তৌহিদি জনতা ও মোদি জনতার খুঁড়োর কল

৪০ পঠিত ... ১৮ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে

18

৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট পতনের পর আশা করেছিলাম; আমাকে দুদণ্ড শান্তি দেবে নাটোরের বনলতা সেন। সাড়ে পনেরো বছরের ফ্যাসিজমের অন্ধকার বর্ষ ঘুরে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ছাত্রীরা এল; পৃথিবীর কফিশপগুলোতে ভিনদেশের মানুষেরা বলছিল, দেখেছ তোমাদের নতুন প্রজন্ম কী মিরাকল ঘটিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের বন্ধুরা বলছিল, তোমরা বীরের জাতি, এরকম জুলাই বিপ্লব কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব।

আগে ঘুমের মধ্যে হেলমেট আর হাতুড়ি হাতে রবার্ট মুগাবেকে দেখতাম; বেনজিরের দাঁতে লাল রক্ত দেখতাম, আজিজের কোমরে মাথার খুলির বেল্ট দেখতাম, মোজাম্মেল বাবুকে জয় বাংলা জয় হিন্দ বলতে শুনতাম। ৫ আগস্টের পর এমন নিঃশ্ছিদ্র ঘুম আসতে শুরু করল; কানের কাছে কেউ ঢোল বাজালেও প্যাসেজ টু হেভেন থেকে ফিরে আসতে চাইতাম না।

কিন্তু এত সুখ কী আর সইবে; দেখলাম সাড়ে পনেরো বছর পর মুক্তির আনন্দে দিশেহারা তৌহিদি জনতা। আর ছায়া উপনিবেশ হারিয়ে পাগলপারা মোদি প্রগতিশীল জনতা। তখন আবার হেলমেটকে সরিয়ে টুপি এল দুঃস্বপ্ন হয়ে; মাজার ভাঙার হাতুড়ির শব্দ শুনতে লাগলাম। আর খসখসে কণ্ঠে বীণা সিক্রি আকারে ইঙ্গিতে বলতে থাকলেন, বাংলাদেশের দখল ফিরে পেতে চাই।

হাসিনার রক্ততৃষ্ণা মেটাতে পুলিশ বাহিনী খুনে বাহিনী হয়ে পড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা; সেই সুযোগ নিয়ে তৌহিদি জনতা স্থানে স্থানে নারী ফুটবল ম্যাচে বাধা দিতে শুরু করল। চিত্র নায়িকাদের ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শো রুম উদ্বোধন বন্ধে সক্রিয় হলো। তৌহিদি জনতা মনে করল; সাড়ে পনেরো বছর মোদি জনতার হুকুমে দেশ চলেছে, তাই এখন তৌহিদি জনতার হুকুমে দেশ চলবে। তাই কী হয় নাকি; মুসলিম বিশ্বে কোথাও তৌহিদি জনতার হুকুম খাটে না; সেখানে বাংলাদেশ কী পৃথিবী গ্রহের বাইরে নাকি!

তৌহিদি জনতা মনে করতে লাগল, ভারতে মোদি জনতার হুকুমে দেশ চললে; বাংলাদেশে কেন তা হবে হবে না! বাংলাদেশে তা হবে না; কারণ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই পূর্ব বঙ্গই একমাত্র জায়গা যেখানে বৃটিশের বিরুদ্ধে কৃষক প্রজা আন্দোলনের মতো বহুত্ববাদী সংগ্রাম হয়েছিল; হিন্দু জনগোষ্ঠী মুসলিম লীগকে ভোট দিয়ে একে ভারতের অন্তর্ভূক্তি থেকে রক্ষা করেছিলেন। এইখানে সুলতানি, মুঘল, নবাবী আমলে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির জীবন যাপন করত। এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হবার পরেও এদেশের মানুষ বুঝেছে, ধর্মীয় বিভাজন নয়, মূল সংকট অর্থনৈতিক বৈষম্যে। তাই তো রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাঝ দিয়ে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে তারা। স্বাধীন ভূখণ্ড গড়ে তুলেছে। গত সাড়ে পনেরো বছরে ভারত এখানে ছড়ি ঘোরাতে শুরু করলে; ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার হয়েছে চব্বিশের ৩৬ জুলাই-এ।

বাংলাদেশের মানুষের কাছে সার্বভৌমত্বের গুরুত্ব এমনকি খাদ্যের চেয়ে বেশি। তাই এদেশের প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। হেলমেট এসে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করায় তাকে যেভাবে উৎখাত করা হলো; তা দেখে টুপির বোঝা উচিত ছিল; বাংলাদেশে মাতবরির পরিণতি খুবই করুণ।

সাড়ে পনেরো বছরে কওমি জনতা তাদের কওমি জননীর কাছ থেকে খাস জমি, উপঢৌকন পেলেও; মোদির ইসলামোফোবিক নীতির কারণে তৌহিদি জনতার ওপর পীড়ন চালিয়েছে হাসিনার পুলিশ ও প্রশাসন। সাধারণ মানুষ তখন তৌহিদি জনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এই যে জন সহানুভূতি, তৌহিদি জনতা তা গত ছয় মাসে হারিয়ে ফেলল। সুতরাং আসন্ন নির্বাচনে কেন তারা জনসমর্থন পাবে না; এটা খুবই স্পষ্ট।

তৌহিদি জনতার পেট ভরা সেন্টিমেন্ট; কথায় কথায় তার অনুভূতিতে আঘাত লেগে যায়। সে চড়ুই পাখির মতো পা দুখানা ওপরে তুলে ইসলামের আকাশ ভেঙে যাওয়া ঠেকায়। মুহম্মদ (সাঃ) এর মতো মানুষ; যার সুকৃতি গোটা বিশ্বের মানুষ উদযাপন করে; তার ভাবমূর্তির স্বপ্রণোদিত ম্যানেজার হয়েছে এই তৌহিদি জনতা। মোদি জনতা যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপ্রণোদিত ম্যানেজার অথবা চড়ুই।

তৌহিদি জনতা ও মোদি জনতা; জিনিস কিন্তু একই; দুজনেই উস্কানির দম দেওয়া পুতুল। জোনাকি ও শিয়াল অনলাইনে তাদের উস্কানি দিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। এরা দিনমান কাইজ্জা করে। আর মোদি প্রগতিশীল জনতা হচ্ছে ফার্স্ট জেনারেশনের ভদ্দরলোক হওয়া ভং; যাকে আওয়ামীলীগের কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিতে ভর্তি করা হয়েছে। এদের ব্যক্তিত্বে ও যোগ্যতায় যেহেতু নিজস্ব স্মার্টনেস নাই; তাই তাদেরকে স্মার্ট হতে ইসলাম নিয়ে হাসাহাসি করতে হয়; তাতে খুশি হয় মোদি জনতা; তার তো আবার ডিএনএ-তে মুসলিম বিদ্বেষ সেই বৃটিশ আমল থেকে। কল্পনায় এরা চলচ্চিত্রের অভিজাত ছবি বিশ্বাস কিংবা পাহাড়ি সান্যাল সেজে  থাকলেও; আসলে এরা আদিত্য যোগী ও পতঞ্জলি জয়দেব।

নতুন বাংলাদেশের সামনে অনেক কাজ। আইনের শাসন, জনমুখী প্রশাসন, উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এরকম অসংখ্য জরুরি কাজ পড়ে রয়েছে। প্রতিদিন এই তৌহিদি জনতা বনাম মোদি জনতা তথা আফসোস লীগের ভূতের নাচন; কথিত সাব কালচারাল ওয়ারের পেছনে সময় নষ্ট করার অবসর কারো নেই। সাবহিউম্যানদের নিজেকে নানাকিছু প্রমাণের কসরতে আসলে নিকৃষ্ট আত্মপরিচয় উন্মোচিত হয়।

এই তো গতকাল এত সব সাবহিউম্যান কাইজ্জার ভীড়ে একটি সংবাদ ছিল; যা আতিথেয়তাপ্রবণ ও আন্তরিক বাংলাদেশের পরিচয় তুলে ধরে। পাবনায় একটি রেলগাড়ি বিকল হলে; গ্রামবাসী ট্রেনের যাত্রীদের জন্য খাবার নিয়ে আসে; পরম মমতায় সেবাযত্ন করে আটকে পড়া যাত্রীদের। অল্পকিছু কুৎসিতের ভীড়ে যে এত সুন্দর সরল বাংলাদেশ বেঁচে আছে; তা আমরা যেন ভুলে না যাই।

৪০ পঠিত ... ১৮ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top