঠান্ডা করতেই ম্যাক্স প্ল্যাংক সাহেব আবিষ্কার করেন প্ল্যাংকের ধ্রুবক, যা কোয়ান্টাম সংখ্যার শক্তি ও কম্পাঙ্কের অনুপাত মেনে চলে।
৯# আর্কিমিডিসের পাই
পৃথিবীতে ‘আমেরিকান পাই’ ছাড়া আরো একরকমের বিখ্যাত পাই আছে, যার আবিষ্কারক ইউরেকাখ্যাত বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস। তাঁর আবিষ্কৃত পাই দিয়ে বৃত্তের ক্ষেত্রফল ও ব্যসার্ধের অনুপাত প্রকাশ করা হয়।
১০# বোল্টজম্যান ধ্রুবক
বাংলাদেশের মানুষের মাথার তাপমাত্রার সাথে শক্তির একটা যোগ আছে, যার শক্তি যত বেশি তার মাথার তাপমাত্রাও তত বেশি। চমৎকার এই যোগসূত্র দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বোল্টজম্যান সাহেব আবিষ্কার করেছেন এমন এক ধ্রুবক, যা দিয়ে তাপমাত্রাকে শক্তির এককে রূপান্তর করা যায়।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন