পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি উপদেশ পায় মূলত দুই ধরনের মানুষ। গরিব ও নারী। এই দুই ধরনের মানুষকে দেখলেই দেখবেন, একটু উপদেশ দিতে ইচ্ছা করে। বড়লোকদের উপদেশ দেওয়ার জন্য অবশ্য ভাড়া করা লোক থাকে। সে উপদেশও আবার দিতে হয় বড়লোকের মর্জি হিসেব করে। তবে গরিবের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। যে যেখানে যেভাবে পায় সেখানে সেভাবেই অন্তত একটা উপদেশ দেয়। এমনকি কোনো গরিবও যদি গরিবের দেখা পায়, তারাও পরস্পরকে উপদেশ দেয়।
সম্প্রতি এমন গরিবকে উপদেশ দিন কার্যক্রমের আওতায় সারজিস আলম চা বাগানের শ্রমিকদের উপদেশ দেওয়া এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, কলিজাটা বড় করে চা-বাগানের মদের পাট্টাগুলো ভেঙে ফেলুন।
চা বাগানের শ্রমিকদের নানান সমস্যা। মজুরি বাড়ে না, অভাবে চা পাতা ভর্তা করে খায়। দেশের নানান সচেতন নাগরিক তাদের বেতন-ভাতা নিয়ে কথাও বলে। তবু সমাধান হয় না। এমনকি দেশের সরকারও যেন তাদের সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারেন না। এমন কঠিন সময়ে সারজিস তো তাও তাদের একটু উপদেশ দিয়েছেন। সারজিস হয়তো ভেবেছেন, মদের মাচা ভেঙে ফেলার মধ্যেই সকল সমস্যার সমাধান নিহিত।
তবে চা বাগানের মদের মাচা ভেঙে ফেলার পরামর্শ দিলেও সারজিস আলম কি পারবেন, ঢাকা শহরের মদের মাচাগুলো ভেঙে ফেলার পরামর্শ দিতে? অনেকে বলবেন পারবে না। আমি বলব, পারবে, কিন্তু বলবে না। কারণ এই লেখার হেডলাইনেই বলেছি, বড়লোকের জন্য ভালোবাসা গরিবের জন্য উপদেশ। ঢাকায় যারা মদ খায় তারাও আর গরিব না যে তাদেরকে উপদেশ দেওয়া হবে। তাছাড়া, বড়লোককে উপদেশ দিয়ে বিপদে পড়ার একটা সম্ভাবনাও আছে। বরং তাদের জন্য থাকুক ভালোবাসা। সঠিক সময়ে মদটা পৌঁছে যাক বারে। রাখা হোক নিরাপত্তা। মদের মাচা বন্ধ করতে বলে বড়লোকের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করার কোনো মানে হয় না!
অনেকে বলবেন, এটা তো বৈষম্য। কাউকে মদের মাচা ভেঙে ফেলতে বলবেন, আর কাউকে কিছুই বলবেন না! আমি বলব, বৈষম্য না। যদি চা বাগানের শ্রমিকরা এই বৈষম্যের শিকার হতে না চায় তাদের উচিত চা বাগানে বসে মদ না খেয়ে ঢাকার বারে এসে মদ খাওয়া। তাহলে তাদেরকে আর কেউ উপদেশ দেবে না। বরং ভালোবাসা দেবে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন